ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পাকিস্তান ও আফগানিস্তান ॥ ইসলামিক স্টেটের টার্গেট

প্রকাশিত: ০৪:০৫, ১৮ জানুয়ারি ২০১৫

পাকিস্তান ও আফগানিস্তান ॥ ইসলামিক স্টেটের টার্গেট

আফগানিস্তান ও পাকিস্তান ইসলামিক স্টেটের (আইএস) কাছ থেকে এক নতুন ও ক্রমবর্ধমান হুমকির সম্মুখীন। এ দুটি দেশ আলকায়েদা ও তালেবান জঙ্গীদের ঘাঁটি এবং যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘতম লড়াইয়ের কেন্দ্রস্থল। কর্মকর্তারা এ কথা জানান। খবর ইয়াহু নিউজের। তালেবান ও অন্যান্য সংগঠনের উৎসাহহীন চরমপন্থীরা দুটি দেশের উগ্রপন্থী প্রভাবিত এলাকাগুলোতে আইএসের কালো পতাকা তুলতে শুরু করেছে। তারা আইএসের ভূখ- অধিকারের ঘটনা ও চটকদার অনলাইন প্রচারণায় আকৃষ্ট হয়। পাকিস্তানে জঙ্গীরা এক ব্যক্তির শিরñেদ এবং আইএসের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করছে বলে এক অনলাইন ভিডিওতে দেখানো হয়। আফগানিস্তানে জঙ্গীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলার এবং তালেবান যোদ্ধা ও আইএস জঙ্গীদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটার খবর পর্যন্ত পাওয়া গেছে। বিশ্লেষক ও কর্মকর্তা বলেন, আফগান-পাকিস্তান সীমান্তে আইএস সমর্থকদের সংখ্যা ক্ষুদ্রই রয়ে গেছে এবং দলটি উপজাতীয় জঙ্গীদের কাছ থেকে প্রতিরোধের সম্মুখীন হচ্ছে। কিন্তু, এক ক্ষুদ্র আইএস শাখার উত্থান ও ঐ অঞ্চলে অস্থিরতার সৃষ্টি করতে পারে এবং ১৩ বছরের আফগান যুদ্ধের অবসান ঘটাতে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর চেষ্টাকে জটিল করে তুলতে পারে। তালেবান ঐ অঞ্চলের প্রধান বিদ্রোহী দল। আফগান যুদ্ধবাজদের ও আন্তর্জাতিক বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রায় ২০ বছর যুদ্ধ করার অভিজ্ঞতা দলটির রয়েছে। কিন্তু তালেবান বিশেষ কোন চিন্তাকর্ষক মতবাদ বা সামরিক বাহিনী নয় এবং তালেবান ক্রমশ সেকেলে হয়ে পড়ছে বলে মনে হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এক পশ্চিমা কূটনীতিক এ মন্তব্য করেন। কূটনীতিক বলেন, সম্ভবত তরুণ আফগানরা আইএসের আরও উগ্রপন্থী কৌশল এবং খুবই উত্তেজনাকর প্রচারণাকে বেশি পছন্দ করছে। তারা একে আকর্ষণীয় বলে দেখতে পারে অথবা তালেবান প্রতিযোগিতা করার প্রয়োজন বোধ করতে পারে এবং সেজন্য আরও চরমপন্থী হয়ে ওঠে আইএসের মতো নৃশংস কাজকর্ম শুরু করতে পারে। আইএস সিরিয়া ও ইরাকের এক তৃতীয়াংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। সেখানে দলটি কঠোর ইসলামী শরিয়া আইন শাসিত এক খিলাফত ঘোষণা করে বিশ্বের মুসলিমদের আনুগত্য দাবি করেছে। অপরদিকে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের দিকেই তালেবানের দৃষ্টি নিবদ্ধ এবং এর কোন কোন নেতা অতীতে শান্তি উদ্যোগের প্রতিও সাড়া দেন। লিবিয়া, মিসর, লেবানন ও অন্যত্র ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জঙ্গী দল আইএসের নেতা ও স্বঘোষিত খলিফা আবু বকর আল বাগদাদীর প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করে। আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় হেলমান্দ প্রদেশের বাসিন্দারা জানায়, মোল্লা আবদুল রউফ নামের এক সাবেক তালেবান কমান্ডার আইএস দলের পক্ষে যোদ্ধা সংগ্রহ করতে শুরু করেছেন। সানগিন এলাকার এক উপজাতীয় নেতা সাইফুল্লাহ সানগিনওয়াল বলেন, লোকজন জানায় তিনি কালো পতাকা তুলেছেন এবং এমনকি কোন কোন এলাকায় সাদা তালেবান পতাকা নামিয়ে ফেলার চেষ্টা করেছেন। তিনি আরও জানান, তালেবান ও আইএসের মধ্যকার লড়াইয়ে ১৯-২০ ব্যক্তি নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার আলী খান নবেম্বরে বলেন যে, তার দেশে আইএসের কোন উপস্থিতি নেই, জঙ্গীরা এর নাম ব্যবহার করছে মাত্র। কিন্তু এক মাস আগে লেখা এক সরকারী চিঠিতে স্থানীয় কর্মকর্তাদের সতর্ক করে দেয়া হয় যে, আইএস স্থানীয় জঙ্গীদের নিজ দলে টানতে শুরু করেছে এবং পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে চরমপন্থীদের ১২ হাজার অনুসারী রয়েছে বলে দলটি দাবি করছে। ডিসেম্বরে প্রচারিত এক ভিডিওতে ইসলামাবাদের লাল মসজিদের ছাত্রী ও শিক্ষকদের আইএসের এক পতাকা তলে বসে আল বাগদাদীর প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করার এবং ইমাম মৌলানা আব্দুল আজিজকে মসজিদে আইএসকে স্বাগত জানানো হবে বলে উক্তি করার দৃশ্য দেখানো হয়। গত সপ্তাহে আইএস প্রচারিত এক অনলাইন ভিডিওতে এক সাবেক পাকিস্তানী তালেবান মুখপাত্রকে আরও অন্য এক ডজনেরও বেশি সাবেক তালেবান নিয়ে আইএসের প্রতি সমর্থন করতে দেখা যায়। এরপর তারা এক সৈন্য বলে তাদের চিহ্নিত এক ব্যক্তির শিরñেদ করে। পাক ইনস্টিটিউট ফর পিস স্টাডিজের প্রকাশিত এক রিপোর্টে আইএস দলকে ‘পাকিস্তানের প্রতি এক সত্যিকারের ও ক্রমবর্ধমান হুমকি’ বলে অভিহিত করা হয়। ইসলামাবাদভিত্তিক ঐ সংস্থাটি জঙ্গী দলগুলোর তৎপরতা নিয়ে গবেষণা করে থাকে।
×