ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সবজি বাজার স্থিতিশীল, ট্রাক ভাড়া বাড়ায় চালের দাম উর্ধমুখী

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ২৪ জানুয়ারি ২০১৫

সবজি বাজার স্থিতিশীল, ট্রাক ভাড়া বাড়ায় চালের দাম উর্ধমুখী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রাজধানীর কাঁচাবাজারে প্রতিকেজি নতুন আলুর খুচরা মূল্য হচ্ছে ১৫ টাকা। ৩৫ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে পেঁয়াজ। প্রতিপিস ফুলকপি ১৫-২০ এবং কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকায়। নিত্যপণ্যের দরদামের এ তথ্যই বলে দিচ্ছে বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধ ও সহিংসতার প্রভাব নেই সবজির বাজারে। তবে সবজির ভরা মৌসুমের এই সময় প্রতিবছর দাম কমে থাকে প্রতিটি পণ্যের। কিন্তু এবার দাম কমতে পারছে না। ফলে ক্রেতাদের বাড়তি দাম দিয়েই এ বছর সবজি কিনতে হচ্ছে। এদিকে, সবজির বাজারে যখন এই অবস্থা তখন সঙ্কট দেখা দিয়েছে চালের বাজারে। বাড়তে শুরু করেছে দেশের প্রধান এই খাদ্যপণ্যের দাম। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আড়ত ও মিলগুলোতে চালের পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও পরিবহন সঙ্কটে তা রাজধানীতে আনা যাচ্ছে না। এছাড়া হরতাল-অবরোধে পরিবহন খরচও বেড়ে গেছে। আর এ কারণে কেজিতে ২ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে চালের দাম। মোটা চালের দাম বাড়ায় অস্বস্তিতে রয়েছেন রাজধানীর স্বল্প আয়ের মানুষ। তবে সরবরাহ বাড়লে চালের দাম কমে আসবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে নিত্যপণ্যের দরদামের এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এদিকে, বিএনপি-জামায়াতের ১৮ দিনের রাজনৈতিক সহিংসতায় পণ্য সরবরাহ কমায় শীতকালীন সবজির দাম কমতে পারছে না। অথচ প্রতিবছর এই সময়টাতে সবজির দাম কমতে থাকে। তলানিতে ঠেকে শীতকালীন সবজির দাম। গত বছরের জানুয়ারি মাসের এই সময়টাতে প্রতিকেজি আলু বিক্রি হয়েছে ৮-১০ টাকায়। এবার সেই আলুর দাম কমলেও ১৫ টাকার নিচে নামছে না। একইভাবে সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক থাকলে টমেটো ১০-১৫ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু সেই টমেটো ক্রেতাকে ২৫-৩০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে কাপ্তান বাজারের সবজি বিক্রেতা মনির জনকণ্ঠকে বলেন, এখন তো সবজির দাম কমার কথা। অথচ ক্রেতাদের এখনও বাড়তি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। গত বছর এই সময় প্রতিপিস ফুলকপি বিক্রি হয়েছে ১০ টাকায় এবার বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকায়। বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধ ও সহিংসতার কারণে দাম কমতে পারছে না। একই কথা বললেন ফকিরাপুল বাজারের সবজি বিক্রেতা খলিল শেখ। তিনি বলেন, এখন তো দাম কমার সময়। কিন্তু হরতাল-অবরোধের কারণে ঢাকায় পণ্য আসতে পারছে না। ট্রাক ও ভ্যান ভাড়া বেড়ে গেছে। ফলে দাম না কমে বরং উল্টো বেড়ে গেছে। ক্রেতাদের বাড়তি দামে সবজি কিনতে হচ্ছে। বাজারে এখন প্রতিপিস বাধাকপি ও ফুলকপি ১৮-২০ টাকায়, লাউ প্রতিপিস ২০-২৫, প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ ৪০, আলু ১৫, শসা ২০, শিম ৩০, বেগুন প্রতিকেজি ৩৫ টাকা ও শালগম ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি ফার্মের মুরগি ১০ টাকা বেড়ে ১৩৫-১৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সয়াবিন তেল লুস প্রতিলিটারে ৫ টাকা বেড়ে এখন ৯৮-১০৩ টাকা, সয়াবিন তেল ৫ লিটার বোতল ১৫ টাকা বেড়ে ৪৯৫ এবং পামঅয়েল লুস প্রতিলিটার ২ টাকা বেড়ে ৬৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মাছ, গরু ও খাসির মাংসের দাম প্রতিকেজিতে ১০-২০ টাকা বেড়ে গেছে। অপরিবর্তিত রয়েছে চিনি, ডাল ও আটার দাম। তবে এসব পণ্যের দাম বাড়ার আভাস দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। অস্থির চালের বাজার ॥ টানা ১৮ দিনের অবরোধের প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে। পরিবহন সঙ্কটে উত্তরাঞ্চল থেকে চালের সরবরাহ কমে গেছে। আর এ কারণে বেড়ে যাচ্ছে দাম। গত কয়েক দিনে প্রায় সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ২-৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। টান পড়েছে মজুদে। ব্যবসায়ীরা চালের সরবরাহ নিশ্চিত করতে পণ্য পরিবহনে নিরাপত্তা জোরদার করার কথা বলছেন। সরকারী বাণিজ্যিক সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, মূলত গত সোমবার থেকে চালের দাম বাড়ছে রাজধানীতে। গত এক সপ্তাহ ধরে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে অন্তত ১ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ভালমানের প্রতিকেজি নাজিরশাল, মিনিকেট ৫৫-৫৭, আর সাধারণ মানের একই চাল ৪৮-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি মানের প্রতিকেজি বিআর-২৮ ধানের চাল ৪০-৪৫ টাকা, লতা ও পাইজাম ৩৮-৪৪ টাকা এবং স্বর্ণা, চায়নাসহ মোটা চাল ৩৫-৩৭ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। অবরোধের কারণে কৃষক পর্যায় থেকে চালকলে ধান আনা এবং চালকল থেকে পাইকারি বাজারে চাল পৌঁছানোর ব্যয় বেড়ে যাওয়াকেই দাম বাড়ার মূল কারণ হিসেবে দেখছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, অবরোধে নাশকতার আশঙ্কায় অনেক মালিক ট্রাক চালানো বন্ধ রেখেছেন। অনেকে রাজি হলেও সেজন্য গুনতে হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। কৃষক পর্যায় থেকে ধানের সরবরাহও কমে গেছে। সব মিলিয়ে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার প্রভাব পড়ছে চালের দামে। এছাড়া মৌসুম শেষ হওয়ায় ধানের দামও কিছুটা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে প্রতিদিন দেড় হাজার টনের বেশি চালের চাহিদা রয়েছে, যার সিংহভাগই আসে নওগাঁ, নাটোর, দিনাজপর, রংপুর, কুষ্টিয়া ও জয়পুরহাট থেকে। অবরোধ শুরুর আগে প্রতিদিন প্রায় এক হাজার ট্রাকে চাল আসত রাজধানীতে। অবরোধের কারণে তা অনেক কমে এসেছে। কাপ্তান বাজারের চালের পাইকারি ব্যবসায়ী চাল বিতানের স্বত্বাধিকারী নূরল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, অবরোধে ট্রাক মালিকরা ঝুঁকি নিতে চায় না। যারা ঢাকায় যেতে রাজি হয় তারা প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করছে। এ কারণে চালের দাম বেড়ে যাচ্ছে।
×