ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অপপ্রচার রুখে দেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ার নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ২৩ জানুয়ারি ২০১৫

অপপ্রচার রুখে দেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ার নির্দেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অপপ্রচার চালিয়ে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা চলছে। তাই সব ধরনের অপপ্রচার রুখে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নীতি-নির্ধারক ও কর্মকর্তাদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে এসে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বক্তব্যে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি এ সময় ভারতের সঙ্গে ঝুলে থাকা স্থলসীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন এবং তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি হওয়ার বিষয়েও আশা প্রকাশ করেন। বিএনপি-জামায়াত জোটের হরতাল-অবরোধে বর্তমানে যে পরিস্থিতি হয়েছে তা ‘মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ’ মন্তব্য করে এই সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন শেখ হাসিনা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বর্তমানে যে অবস্থাটা চলছে আমি জানি সেটা নানা ধরনের অপপ্রচার চালিয়ে দেশের ভাবমূর্তি নষ্টের অপচেষ্টা। এক্ষেত্রে আমাদের দূতাবাসগুলোকে আরও সক্রিয় থাকতে হবে। কিছু ছবি মিডিয়াতে উঠল আর সেটাই সারাদেশের চিত্র না। আর যে কোন অবস্থা আমরা মোকাবেলা করতে পারি, ইনশাল্লাহ আমরা মোকাবেলা করব। হরতাল-অবরোধে নাশকতার জন্য বিএনপি-জামায়াতের কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশ পুরস্কৃত হয়, বাংলাদেশের মানুষ আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত হয়। আর বিএনপি-জামায়াত জোট যারা স্বাধীনতায়ই বিশ্বাস করে না, তারা ক্ষমতায় থাকলে বাংলাদেশ হয় তিরস্কৃত। আর তাদের কাছে আজ বাংলাদেশ জিম্মি। এ অবস্থায় বাংলাদেশ থাকবে না, এটাই আমরা চাই। সঙ্কট কাটিয়ে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের যে বর্তমান অবস্থা, কিছু কিছু ঘটনা, অপপ্রচার, হয়ত সাময়িকভাবে একটা কালো মেঘের মতো এসেছে। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের সবসময়ই মোকাবেলা করতে হয়। আর দুর্যোগ মোকাবেলায় এখন বাংলাদেশ যে পারদর্শী সেটা প্রমাণিত সত্য। ঠিক সেভাবে মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ, যা হয়ত সাময়িক, এটাও আমরা মোকাবেলা করতে পারব। এখান থেকেও বাংলাদেশ বেরিয়ে আসবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, সেটুকু আমি আপনাদের বলতে পারি। এ লক্ষ্যে সতর্কতার সঙ্গে কাজ চালিয়ে যেতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ঠিক সেভাবে পররাষ্ট্র কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। এদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে যে, কেউ যেন অহেতুক প্যানিক সৃষ্টি না করে, ভুল বোঝাবুঝি না করে। আমরা গণতন্ত্র এনেছি। গণতান্ত্রিক ধারা বজায় রেখেই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, না হলে দেশ উন্নত হবে না। গত ছয় বছরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে হরতাল-অবরোধে অগ্নিসংযোগ ও মানুষ হত্যার জন্য বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে দায়ী করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, মানুষ পুড়িয়ে মারাটাই যেন বিএনপি নেত্রী বেগম জিয়ার একমাত্র লক্ষ্য। তিনি বাংলাদেশের মানুষদের বোধহয় রাখতেই চান না। পাকিস্তানী বাহিনী যখন ২৫ মার্চ রাত থেকে গণহত্যা শুরু করে তখন তাদের ঠিক এই চরিত্রটাই ছিল। একই কায়দায় এই হত্যাযজ্ঞ তারা চালাচ্ছে। এই তা-ব উন্নয়নের গতিধারা ব্যাহত করছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। গত বছর ৫ জানুয়ারি জাতীয় দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জনমত তৈরিতে ভূমিকা রাখায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে গত বছর বাংলাদেশ কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এ্যাসোসিয়েশন (সিপিএ) ও ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) নেতা নির্বাচিত হওয়ার জন্যও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অভিনন্দন জানান তিনি। ভারতের সঙ্গে ঝুলে থাকা স্থলসীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন এবং তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি হওয়ার বিষয়ে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। আমাদের ল্যান্ড বাউন্ডারি সেটাও আমরা একটা জায়গায় চলে এসেছি। এটা তাদের (ভারতের) পার্লামেন্টে আছে। আমরা আশা করছি সেটা তারা করে দেবেন। তিস্তার পানি বণ্টনের বিষয়টি আলোচনায়, প্রায় সমাধানের পর্যায়ে আছে। আমরা আশা করছি এ সমস্ত সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ মীমাংসার কথা তুলে ধরেÑ এজন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে, আবার মামলা করে সেই মামলায় জয়ী হওয়া এটা একটা বিরাট কূটনৈতিক সাফল্য। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদমুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। বাংলাদেশ একটি দেশ যেখানে প্রত্যেকটি ধর্মের মানুষ স্বাধীনভাবে বসবাস করবে। যার যার ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করতে পারে সেই পরিবেশটাও আমরা সৃষ্টি করেছি। বাংলাদেশের সমস্যাগুলো জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস, মাদক, শিশুপাচার, নারীপাচার থেকে আমাদের মুক্তি পেতে হবে। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে তাদের সহযোগিতা নিয়েই এ কাজগুলো করতে হবে। বাংলাদেশী দূতাবাসগুলোর জন্য নিজস্ব ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিতে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। প্রবাসীদের প্রতি আরও বেশি দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের অবদানটা কখনও অবহেলার চোখে দেখা যাবে না। তাদের প্রতি একটু বেশি দায়িত্ব নিতে হবে এবং তাদের সমস্যাগুলোর সমাধান দিতে হবে। অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, কূটনৈতিক ক্ষেত্রে শুধু কূটনৈতিক সম্পর্কই রাখা না, ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ করা, কোন দেশে কী ধরনের পণ্য বাজার রয়েছে সেই বাজার খোঁজা, পাশাপাশি বিদেশ থেকে যাতে বিনিয়োগ আসে, সেই বিনিয়োগ আনার ক্ষেত্রেও আমার মনে হয় একটা কূটনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করা দরকার। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার যে স্বপ্ন ছিল, বাংলাদেশ হবে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড। বাংলাদেশকে ঠিক সেভাবেই আমরা উন্নত, সমৃদ্ধ, শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক ছিলেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সামনে মন্ত্রণালয়ের কর্মকা- তুলে ধরা হয়। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তীতে সরকার গঠনের পর নিয়মিত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের ফলে এসব মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমে আগের চেয়ে আরও গতি এসেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০১২ সালে সর্বশেষ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন ডা. দীপু মনি। এর প্রায় দু’বছর পর বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুনরায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসলেন।
×