ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দিনভর প্রাণবন্ত আড্ডা, উচ্ছ্বাস শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা

প্রকাশিত: ০৬:৪৯, ১৯ জানুয়ারি ২০১৫

দিনভর প্রাণবন্ত আড্ডা, উচ্ছ্বাস শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা

মামুন-অর-রশিদ/আলী রমজান, রাজশাহী থেকে ॥ লাগাতার অবরোধের সঙ্গে যোগ হয়েছে ২০ দলীয় জোটের আঞ্চলিক হরতাল। রাজশাহী বিভাগের ‘শিক্ষানগরী’ রাজশাহীসহ আট জেলায় রবিবার থেকে শুরু হয়েছে এ হরতাল নামের ‘যন্ত্রণা’। রাজপথে হরতালের কিছুটা রেশ থাকলেও এদিন মতিহারের ‘সবুজ চত্বর’ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশটি ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। প্রাণবন্ত উচ্ছ্বাস আর আনন্দে ভরপুর ছিল ক্যাম্পাস। কুয়াশাঘেরা সকালে দেরিতে সূর্যের আলোর তীর্যক কিরণ ছড়ালেও তার অনেক আগেই আলোকরেখা ফুটে ওঠে গ্র্যাজুয়েটদের চোখেমুখে। উল্লসিত গ্র্যাজুয়েটদের পদচারণা, হাসি-আড্ডা আর প্রাণবন্ত উচ্ছ্বাসের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে সবখানে। বাঁধভাঙ্গা এ উচ্ছ্বাসের পেছনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নবম সমাবর্তন। দিন শুরু হওয়ার পর পরই কালো গাউন আর মাথায় ক্যাপ পরে সমাবর্তনে যোগ দেন সব পিএইচডি, এমফিল ও স্নাতক ডিগ্রীধারী। সকাল থেকেই অপেক্ষা করছিলেন তারা। সুযোগ পেলেই পুরনো স্মৃতি খোঁজার চেষ্টা। দীর্ঘদিন পর ক্যাম্পাসের পরিচিত রূপ নতুন করে ধারণের বাসনা। অপেক্ষা এই বুঝি এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। এক সময় সব অপেক্ষার অবসান হয়। সমাবর্তনের প্রধান আকর্ষণ বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ও রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ উপস্থিত হন মতিহারের সবুজ চত্বরে। হরতাল-অবরোধ উপেক্ষা করে শনিবারের মধ্যেই বেশিরভাগ নিবন্ধিত গ্র্যাজুয়েট ক্যাম্পাসে এসে পৌঁছেন। সমাবর্তন উপলক্ষে ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী ট্রেনগুলোতে বাড়তি বগি সংযোজন করায় গ্র্যাজুয়েটদের ক্যাম্পাসে আসতে কোন সমস্যা হয়নি। তাই প্রাক্তন এই শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে সবুজ ক্যাম্পাস এক মিলনমেলায় পরিণত হয় রবিবার ভোর থেকেই। রবিবার দিনটি যেন ছিল শুধু ওদের। সমাবর্তনে নিবন্ধিত গ্র্যাজুয়েটরা বিভাগ থেকে সমাবর্তনের ব্যাগ, কস্টিউমসহ অন্যান্য কাগজপত্র সংগ্রহ করেছেন আগেই। পুরনো বন্ধুদের কাছে পেয়ে তারা অনেকটা স্মৃতিকাতর ও উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠেন। অনেকেই দীর্ঘদিন পর কাছের বন্ধুকে পেয়ে আড্ডায় মেতে ওঠেন। আবার অনেকে স্মৃতিবিজড়িত ক্যাম্পাসের নানাস্থান ঘুরে বেড়ান আপন মনে। রাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, সমাজবিজ্ঞানসহ কয়েকটি বিভাগ নিবন্ধনকৃত গ্র্যাজুয়েটদের বরণ করতে আগে থেকেই এবার বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করে। সমাবর্তন উপলক্ষে পুরো ক্যাম্পাস ছিল উৎসবমুখর। ২০০৬-২০১০ সাল পর্যন্ত পাস করা গ্র্যাজুয়েটদের এ সমাবর্তনে ডিগ্রী প্রদানের পর বাড়তি উচ্ছ্বাস যোগ হয় গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে। যেন এ দিনটির জন্য অপেক্ষায় থাকেন ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে যাওয়া গ্র্যাজুয়েটরা। গত কয়েকদিন ধরেই সাজ সাজ রব ছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনকে ঘিরে। লাগাতার অবরোধ আর হরতালে গ্র্যাজুয়েটরা কিছুটা শঙ্কিত থাকলেও শেষ পর্যন্ত কোন কিছুই থামাতে পারেনি তাদের। প্রিয় শিক্ষাঙ্গনের মায়াবী টানে ফিরে আসেন তারা। রবিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, দলে দলে গ্র্যাজুয়েটদের জটলা। প্রাণবন্ত আড্ডা আর প্রাণান্ত উচ্ছ্বাস। তাদের স্বাগত জানাতে ক্যাম্পাসজুড়ে ব্যানার, ফেস্টুন আর প্ল্যাকার্ড। প্রতিটি ভবনে আলোকসজ্জা এবং বিভিন্ন রঙের আলপনা সড়কে। সব মিলিয়ে ক্যাম্পাস সেজেছিল বর্ণিল সাজে। জীবনের সবচেয়ে বড় সম্মাননা গ্রহণের দিনটি ঘিরে উচ্ছ্বাসের তাই কোন অংশেই কমতি ছিল না কারও মনে। অবশেষে সব অপেক্ষার অবসান হয় রবিবার রাবির কেন্দ্রীয় স্টেডিয়ামে। প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের আনন্দের মাত্রা পৌঁছে উচ্ছ্বাসের চূড়ান্ত সীমায়। তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না স্টেডিয়ামে। নতুন-পুরনোদের একাত্মতা যেন মুহূর্তেই রূপ নেয় অন্যরকম মিলনমেলায়। সমাবর্তনের আনুষ্ঠানিকতার পর শিক্ষার্থীরা আরও একবার সারা ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়েন। ক্যাম্পাসময় ছবি তোলার প্রতিযোগিতা। আবেগী ক্ষণটি ধরে রাখার চেষ্টা। দিনভর ‘ক্লিক ক্লিক’ শব্দে আলোকিত পুরো ক্যাম্পাস। সকাল থেকে রাবি ক্যাম্পাস ছাড়াও শহরে ছড়িয়ে পড়ে সমাবর্তনের উচ্ছ্বাস। শিক্ষাজীবনের স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য যেন এত আয়োজন। নতুন সাজে রঙিন আর উচ্ছ্বাসের ছবি ঠাঁই পায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের পাতায়ও। সমাবর্তনে অংশগ্রহণের জন্য ২০০৬ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়টি অনুষদ ও পাঁচটি ইনস্টিটিউট থেকে পিএইচডি, এমফিল, ¯œাতকোত্তর এবং এমবিবিএস, বিডিএস ও ডিভিএম ডিগ্রী অর্জনকারী চার হাজার ৭৭১ গ্র্যাজুয়েট নিবন্ধন করেন। দুপুর ২টা ২৫ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘শাবাশ বাংলাদেশ’ মাঠ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ও রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের নেতৃত্বে সমাবর্তন শোভাযাত্রা শুরু হয়। দুপুর ২টা ৩০ মিনিট থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্টেডিয়ামে সমাবর্তনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এবারের সমাবর্তনে নিবন্ধিত গ্র্যাজুয়েট ছাড়াও আট শতাধিক শিক্ষক ও পাঁচ শতাধিক অতিথি উপস্থিত ছিলেন। ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নবম সমাবর্তন উৎসব অনুষ্ঠিত হয় রবিবার। এর আগে ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের অষ্টম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়।
×