ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

২ দলের অন্য কেউ মাঠে নেই

কক্সবাজারে সহিংস হামলা চালাচ্ছে জামায়াত শিবির

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ২৪ জানুয়ারি ২০১৫

কক্সবাজারে সহিংস হামলা চালাচ্ছে জামায়াত শিবির

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার থেকে ॥ বিএনপির নেতৃত্বে ২০দলের আহ্বানে অবরোধ ডাকা হলেও কক্সবাজার জেলার কোথাও অন্য ১৮টি দলের নেতাকর্মীদের কেউ পিকেটিং কাজে নেই। এছাড়াও রাস্তায় জামায়াত-শিবির চোরাগোপ্তা হামলা চালালেও জেলা বিএনপির শীর্ষ কোন নেতার দেখা মিলছে না রাজপথে। অবরোধের ডাক দিয়ে ওইসব নেতা গা-ঢাকা দিয়েছেন বলে তথ্য মিলেছে। কক্সবাজর জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বা রাজপথে অবরোধে ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের এক সঙ্গে দেখা না যাওয়ায় এবং একই সঙ্গে ২০ দলের কোন কর্মসূচীও নেই দেখে সাধারণ লোকজনের মধ্যে হাসি-ঠাট্টা চলছে বিভিন্নস্থানে। পিকেটিংসহ অবরোধ পালনে শুধু জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা মাঠে থাকায় জেলা জামায়াত এবং জেলা বিএনপি একে অপরকে ঘায়েল করছে। ঝটিকা মিছিল করছে জামায়াত-শিবির। মূল শরিক দল বিএনপির এক নেতাকেও পাশে দাঁড় করাতে পারছে না বলে জেলা জামায়াতের এক নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জামায়াতের সমর্থনে ক্ষমতায় গেলে বিএনপি খায় মাছ, আর আমাদের দেয় কাঁটা। তারপরও আমরা লোভে নেই। জোটবদ্ধ বলে একসঙ্গে কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছে। গেলবার আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী আন্দোলনের ব্যানারে শুধু জামায়াত নেতাকর্মীরাই দেশজুড়ে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তাদের কোন নেতাকর্মী মাঠে থাকুক বা না থাকুক আমরা সে বিবেচনা করিনি। ওই সময় কক্সবাজারে জেলা বিএনপির মধ্যে গ্রুপিং থাকার কারণে হয়ত এ রকম হয়েছিল বলে ধারণা করা গেলেও ইতোপূর্বে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। সমঝোতা হওয়ার পর কক্সবাজারে সরকার বিরোধী আন্দোলন হয়ত এবার তুঙ্গে উঠবে বলে ধারণা করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। এতে তৃণমূল নেতাকর্মীর মধ্যে জমে থাকা সেই আশায় এখন গুড়েবালি। হতাশ হয়ে পড়ছে জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিএনপি নেতাকর্মীরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা জামায়াতের এ নেতা আরও বলেন, কক্সবাজার জেলার অনাচে-কানাচে রয়েছে জামায়াত-বিএনপির অসংখ্য সমর্থক। এ জেলার চারটি সংসদীয় আসনের মধ্যে একটি আওয়ামী লীগ এবং সর্বদা তিনটি আসন জামায়াত-বিএনপির ভাগে পাওয়া গেছে। কক্সবাজার জেলাকে জামায়াত-বিএনপির ঘাঁটি বলা গেলেও বিএনপির এ রকম নিষ্ক্রিয়তার কারণে তাদের তৃণমূল নেতাকর্মীরাসহ সাধারণ সমর্থকও দূরে সরে পড়বে। কারণ আন্দোলনে সাধারণ ভোটাররা দেখছেন কারা রাজপথে রয়েছে। তিনি আরও বলেন, আন্দোলনের ক্ষেত্রে জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতারা অকাজের কাজী। জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা রয়েছে বলেই বিএনপির সঙ্গে জোটবেঁধে রয়েছি। আমরা আন্দোলনে থাকলেও অবরোধ ও হরতালে জেলা বিএনপি একেবারেই মাঠে নেই বললে চলে। ১৯ জানুয়ারি দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জন্ম বার্ষিকীতে কক্সবাজারে ঘরোয়াভাবে কেক কাটার পর আর কোন কর্মসূচীতে তাদের অংশগ্রহণ নেই। অথচ প্রতিদিন জামায়াত সকালে টায়ার জ্বালিয়ে ও ঝটিকা মিছিল করে অবরোধ কর্মসূচী চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও ২০ দলের কয়েকটি শরিক দলের কক্সবাজারে অস্তিত্বও নেই বলে জানান তিনি। এদিকে জেলার সাধারণ লোকজন বলেন, গাড়ি চলছে, খোলা রয়েছে দোকানপাট, থেমে নেই আমাদের ছোটখাট ব্যবসা-বাণিজ্য। চাল-ডাল ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দামও বাড়েনি। কোথাও সমস্যা দেখা গেলে দ্রুত পৌঁছছে বিজিবি-পুলিশের গাড়ি। তাদের সহযোগিতা পাচ্ছি আমরা। তবে দুঃখ একটাই, খালেদা জিয়া অবরোধ চলবে বলে ঘোষণা দিয়ে আমাদের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে রেখেছে। উখিয়ার এক ব্যবসায়ী বলেন, বিএনপির দুইবার শাসনামলে টেকনাফ-কক্সবাজার মহাসড়কে একটি ব্রিজ-কালভার্টও সংস্কার করতে পারেনি। অথচ আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৩ সালে ঐ সড়কে ২৫টি ব্রিজ নির্মাণ করে দিয়েছে। উখিয়া-টেকনাফবাসীর চলাচলে দুর্ভোগ আর নেই। ব্যবসা-বাণিজ্য ও দোকানে বেচা-বিক্রিতে আমাদের কোন সমস্যাও দেখা দেয়নি। অযৌক্তিক অবরোধ-হরতালে আমাদের কোন সমস্যা না হলেও বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে পর্যটন শিল্পে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। চলতি মৌসুমে পর্যটক আসতে না পারায় প্রতিদিন ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন পর্যটন শিল্পে জড়িত ব্যবসায়ীরা। পর্যটন শিল্পে জড়িত এক ব্যবসায়ী জানান, পর্যটননগরী বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে পর্যটনের ভরা মৌসুমে পর্যটক নেই। বিএনপিসহ ২০দলীয় জোটের অবরোধ-হরতালের কারণে সৈকত শহরে পর্যটকরা ভ্রমণে আসতে না পারায় প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার লোকসান গুনছেন তারা। ৫জানুয়ারির আগে পর্যটকদের পদভারে ভরপুর ছিল কক্সবাজারসহ দর্শনীয় স্থানগুলো। তখন চাঙ্গাভাব ফিরে এসেছিল কক্সবাজার জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে। বিএনপি-জামায়াতসহ ২০দলীয় জোটের অবরোধ-হরতালে গত ১৮দিন ধরে দেখা নেই দেশ-বিদেশের কোন পর্যটকের। সৈকত রানী এ শহরের রাস্তাঘাট এখন ফাঁকা বললেই চলে। বেচাবিক্রি নেই, নেই ভ্রমণপিপাসুরা। এতে বার্মিজ মার্কেটসহ বিভিন্ন শপিংমলে প্রতিদিন দোকান খুললেও হতাশার নিদদ্রয় আচ্ছাদিত ব্যবসায়ীরা। টানা অবরোধ ও হরতালের ফাঁদে পড়ে ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে দেশের পর্যটন খাত। এভাবে চলতে থাকলে এ মৌসুমে শত কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা দেশে স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখতে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য খালেদা জিয়াকে অনুরোধ জানিয়েছেন।
×