ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ব এজতেমা শেষ আখেরি মোনাজাতে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য শান্তি সমৃদ্ধি কামনা

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ১৯ জানুয়ারি ২০১৫

বিশ্ব এজতেমা শেষ আখেরি মোনাজাতে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য শান্তি সমৃদ্ধি  কামনা

ফিরোজ মান্না/মোস্তাফিজুর রহমান টিটু/নুরুল ইসলাম, টঙ্গী থেকে ॥ জীবনের গুনাহ খাতা মাফ করে দেন আল্লাহ- আখেরাতের পথ প্রশস্ত করে দেন আল্লাহ। পরকালের সুখ-শান্তি চেয়ে দুই হাত তুলে চোখের পানি ফেলে আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন লাখ লাখ মুসল্লি। এ সময় টঙ্গীর তুরাগ তীর আমিন আমিন ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠে। দুনিয়া ও আখেরাতে নাজাতের আশায় মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের আখেরি মোনাজাত। আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে ৫০তম বিশ্ব এজতেমার দ্বিতীয় পর্বেরও পরিসমাপ্তি ঘটল। রবিবার আখেরি মোনাজাতে লাখ লাখ মুসল্লি নিজের কৃতকর্মের জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। মোনাজাতে মুসলিম উম্মাহর শান্তি, সমৃদ্ধিও কামনা করা হয়। মোনাজাতে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, শান্তি, সমৃদ্ধি, অগ্রগতি, ইহলৌকিক ও পারলৌকিক মুক্তি এবং দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দেয়ার তৌফিক কামনা করা হয়। বেলা ১১টা ২২ মিনিট থেকে ১১টা ৫৪ মিনিট পর্যন্ত ৩২ মিনিট স্থায়ী মোনাজাত পরিচালনা করেন বিশ্ব তবলীগ জামাতের শীর্ষ মুরব্বি দিল্লীর হজরত মাওলানা সা’দ আহমেদ। তাৎপর্যপূর্ণ এই আখেরি মোনাজাতে জীবনের সব পাপ-তাপ থেকে মুক্তি, আত্মশুদ্ধি ও নিজ নিজ গুনাহ মাফের জন্য মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে রহমত প্রার্থনা করা হয়। মোনাজাত চলাকালে পুরো এজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকায় পিন পতন নীরবতা নেমে আসে। এ সময় এজতেমা ময়দান এলাকায় সমবেত বিশাল জনসমুদ্রে এক অভূতপর্ব ভাবাবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতে লাখ লাখ মুসল্লির সঙ্গে সংসদ সদস্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের কূটনীতিকরা শরিক হন। এছাড়া পদস্থ সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাসহ দলমত নির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার সর্বস্তরের ধর্মপ্রাণ মুসলমান আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন। বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা অবরোধ হরতালের কারণে এবারের এজতেমায় মুসল্লিদের উপস্থিতি অনেক কম হলেও আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে রবিবার এজতেমাস্থলের চারপাশের ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। আখেরি মোনাজাতের জন্য রবিবার আশপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কলকারখানাসহ বিভিন্ন অফিস-আদালতে ছিল ছুটি। কোন কোন প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা না করলেও কর্মকর্তাদের মোনাজাতে অংশ নিতে বাধা ছিল না। নানা বয়সী ও পেশার মানুষ এমনকি মহিলারাও ভিড় ঠেলে মোনাজাতে অংশ নিতে রবিবার সকালেই টঙ্গী এলাকায় পৌঁছেন। আখেরি মোনাজাতের পূর্বে তবলীগ জামাতের শীর্ষ মুরুব্বিরা হেদায়েতী ও সংক্ষিপ্ত বয়ানে বলেন, প্রত্যেক মুসলমানকে দিনের বেলায় মেহনত রাতের বেলায় ইবাদত-বন্দেগী করতে হবে। দুটির একটি করলে ফায়দা হবে না। মেহনত ও ইবাদতের মধ্য দিয়ে মুসলমানের মৃত্যু পর্যন্ত দ্বীনের রাস্তায় অনড় থাকতে হবে। আখেরি মোনাজাতের দিন রবিবার সূর্য উঠার শুরু থেকে উত্তরা বিমানবন্দর, আব্দুল্লাপুর, টঙ্গী কালীগঞ্জ আশুলিয়া-সাভার ও ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক পথে ধনী দরিদ্র যুবক বৃদ্ধ নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে। হেঁটে মুসল্লিরা ধাবিত হন এজতেমা ময়দানে। এদিকে এজতেমাস্থলে স্থান সংকুলান না হওয়ায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, টঙ্গী-কালীগঞ্জ সড়ক, আশুলিয়া-সাভার সড়ক এবং উত্তরা মডেল টাউনসহ আশপাশের এলাকা থেকে অগণিত মুসল্লি মোনাজাতে অংশ নেন। এছাড়া অসংখ্য মুুসল্লি স্থানাভাবে এজতেমাস্থলের খালি জায়গা, মিলকারখানার অভ্যন্তর ও ছাদে, ঘরবাড়ি, বেড়িবাঁধ, বিভিন্ন যানবাহনে উঠে এবং নৌকায় বসে মোনাজাতে শরিক হন। অনেকেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মোনাজাতে শরিক হন। এজতেমা ময়দানের বাইরে পর্যাপ্ত মাইক না থাকায় বহু ধর্মপ্রাণ মুসলমান সময়মতো আখেরি মোনাজাতে শামিল হতে গিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়েন। শনিবার রাতে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে ও টঙ্গী-আশুলিয়া সড়কে যানবাহন চলাচলে বিধি-নিষেধ থাকায় ওই সড়কে যাতায়াতকারী সাধারণ মানুষ ও মুসল্লিদের দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। গত ৯ জানুয়ারি শুরু হয় তবলীগের মিলনমেলা এবারের ৫০তম বিশ্ব এজতেমা। দুটি পর্বের মাধ্যমে ১৮ জানুয়ারি তা শেষ হয়। এদিকে, দ্বিতীয় পর্বের এজতেমায় বিশ্বের ১৫০টি দেশের ২৫ হাজারের বেশি মুসল্লি অংশ নেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তবলীগের কাজে বের হওয়ার জন্য এবার এজতেমা স্থলে দ্বিতীয় পর্বে প্রায় ৫ হাজার জামাত তৈরি হয়েছে বলে এজতেমার আয়োজক সূত্রে জানা গেছে। আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে এসব জামাত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়বে বলে জানিয়েছে তবলীগ সূত্র। দ্বিতীয় দফায় তিন দিনব্যাপী দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েতের শেষ দিন রবিবার ভোর থেকেই আখেরি মোনাজাতে শামিল হতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা রাজধানী ঢাকা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলো থেকে ট্রেন, বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, জীপ, কার, রিক্সা-ভ্যান ও নৌকাসহ নানা ধরনের যানবাহনে এবং হেঁটে এজতেমা ময়দানে পৌঁছেন। এছাড়া ভোর থেকেই এজতেমা ময়দানের দক্ষিণে খিলক্ষেত, বিশ্বরোড থেকে এবং উত্তরে গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস চৌরাস্তা, পূর্বে পূবাইল মীরের বাজার, পশ্চিমে আশুলিয়া পর্যন্ত রিক্সাসহ সকল ধরনের যান চলাচল বন্ধ রাখার ফলে সকাল থেকেই দীর্ঘপথ হেঁটে এজতেমা অভিমুখে ছুটতে থাকে মুসল্লিদের কাফেলা। এতে তুরাগের তীরকে কেন্দ্র করে কয়েক বর্গকিলোমিটার জুড়ে ধর্মপ্রাণ মানুষের বিশাল মানব বলয় সৃষ্টি হয়। মোনাজাত শুরুর আগেই সকাল ১০টার মধ্যে কানায় কানায়পূর্ণ হয়ে যায় তুরাগ তীরের পুরো এজতেমাস্থল ও চারপাশের বিস্তীর্ণ এলাকা। এতে এলাকা পরিণত হয় এক বিশাল জনসমুদ্রে। ট্রেনে কাটা পড়ে মুসল্লির মৃত্যু ॥ রবিবার সকালে কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় পারাবত ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে দুই মুসল্লি ঘটনাস্থলেই নিহত ও অপর ৩ জন আহত হয়েছে। হতাহতরা আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনে চড়ে টঙ্গী যাওয়ার পথে এ ঘটনা ঘটে। এছাড়া এবার বিশ্ব এজতেমা ময়দানে এসে প্রথম পর্বে ১১ জন এবং দ্বিতীয় পর্বে ৭ মুসল্লি হৃদরোগ ও বার্ধক্যজনিত রোগে মারা গেছেন।
×