ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অবরোধের মধ্যেই জনসমুদ্রে রূপ নিল বাণিজ্যমেলা

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১৭ জানুয়ারি ২০১৫

অবরোধের মধ্যেই জনসমুদ্রে রূপ নিল বাণিজ্যমেলা

রহিম শেখ ॥ বিএনপির ডাকা টানা অবরোধও হার মেনেছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের স্রোতের কাছে। শুক্রবার ছুটির দিন বলে সকাল থেকেই মেলায় ভিড় বাড়তে থাকে। বিকেলে জনস্রোত যেন জনসমুদ্রে পরিণত হয়। অবরোধের মধ্যেই সারি বেঁধে টিকিট কেটে মেলায় ঢুকতে দেখা গেছে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষকে। ক্রেতা-দর্শনার্থীদের বাড়তি চাপে দিনভর বাণিজ্যমেলার আশপাশের সড়কগুলোতে ছিল যানজট। এদিকে ক্রেতা সমাগম বাড়ায় অবরোধ ও ছুটির দিনে ভালো বিক্রি করেছেন বিক্রেতারা। প্রতিটি প্যাভিলিয়ন ও স্টলে ছিল ক্রেতায় ঠাঁসা। রাতে ব্যাগ ভর্তি করে পণ্য কিনে মেলা থেকে বেরিয়ে যেতে দেখা গেছে ক্রেতাদের। সামনের দিনগুলোতে অবরোধ ও হরতাল যাতে না থাকে এমন দাবি মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থী ও বিক্রেতাদের। শুক্রবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে ঢাকা আন্তর্জাতিক মেলায় গিয়ে দেখা যায়, অবরোধ ও ছুটির দিনের সকালে মেলা প্রাঙ্গণের দ্বার খুলতেই ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভীড় বাড়তে থাকে। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতেই জনস্রোত যেন জনসমুদ্রে পরিণত হয়। মূলসড়ক থেকে মেলার প্রবেশ পথ পর্যন্ত ছিল মানুষ আর মানুষ। মেলা প্রাঙ্গণের মূল ফটকেও দেখা যায় প্রচ- ভীড়। পরিবার পরিজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে অনেকেই মেলায় এসেছেন কেনা-কাটার জন্য। মেলা প্রাঙ্গণের আশপাশের প্রধান সড়কগুলোতেও ছিল যানবাহনের ঝটলা। প্রবেশ পথে মানুষের ঢল সামলাতে গলদগর্ম হয়েছেন নিরপত্তা বাহিনী ও গেট ইজারা সংশ্লিস্টরা। মেলার ইজারাদার প্রতিষ্ঠান মীর ব্রাদার্সের স্বত্বাধীকারী মীর শহিদুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, সারাদিন যেমনি ছিল, বিকেলের দিকে মেলায় দর্শকদের চাপ বাড়ে বহুগুণে। বাণিজ্য মেলায় আসা সরকারী কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, শুক্রবার ছুটির দিন বলে অবরোধের মধ্যেই স্বপরিবারে মেলায় এসেছি। কেনাকাটার পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘুরে বেড়ানোও উদ্দেশ্য ছিল, তাই চলে এলাম। মিরপুর থেকে আসা মেলার ক্রেতা নুসরাত জাহান জনকণ্ঠকে বলেন, ভেবেছিলাম অবরোধে মেলায় তেমন ভিড় হবে না। কিন্তু অবরোধের মধ্যে মানুষের ভিড় দেখে রীতিমতো অবাকই হলাম। স্টলগুলোতে ভিড়ের ঠেলায় কেনাই দায়। ইরানের প্যাভেলিয়নে শরিফা আক্তার স্বামীকে নিয়ে মেলায় এসেছেন গৃহস্থালী পণ্য কিনতে। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, অবরোধ থাকায় আতঙ্কে আসতে মেলায় আসতে পারিনি। আজ স্বামীর ছুটির সুবাদে তাঁকে নিয়ে এসেছি। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেলা শুরুর পরের দিনেই শুক্রবার থাকাই তখনই মোটামুটি জমে উঠেছিল মেলা। তবে মাঝখানে ৫ জানুয়ারিকে ঘিরে তৈরি হওয়া অস্থিরতায় ছন্দপতন ঘটে। পরে তেমন বিক্রি না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করতেও দেখা যায় ব্যবসায়ীদের। তবে মেলার মাঝামাঝি সময়ে এসে অনেকটা জমে উঠেছে বাণিজ্যমেলা। কিয়াম প্যাভিলিয়নের বিক্রেতা ফরহাদ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, শুক্রবার ছুটির দিনে ক্রেতা সমাগম বাড়ায় বেচাকেনা অনেক বেড়েছে। দেশীয় ইলেক্ট্রনিক্স, অটোমোবাইলস ও হোম এ্যাপ্লায়েন্স পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ালটনের প্যাভিয়িলন নজর কাড়ছে দর্শনার্থীদের। ভিতরে প্রবেশ করে দেখা যায়, সব বয়সী মানুষের ভিড় ছিল ঠাঁসা। প্রিমো জেড নামের একটি এ্যান্ড্রয়েড মোবাইল সেট কিনতে তারুণ্যের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। বিক্রেতারা জানালেন, এ সেটের মূল্য ২৪ হাজার ৪৯০ টাকা। ওয়ালটন প্যাভিলিয়নে গৃহিণীদের নজর ছিল হোম এ্যাপ্লায়েন্স পণ্যের দিকে। প্যাভিলিয়নের ম্যানেজার আকরামুজ্জামান অপু জানান, প্রতিদিনই দেশীয় এ প্যাভিলিয়নে প্রচুর ক্রেতা-দর্শনার্থীও আগমন হচ্ছে। আশানুরূপ বেচাবিক্রিও হচ্ছে। মেলা উপলক্ষে সব মোবাইল সেটে দুই শতাংশ ছাড় এবং শুধুমাত্র প্রিমো আরএইচ সেটে পাঁচ শতাংশ ছাড় দেয়া হচ্ছে। শুধু মোবাইল সেটই নয়, সকল পণ্যেই বিশেষ ছাড় দেয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান। র‌্যাংগসের ন্যাশনাল সেলস ম্যানেজার সারওয়ার জাহান চৌধুরী বলেন, আমাদের ব্র্যান্ড ইমেজের কারণে প্রচুর মানুষ আসছে নতুন নতুন পণ্য দেখতে। সব নতুন পণ্যের এক সঙ্গে প্রচারের জন্য এ মেলার কোন বিকল্প হয় না। তবে রাজনীতিতে যে অস্থিরতা চলছে তা দ্রুত সমাধানের দাবি জানান তিনি। রানার গ্রুপের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ আলেক খন্দকার বলেন, কয়েক দিনের খরা কেটে মানুষের প্রচুর উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে মেলায়। মেলা উপলক্ষে রানার মোটরসাইকেলে পাঁচ হাজার টাকা ছাড় দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। এদিকে বিদেশী প্যাভিলিয়নের নামে দেশীয় নিম্নমানের পণ্যও বিক্রি হচ্ছে মেলায়। ক্রেতারাও না বুঝে প্রতারিত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। থাই গ্যালারিতে দেখা গেছে চকবাজারের পণ্য। জানতে চাইলে ওই প্যাভিলিয়নের একটি স্টলের বিক্রয় কর্মকর্তা জানান, থাইল্যান্ডের নামে বরাদ্দ হলেও আমরা ৩০ দিনের জন্য স্টলের পজেশন কিনে নিয়েছি।
×