জবি সংবাদদাত ॥ হরতাল-অবরোধে নিরাপদে পথ চলতে নদীপথ বেছে নিচ্ছে সাধারণ মানুষ। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সড়কপথে চলাচল করতে নারাজ তারা। তাই দূর যাত্রার ক্ষেত্রে বাস-ট্রেন ছেড়ে আসছে সদরঘাটের লঞ্চ টার্মিনালে। এতে বিকেল তিনটার পর বাহাদুর শাহ পার্ক থেকে সদরঘাট পর্যন্ত প্রচ- যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
শনিবার পুরান ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হরতাল-অবরোধের মধ্যেও যাত্রী ভিড় লেগে আছে। অনেক যাত্রী তল্পিতল্পা নিয়ে ব্যস্ত লঞ্চে ওঠার জন্য। কেউ টিকেট কাটতে ব্যস্ত, আবার কেউ লঞ্চের ডেকে আসন নিতে ছুটাছুটি করছে। লঞ্চের কর্মীরা ব্যস্ত যাত্রী তুলতে।
হরতাল-অবরোধ উপেক্ষা করে প্রতিদিনের মতোই সকাল থেকে সদরঘাট লঞ্চ ঘাটে নিয়মিত লঞ্চগুলো ঘাটে এসে ভিড়ে। যাত্রী ভর্তি করে আবার নির্দিষ্ট সময়ে ছেড়ে যাচ্ছে গন্তব্যস্থলে। ঢাকার আশপাশের জেলার লঞ্চগুলো দুপুরের দিকে ছাড়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছে। দুপুর ২টার দিকে দেখা যায় সদরঘাট লঞ্চ ঘাটে ঢাকা হতে বরিশালগামী সুন্দরবন-৬, দ্বীপরাজ-২, অগ্রদূত প্লাস, এম ভি টিপু, সুরভি-৮, এম ভি বাগেরহাটসহ বেশ কয়েকটি লঞ্চে যাত্রী উঠছে। লঞ্চগুলো সন্ধ্যা ৭টা, রাত ৮টা ও রাত ৯টার দিকে ছেড়ে যাওয়ার কথা।
বরিশালগামী সুন্দরবন-৬ লঞ্চের জালাল হোসেন নামের (৬৫) এক যাত্রী ঢাকার নাখালপাড়ায় থাকতেন ছেলের সঙ্গে। ছেলে আজগর ট্রাক চালাতেন। এখন কোন কাজ না থাকায় গ্রামের বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।
চলমান পরিস্থিতিতে তাঁরা নিরাপত্তার জন্য লঞ্চে চড়ে বাড়িতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে তিনি জানান। ডায়াবেটিসের রোগী রাহেলা বেগম। প্রতিমাসেই তিনি ঢাকায় আসেন।
তিনি বলেন, চিকিৎসার জন্য অসুস্থ শরীর নিয়ে প্রতিমাসে ঢাকায় আসতে হয়। কিন্তু বাসে আগুন দেয়ার কারণে এখন চাঁদপুরের লঞ্চে যাচ্ছি বাড়িতে।
লঞ্চটির কেরানি তাজুল ইসলাম বলেন, লঞ্চে আমাদের স্বাভাবিক যাত্রী হচ্ছে। বাসের যাত্রীও লঞ্চে আসছে। লঞ্চে সাধারণত অতিরিক্ত যাত্রী হয়েই থাকে। কিন্তু এখন অতিরিক্ত যাত্রী চাপ কম।
এজন্য স্বাভাবিক যাত্রী নিয়েই লঞ্চ ছাড়া হয়। এতে মালিকের ক্ষতির আশঙ্কা নেই।
দ্বীপরাজ-২ লঞ্চের কেরানি মোঃ রতন মিয়া বলেন, আমাদের লঞ্চে যাত্রী ধারণক্ষমতা ৯২২ জন। এখন সেই সংখ্যক যাত্রীই লঞ্চে যাতায়াত করছে। তবে অতিরিক্ত যাত্রী না আসায় আমাদের মুনাফা কম হচ্ছে।
নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মোঃ জয়নাল আবেদীন জনকণ্ঠকে বলেন, হরতাল-অবরোধের মধ্যেও প্রতিদিন নিয়মিত পূর্বের অবস্থায় লঞ্চগুলো চলছে। এখন পর্যন্ত সময়সূচীর কোন পরিবর্তন করা হয়নি। ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলে বিভিন্ন জেলার ৪১টি রুটেই লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক আছে। সকাল সাতটা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত প্রতিদিন প্রায় ৬০ থেকে ৬৪ ট্রিপ দেয়া হয়। এতে ২০ থেকে ২৫ হাজারের মতো যাত্রী যাতায়াত করে। তবে হরতাল-অবরোধের কারণে যাত্রী পূর্বের তুলনায় কম আসছে। এখন এজতেমার যাত্রী গ্রামের বাড়িতে যাওয়া শুরু হলে আবার অতিরিক্ত ভিড় হবে। যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, যাত্রী নিরাপত্তার জন্য সদরঘাটে ২১ পয়েন্টে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। তাছাড়া পুলিশ, আনসার সদস্য যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য কাজ করছে।
এদিকে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। সদরঘাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বলেন, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে হরতাল-অবরোধের কোন প্রভাব পড়েনি। টার্মিনালের নিরাপত্তার জন্য নিয়মিতভাবে ফাঁড়ির মধ্যে ৫-৬ জন পুলিশ দায়িত্ব পালন করে থাকে। কিন্তু হরতাল-অবরোধে বাড়তি নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: