ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হে বন্ধু বিদায় ॥ লক্ষ লক্ষ রক্তজবা ফুটেছিল সেই মালঞ্চে। তোমার সুরে ওদের প্

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ১৮ জানুয়ারি ২০১৫

হে বন্ধু বিদায় ॥ লক্ষ লক্ষ রক্তজবা ফুটেছিল সেই মালঞ্চে। তোমার  সুরে ওদের প্

প্রিয় ভুবনে পুষ্পরথ পুড়ছে এখন সন্ত্রাসের আগুনে, জঙ্গী অনলে। চারদিকে আহাজারি, আর্তনাদ, বিয়োগ ব্যথার হাহাকার। এমন দিনে মায়া ভরা সুন্দর ভুবন ছেড়ে চলে গেলেন সোনার মানুষ গোবিন্দ হালদার। তুঁহুঁ মম শ্যাম সমান বলে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করলেন নিয়তির সঙ্গে যুদ্ধ করে। ড্রাগনের অগ্নিপ্রশ্বাসে দগ্ধ ফুলকে বাঁচাবার যুদ্ধটা ছেড়ে গেলেন আমাদের ওপর। বাঙালীর প্রিয় মানুষ, গানের, মানুষ প্রাণের মানুষকে আমরা কী বলে আশ্বাস দেব দগ্ধশ্বাসনালিতে বজ্রকণ্ঠের আওয়াজ তুলে! কেমন করে বলব হে বন্ধু তুমি যাও চির শান্তির দেশে। আমরা তোমার রচিত চরণ গেয়ে জনকের চরণ ছুঁয়ে তোমার স্বপ্নের মালঞ্চে হব অতন্দ্র মালাকর, বিনিদ্র প্রহরী। বঞ্চনা সঙ্কট দারিদ্র্যের সঙ্গে একা আপোসহীন লড়েছ তুমি। করুণা চাওনি। বলনি হে বাংলাদেশ, আমি তোমাদের কণ্ঠে গান তুলে দিয়েছিলাম যখন তোমাদের গানের খাতা শূন্য ছিল। বলনি “তোমরা প্রতিদান দাও। বলনি তোমাদের শিল্পকলা একাডেমি থেকে আজীবন ভাতা দাও। বলনি বাংলাদেশে নিয়ে আমার জন্যে শীতল ঘরে সুখ শয্যা দাও। বলনি আমাকে চোখ দাও। আমাকে কিডনি দাও। আমার দুঃখ শুধু তুমি চলে গেলে তাই না। দুঃখ এটাও যে আজ আমাদের প্রজন্মের প্রজ্বলিত মশালটা হতাশায় নিভু নিভু। উচ্চাশার আকাশছোঁয়া বেলুনটাকে তারা ফসলের মাটিতে নামিয়ে আনতে পারেনি। ফুসে ওঠা সংগ্রামের উদ্বেলিত উত্তঙ্গ মিছিলটাকে ঐক্যের বাঁধনে ধরে রাখতে পারেনি। ছোট ছোট বাসনার কাছে হেরে গেছে। হয়ত তোমার প্রেরণার গান তাদের মনের আকাশটাকে ছুঁতে পারেনি বলে। আমাদের যখন যৌবন ছিল আমরা তখন একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করেছি। হানাদার হায়েনার থাবা গুঁড়িয়ে দিয়েছি। বাঙ্কারে বাঙ্কারে শত্রু সংহার করেছি সেই সুর সেই গানের অনুরণন কানে নিয়ে। গোবিন্দ হালদার তুমি অগ্নি বীণায় রুদ্র রণের ঝঙ্কার তুলে আমাদের প্রাণিত রেখেছো। জাতির জনক উদ্বুদ্ধ করেছিলেন মুক্তির রণে। কণ্ঠে দিয়েছিলেন শিকল ভাঙার গান। প্রাণে অমিত বিক্রম। আমরা নানা মত, ভ্রান্ত পথ ছেড়ে ঐক্যের মন্ত্রে উদ্দীপ্ত হয়ে জাতির স্বপ্নকে পুষ্পিত করেছিলাম। আমাদের স্বপ্ন আকাশ ছুঁয়েছিল। কৃষ্ণপক্ষ থেকে এনে শুক্লপক্ষের অর্ঘ্যথালে রেখেছিলাম রজনীগন্ধার বৃন্তখানি। গুচ্ছ গুচ্ছ রক্তগোলাপ ফুটেছিল। লক্ষ লক্ষ রক্তজবা ফুটেছিল সেই মালঞ্চে। তোমার সুরে ওদের প্রাণিত কর হে বন্ধু হে রণবীর! চলে গেলেন বাঙালীর স্বপ্ন মালঞ্চের আরেক মালাকর। প্রজন্মকে কে দেবে সাহস, কে দেবে অভয় অমন করে! কে উজ্জীবিত করবে অনিঃশেষ মুক্তিরণে। মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয় না। অসমাপ্ত রয় সব বিপ্লব। অসমাপ্ত রয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের সংগ্রাম। অসত্যের বিরুদ্ধে, জালিয়াতির বিরুদ্ধে, প্রতারণার বিরুদ্ধে সত্যের ন্যায়ের যুদ্ধ রয় অফুরান। প্রাণ প্রদীপ নিভে যায়! পবিত্র আত্মা হয় অমর। মাস্টারদা মরেননি। ক্ষুদিরাম মরেননি। প্রীতিলতা মরেননি। বরকত সালাম জব্বার শফিক আওয়াল মরেননি। বঙ্গবন্ধু অমর হয়েছেন। অমর হয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের চার কা-ারী। একাত্তরের শহীদরা অমর রয়েছেন। বাঙালীর হৃদয় আকাশে তুমিও জ্বলন্ত রবে শুকতারা হয়ে। স্বাতী হয়ে রবে অনির্বাণ সেই একই আকাশে বাঙালীর জাতীয় বীর হয়ে। অসমাপ্ত মুক্তি সংগ্রামের পথিকৃৎ হয়ে। হে রণবীর ৩৩ কোটি বাঙালীর লও সালাম। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের প্রণাম। সহযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধাদের লাল সালাম চরণে তোমার। তোমার নাম ঝঙ্কৃত হবেÑ ‘পদ্মা মেঘনার কলতানে, বাউলের একতারাতে আনন্দ ঝঙ্কারে’। তুমিও চিরদিন দিশারি রবে। আমরা তোমাকেও ভুলবো না। হে বন্ধু বিদায়!
×