ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

৫ হাজার নাশকতাকারীর তালিকা নিয়ে মাঠে নেমেছে যৌথবাহিনী

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ২৩ জানুয়ারি ২০১৫

৫ হাজার নাশকতাকারীর তালিকা নিয়ে মাঠে নেমেছে যৌথবাহিনী

শংকর কুমার দে ॥ যৌথবাহিনী মাঠে নামার পর দেশজুড়ে অবরোধের নামে সহিংস সন্ত্রাসী ও নাশকতাকারীরা গা-ঢাকা দিচ্ছে। দেশের ৬৪ জেলায় ৫ সহস্রাধিক সন্ত্রাসী ও নাশকতাকারীর তালিকা ধরে ‘কম্বিং অপারেশন’ শুরু করেছে যৌথবাহিনী। দেশের ২২ জেলায় যৌথবাহিনীর কম্বিং অপারেশন ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। সহিংস সন্ত্রাসী ও নাশকতাকারীদের বাড়িতে দেয়া হচ্ছে ‘ব্লক রেইড’। বিজিবির সদস্যরা রাস্তায় রাস্তায় টহল দিচ্ছে। রাজধানী ঢাকার ৪৯ থানা এলাকায় বোমাবাজ চক্রের শতাধিক সদস্যের তালিকা তৈরি করে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। রাজধানী ঢাকা ও ঢাকার বাইরে দেশের বিভিন্ন স্থানে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ ও বোমাবাজ চক্রের সহিংস সন্ত্রাস ও নাশকতার তা-বলীলা ক্রমেই কমে আসছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের ৬৪ জেলা ও বিভাগ থেকে ৫ সহস্রাধিক সহিংস সন্ত্রাসীর তালিকা তৈরি করে জমা দেয়া হয়েছে মন্ত্রণালয়ে। এই তালিকার মধ্যে আছে সন্ত্রাসকবলিত জামায়াত-শিবিরপ্রধান জেলা ও থানা এলাকা। ২০১৩ সালে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে যারা সহিংস সন্ত্রাসী ও নাশকতাকারী হিসেবে তালিকাভুক্ত ছিল তাদের গ্রেফতারের জন্য নতুন তালিকা করা হয়েছে। তবে প্রতিদিনই সহিংস সন্ত্রাসী ও নাশকতাকারীদের নতুন নাম তালিকায় যুক্ত হচ্ছে। বিশেষ করে বিভিন্ন সময় সহিংসতার ছবি ও ভিডিও ফুটেজ দেখে সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। সহিংস সন্ত্রাসী ও নাশকতাকারীদের মধ্যে যারা তালিকার বাইরে ছিল তাদের তালিকায় সংযুক্ত করে গ্রেফতার অভিযান চালানোর জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সন্ত্রাস ও সহিংসতা ঠেকাতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যে তালিকা পাঠানো হয়েছে তার মধ্যে তালিকা অনুযায়ী কতজন গ্রেফতার হয়েছে আর পলাতকরা কোথায় আছে তা মন্ত্রণালয়কে জানাতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যে গ্রেফতারের তালিকা পাঠানো হচ্ছে তার মধ্যে অনেকেই আইনী দুর্বলতার কারণে জামিনে ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে। জামিনে ছাড়া পাওয়াদের মধ্যে অনেকেই আবার সহিংস সন্ত্রাস ও নাশকতায় জড়িত হচ্ছে বলে অভিযোগ পেয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এই বিষয়ে পুলিশ সদর দফতরকে প্রয়োজনীয় আইনী পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, সহিংস সন্ত্রাসী ও নাশকতাকারীদের নাম-ঠিকানা, তাদের বিরুদ্ধে দায়ের মামলা, তাদের চিহ্নিত বা শনাক্তকারীর বৈশিষ্ট্যসহ সব তথ্য-উপাত্ত নিয়ে মাঠে নেমেছে যৌথবাহিনী। রাজধানী ঢাকা ছাড়াও বিএনপি-জামায়াত জোটের টানা অবরোধ-হরতালে দেশজুড়ে জ্বালাও-পোড়াও, ভাংচুর অব্যাহত রয়েছে। টানা অবরোধ-হরতালে দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ঢাকা, সাতক্ষীরা, মেহেরপুর, পাবনা, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাট, লালমনিরহাট, নীলফামারী, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, বগুড়া, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, সিলেট ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সন্ত্রাসকবলিত। যে কারণে এসব জেলায় চলমান নাশকতামূলক কর্মকা-ের লাগাম টানতে ইতোমধ্যে বিজিবি মোতায়েন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। যৌথবাহিনী এই জেলাগুলোয় যৌথ অভিযান পরিচালনা করছে। রাজশাহী, বরিশাল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, লালমনিরহাট, গাইবান্ধাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরের সন্ত্রাসী ও সহিংসতাকারী বোমাবাজদের তালিকা তৈরি করার কাজ অব্যাহত আছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেছেন, যৌথবাহিনীকে সন্ত্রাসী ও নাশকতাকারীদের গ্রেফতারের জন্য দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অবরোধের নামে যারা গাড়িতে আগুন, পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করছে তাদের গোপন সিসি টিভি ও ভিডিও ফুটেজ, পত্রিকায় প্রকাশিত ছবি দেখে শনাক্ত করে গ্রেফতারের প্রক্রিয়া চালাতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া থেকে সাহায্য ও সহযোগিত নিচ্ছে। এ ছাড়াও সন্ত্রাসীদের ধরিয়ে দিলে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। যানবাহনে তল্লাশি বিশেষ করে মোটরসাইকেলে একজনের বেশি আরোহণ করার ওপর নিষেধাজ্ঞা, চেকপোস্ট স্থাপন, টহল জোরদার করার ওপর গুরুত্ব দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য বিশেষ করে যৌথ বাহিনীর ওপর যাতে আক্রমণ না হয় সেই দিকে সতর্কতা অবলম্বন ও আক্রান্ত হলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আর যেসব জেলায় ইতোমধ্যে যৌথবাহিনী অভিযান শুরু করেছে সেখানে ব্লক রেইড দিচ্ছে। রাজশাহী জেলা-সহ জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত সহিংস সন্ত্রাস কবলিত জেলা ও শহর এলাকাগুলোতে যৌথবাহিনীর অভিযান আরও জোরদার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ বেশি সন্ত্রাসকবলিত জেলা থেকে অভিযান চালানোর ফলে সহিংস সন্ত্রাস ও নাশকতার তা-ব কমে এসেছে বলে গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। যৌথবাহিনী পরিচালনার সঙ্গে জড়িত একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সহিংস সন্ত্রাসী ও নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার অভিযান পরিাচালনা ব্যবহৃত হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি। কোন কোন স্থানে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি মিলে অভিযান চালাচ্ছে। আবার কোন কোন স্থানে পুলিশ ও র‌্যাব আলাদাভাবে অভিযান চালাচ্ছে। কোন কোন স্থানে শুধু পুলিশই অভিযান পরিচালনা করছে। অভিযানে নানা ধরনের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। অপরাধের ভিডিও ফুটেজ ও তালিকা অনুযায়ী আসামিদের চিহ্নিত করে ধরপাকড় শুরু হয়েছে। কারণ ইতোমধ্যেই রাজধানী ঢাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলা, শহর, থানা এমনকি ওয়ার্ড এলাকার সহিংস সন্ত্রাসী ও নাশকতাকারীরা পর্যন্ত গা-ঢাকা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা। রাজধানী ঢাকায় যানবাহনে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ ও অগ্নিসংযোগকারীদের নামের তালিকা করেছে পুলিশের একটি গোয়েন্দা সংস্থা। অন্তত শতাধিক বোমাবাজ এখন রাজধানীতে নাশকতামূলক কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে। এদের বেশিরভাগই কোন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ও ক্যাডার আছে। তাদের ভাড়া করা সন্ত্রাসী ও নাশকতাকারীও আছে। বিশেষ করে ছাত্রদল ও শিবিরের ক্যাডার রয়েছে যারা পেট্রোলবোমা, বোমা ও ককটেল প্রস্তুত ও যানবাহনে পেট্রোলবোমা ও আগুন দিয়ে নাশকতা চালাতে পারদর্শী। তাদেরকেও তালিকাভুক্ত করে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। অভিযান পরিচালনার স্বার্থে রাজধানীর কিছু স্থানকে স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। রাজধানী ঢাকার বনানী ও পুরনো ঢাকার লালবাগে বোমার ফ্যাক্টরির আবিষ্কার ও ছাত্রদল ও শিবির নামধারী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া এ্যান্ড পাবলিক রিলেশন শাখার উপ-কমিশনার মোঃ মাসুদুর রহমান জানিয়েছেন, যানবাহনে অগ্নিসংযোগের অভিযোগে কয়েকজনকে গ্রেফতার করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। এসব নাশকতামূলক কর্মকা-ে জড়িতদের একটি তালিকাও রয়েছে। এই তালিকা অনুযায়ী তাদের গ্রেফতারের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। রাজধানী ঢাকায় সহিংস সন্ত্রাসী ও নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি ও তৎপতরতা অব্যাহত আছে। ক্রমান্বয়ে অভিযান আরও জোরদার করা হচ্ছে।
×