ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যারা বোমা মারছে তাদের হাত পোড়ালে বুঝবে কী যন্ত্রণা

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ১৮ জানুয়ারি ২০১৫

যারা বোমা মারছে তাদের হাত পোড়ালে বুঝবে কী যন্ত্রণা

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোয়েন্দাদের আরও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, যারা বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্র বানাতে চায় তাদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দাদের আরও সতর্ক হতে হবে। যারা বোমা মেরে, আগুন দিয়ে সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মারছে; তাদের হাত পুড়িয়ে দিলে বুঝতে পারবে পোড়ার কী যন্ত্রণা! আমি জানি, আমার এই কথার সমালোচনা করার জন্য কিছু আঁতেল বসে রয়েছেন। কিন্তু তাদের আমি বলব, একবার বার্ন ইউনিটে গিয়ে ঘুরে দেখুন সেখানে দগ্ধ মানুষ কী যন্ত্রণা সইছে। আসলে পাঁচ বছরে দেশ যতটুকু এগিয়েছে, আন্তর্জাতিকভাবে যতটা মর্যাদা অর্জন করেছে এসব অপতৎপরতা সে অর্জনকেই নষ্ট করে দেবে। শনিবার বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) অধিদফতরের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দেয়া বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াতের অবরোধের নামে নৃশংস কায়দায় মানুষ হত্যার কঠোর সমালোচনা করে বলেন, আমার দোষটা কোথায় খুঁজে পাই না। কেন আন্দোলনের নামে মানুষ পোড়ানো হচ্ছে, তাও বুঝি না। রাজনীতি জনগণের জন্য, জনগণকে পুড়িয়ে মারার জন্য নয়। অন্তঃসত্ত্বা নারী থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী; কেউই এখন তাদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। এভাবে একটি দেশ চলতে পারে না। বিএনপি-জামায়াত জোট আন্দোলন করতে চাইলে মাঠে নেমে জনগণকে সম্পৃক্ত করে আন্দোলন করুক। এনএসআই’র প্রধান কার্যালয়ের ২০ তলা ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এনএসআই তার হারানো গৌরব ও জনগণের আস্থা ফিরে পেয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যার পর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা বিভিন্ন সময়ে এই সংস্থাটিকে নিজেদের অবৈধ ক্ষমতা স্থায়ী করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। ফলে এই সংস্থার সুনাম ও মর্যাদা ক্ষুন্ন হয়। এনএসআই’র পেশাদারিত্ব দারুণ হুমকির মুখে পড়ে। প্রতিষ্ঠানটি জনগণের আস্থা হারায়। তিনি বলেন, ২১ বছরের স্বৈরশাসন শেষে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর আমরা এনএসআইকে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ একটি পেশাদার প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার উদ্যোগ নেই। এনএসআই ফিরে পায় তার হারানো গৌরব ও জনগণের আস্থা। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব) তারেক আহমেদ সিদ্দিকী ও এনএসআই মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শামসুল হক উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত এনএসআই সদস্য আবদুস সাত্তার স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। প্রধানমন্ত্রীও নিহত আবদুস সাত্তারের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাসীদের আগুনে দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অন্তঃসত্ত্বা নারীর কথা বলতে গিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, শুনেছি পেটের ভেতর শিশুটিও মারা গেছে। নারীর সারা শরীর দগ্ধ। চিকিৎসকরা বুঝতে পারছেন না কীভাবে আহত মায়ের ডেলিভারি করা হবে। কী ভয়াবহ কথা। কী কষ্ট! ভারি হয়ে আসা কণ্ঠে তিনি বলেন, তাদের কষ্ট দেখে আমার বুক ফেটে যায়, আমি সারাক্ষণ তাদের খোঁজখবর রাখি। চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য সব ধরনের নির্দেশনা দেই। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিএনপি-জামায়াত কোন্ ইসলামের সেবক আমার বোধগম্য নয়। ২০১৩ সালে এরা জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে আগুন দিয়ে পবিত্র কোরান পুড়িয়েছে। এ বছর বিশ্ব এজতেমা ও পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদ-উন-নবী চলাকালে হরতাল-অবরোধ ডেকেছে। কী কারণে বা কোন্ ইস্যুতে আন্দোলন চলছে তা আমার বোধগম্য নয়। এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, উন্নয়নের পথে দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ যখন রোল মডেল হয়ে উঠেছে তখন বিএনপি-জামায়াত এই অপতৎপরতা শুরু করেছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর দেশের উন্নয়ন হয়েছে, প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। তারপরও কেন আন্দোলন তার কোন কারণ আমি খুঁজে পাই না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালেও যখন দায়িত্ব নেয় তখনও এমন অপতৎপরতা দেখেছি। আওয়ামী লীগের মতো এত অল্প সময়ে এত ভাল কাজ আর কেউ করেনি। গত ৬ বছরে দেশ যদি কোথাও একটু পিছিয়ে যেত তাহলেও তাদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা থাকত। তাদের আসলে ইস্যুটা কী তা আমি নিজেই খুঁজে পাই না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ উন্নয়নের সকল সূচকে এগিয়ে আছে দেখেই মনে হয় বিএনপি নেত্রীর মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তার তো আবার ‘পেয়ারে পাকিস্তান’। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসম্যানদের স্বাক্ষর জাল করে বিএনপির বিবৃতি প্রকাশের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, এটা জাতির জন্য কতটা লজ্জার তা বিএনপি নেত্রী কি ভেবে দেখেছেন? তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত ভারতবিরোধী রাজনীতি করে। সেই ভারতের সরকারী দল বিজেপি প্রধানের মিথ্যা ফোনকলের রাজনীতি করেও তারা কি ফায়দা নিতে চেয়েছে তা বোধগম্য নয়। পরে সে ফোনের খবরও মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায়, বিজেপি নেতা নিজেই যখন বলেন ফোনে কোনও কথা হয়নি তখন তা জাতির জন্যই লজ্জার। অনুষ্ঠানে এনএসআইয়ের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন সময়ে দেশের প্রয়োজনে এনএসআই সবচেয়ে বেশি ও বৃহৎ পরিসরে তৎপরতা দেখিয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রেও এনএসআইসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কার্যকর ভূমিকা রয়েছে। সংস্থাটির সামর্থ্য বৃদ্ধি ও আধুনিকায়নে সরকার বিভিন্ন কর্মসূচী নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রয়োজনে এনএসআই সফলতার সঙ্গে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিতে পেরেছে। বিমানবন্দরে আজ যে স্বর্ণ ধরা পড়ছে তা এনএসআই গোয়েন্দাদের তৎপরতার ফলেই সম্ভব হচ্ছে। তাদের তৎপরতায় মাদকদ্রব্যও ধরা পড়ছে। চোরাচালান ও চোরাকারবার বন্ধে তথ্য সংগ্রহ করতে এনএসআই কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, এসবের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।
×