ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জাপানের অনুদানে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ নতুন রেলপথ

প্রকাশিত: ০২:৫৪, ২০ জানুয়ারি ২০১৫

জাপানের অনুদানে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ নতুন রেলপথ

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত নতুন ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এতে অনুদান দিচ্ছে জাপান। এই সেকশনে বিদ্যমান মিটারগেজ রেললাইনের সমান্তরালে নতুন এ রেললাইন নির্মাণ করা হবে। এটি তৈরিতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৭৮ কোটি ৬৫ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। এর মধ্যে জাপান অনুদান হিসেবে দিচ্ছে ২৪৯ কোটি ৫৪ লাখ ৫১ হাজার টাকা, বাকি ১২৯ কোটি ১১ লাখ ৬ হাজার টাকা সরকারী তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য আরাস্তু খান জানান, এটি নির্মাণের ফলে নিরাপদ ও দ্রুতগতির যাত্রী এবং পণ্যবাহী ট্রেন পরিচালনা করা সম্ভব হবে। সেই সঙ্গে নতুন ট্রেন পরিচালনার মাধ্যমে অধিক যাত্রী ও পণ্য পরিবহন, রাজধানীর ঢাকা যানজট কমানো এবং ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেল পথের সেকশনার ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি পাবে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্র জানায়, নতুন রেলপথ তৈরির এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে অনুদানের বিষয়ে জাপান সরকারের সম্মতি পাওয়া গেছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ সংক্রান্ত প্রকল্পটি অনুমোদনের পরই চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে রাজধানী ঢাকাসহ পার্শ¦বর্তী নারায়ণগঞ্জ ও জয়দেবপুর অত্যন্ত জনবহুল এলাকা। ঢাকা শহরের নিত্যনৈমিত্তিক শ্বাসরুদ্ধকর যানজটে মানুষ অতিষ্ঠ। পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ, জয়দেবপুর ও সংশ্লিষ্ট শহরতলীগুলোতেও যানজটের তীব্রতা অসহনীয় হচ্ছে। এ অবস্থায় নাগরিক জীবনে স্বস্তি দিতে সরকার ঢাকা এবং পার্শ্ববর্তী শহরগুলোর মাঝে দ্রুত যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বেশকিছু উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। তার মধ্যে রেল পরিবহন খাতে ঢাকা-টঙ্গীর মধ্যবর্তী তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েলগেজ লাইন, টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্প অন্যতম। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সেকশনে বর্তমানে ৩২টি (১৬ জোড়া) ট্রেন চলাচল করছে। প্রস্তাবিত এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে আরও বেশি কমিউটার ট্রেন তুলনামূলক কম সময়ে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের মধ্যে অধিক সংখ্যক যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে পারবে। এ প্রেক্ষাপটে বিদ্যমান ঢাক-নারায়ণগঞ্জ মিটারগেজ রেললাইনের সমান্তরাল একটি নতুন ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, রেল পথ মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর ২০১৪ সালের ৪ জুন প্রকল্পটির ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ওই বছরের ৬ জুলাই ব্যয় প্রাক্কলন নির্ধারণ সংক্রান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই দুই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রকল্পটি ব্যয় ৩৭৮ কোটি ৬৫ লাখ ৫৭ হাজার টাকা এবং বাস্তবায়ন কাল ২০১৭ সালের জুন মাস পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে, ২১ দশমিক ৫৩ কিলোমিটার রেল পথ নির্মাণের জন্য চার হাজার ৯০০ টন ৬০ কোজি রেল সংগ্রহ, দুই লাখ ৩০ হাজার ঘনমিটার মাটির কাজ, তিন লাখ ১১ হাজার ৫০টি ডুয়েলগেজ পিসি সিøপার ও ৬৬৬ দশমিক ৫৯ ঘনমিটার কাঠের সিøপার সংগ্রহ, চার লাখ ৪৮ হাজার ৭০ ঘনমিটার ব্যালাস্ট সংগ্রহ, পাঁচটি স্টেশন ভবন নির্মাণ, চার স্টেশনের সিগন্যালিং ব্যবস্থার উন্নয়ন, ১৮টি বক্সকালভাট এবং দুটি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম করা হবে। সূত্র জানায়, চলতি ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ১ হাজার ২১০ দশমিক ৪২ কিলোমিটার নতুন রেললাইন অথবা পুরাতন বন্ধ রেললাইন চালুর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ৫০৬ দশমিক ২০ কিলোমিটার ট্র্যাককে ডাবল ট্র্যাকে রূপান্তরের কথা বলা হয়েছে। প্রস্তাবিত এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সেকশনে ১৬ দশমিক ১ কিলোমিটার মেইন লাইন এবং দশমিক ৭ কিলোমিটার লুপ লাইন নির্মাণ করা হবে। তাই প্রকল্পটি ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
×