ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভোরেই ক্রুইফের আগমন

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২৪ জানুয়ারি ২০১৫

ভোরেই ক্রুইফের আগমন

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে শনিবার ভোরে তার্কিশ এয়ারলাইন্সে করে ঢাকা আসছেন লোডভিক ডি ক্রুইফ। শুক্রবার বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সহ-সভাপতি এবং ন্যাশনাল টিম ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল গুলশান নিজ বাসভবনে বিষয়টি জানান। ক্রুইফ প্রসঙ্গে তাবিথ আরও বলেন, ‘এখনই তিনি (ক্রুইফ) কাজ শুরু করে দিয়েছেন। নিজ দেশ হল্যান্ডে বসেই প্রতিপক্ষ দেশগুলোর ভিডিও ফুটেজ দেখে তাঁর মতো করে পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন। ঢাকা আসার পর টেকটিক্যালি কাজ চলবে। ক্রুইফ ঢাকা আসার পরই চুক্তি হবে। যেদিন বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ মিশন শেষ, সেদিনই ক্রুইফের দায়িত্ব শেষ।’ কেন ক্রুইফকেই আনা হলো? ‘বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ সামনে রেখে অন্য বিদেশী কোচ আনলে খেলোয়াড়দের বুঝতেই সময় চলে যাবে। তাই ক্রুইফকে ফেরানো হলো।’ তবে এশিয়ান গেমস ও বিশ্বকাপ বাছাইয়ের জন্য অন্য কোচিং স্টাফ আনা হবে। এখন পর্যন্ত অনেকের সঙ্গেই কথা চলছে, তবে এখনও কিছুই চূড়ান্ত হয়নি। মার্চ-এপ্রিল নাগাদ কোচিং স্টাফ নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে। এশিয়ান কোন কোচকেই আনার পরিকল্পনাও আছে বলে জানান তাবিথ। ঢাকায় নেমেই ক্রুইফ চলে যাবেন সাভারের জিরানিতে অবস্থিত বিকেএসপির জাতীয় ফুটবল দলের ক্যাম্পে। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে বাংলাদেশের দুটি চ্যালেঞ্জ। আয়োজন এবং জাতীয় দলের মাঠের পারফর্মেন্স। অনেকদিন পর বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ। আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে ঠিকঠাকই। কিন্তু যাদের দিকেই দেশে মানুষ বেশি তাকিয়ে, সেই ফুটবলারদের প্রস্তুতি কতটা ঠিকঠাক চলছে? এ আসরের জন্য একবার বিদায় করে দেয়া ডাচ্ কোচ লোডভিক ডি ক্রুইফকে আবারও দায়িত্ব দিতে যাচ্ছে বাফুফে। আরও আগেই ক্রুইফের আসার কথা ছিল। কিন্তু বাবা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ায় আসা পিছিয়ে যায় তাঁর। তবে সময় মতো না আসলেও হল্যান্ডে বসেই জাতীয় দলের অনুশীলন পরিচালনা করেন তিনি! ফেসবুক আর ই-মেইলে স্থানীয় কোচ সাইফুল বারী টিটুকে গাইডলাইন দেন ক্রুইফ। বঙ্গবন্ধু কাপে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ দলগুলোর পুরনো ম্যাচ ভিডিও ক্রুইফের কাছে পাঠানো হয়। তিনি দেশে বসে ভিডিও দেখে আর গাইডলাইন দেন টিটুকে। প্রযুক্তির মাধ্যমে দূর থেকেই জাতীয় দলের অনুশীলন নিয়ন্ত্রণ করেন ক্রুইফ। আগে ক্রুইফের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল তিনি তাঁর বকেয়া পেলে তবেই ঢাকায় আসবেন। জানা গেছেÑ ইতোমধ্যেই ক্রুইফের বকেয়া পাওনার প্রায় ৭০ ভাগই তাঁর কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে বাফুফে। বাকি ৩০ ভাগ পরিশোধ করতেও বাফুফের পক্ষ থেকে কোন ধরনের সমস্যা নেই বলে জানিয়েছেন বাফুফে সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ। এই ৩০ ভাগ টাকা আটকে আছে ব্যাংকের বিভিন্ন প্রক্রিয়ার কারণে। এই টাকাও অচিরেই ক্রুইফ পেয়ে যাবেন বলে জানান সোহাগ। ফুটবলপ্রেমীরা অনেকেই বলছিলেন, ক্রুইফ শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশে আসবেন না। তিনি আসলে তার বকেয়া পাওনা টাকা আদায় করার জন্যই বাফুফেকে প্রস্তাব দিয়েছেন জাতীয় দলের কোচ হবেন শুধু বঙ্গবন্ধু কাপের জন্য। বাফুফে যেহেতু তাকে তার পাওনা টাকার বেশিরভাগই পাঠিয়ে দিয়েছে, কাজেই বাবার মৃত্যুকে কাজে লাগিয়ে ক্রুইফ শেষ পর্যন্ত আর আসবেন না! উল্লেখ্য, সিনসিয়ারিটির অভাব, ব্ল্যাকমেইলিংয়ের প্রবণতা, চুক্তির বাইরে চলে যাওয়া, মিডিয়ার কাছে অনবরত নেগেটিভ কথা বলা, ৪৮০ দিনের মধ্যে ২২৪ দিনই নানা অজুহাতে হল্যান্ডে গিয়ে ছুটি কাটানো ... ইত্যাদি অভিযোগ তুলে গত অক্টোবরে বাফুফে প্রথমে ক্রুইফকে বরখাস্ত করার ঘোষণা দেয়। ক্রুইফ সে সময় নিজ দেশে ছুটিতে ছিলেন। পরে তিনি বাংলাদেশে ফিরলে অবশ্য কৌশলগত কারণে সে অবস্থান থেকে সরে এসে ক্রুইফকে উল্লিখিত অভিযোগ নিয়ে শো-কজ করে এই ডাচ্ কোচকে। ক্রুইফ কারণ দর্শাও নোটিসের জবাব দিয়ে বাফুফের কাছে তাঁর বকেয়া কয়েক মাসের বেতন ফেরত চান। নইলে ফিফার কাছে নালিশ দেয়ার হুমকি দেন। বাফুফেও তার অবস্থানে অনড় থাকলে একপর্যায়ে বোধদয় হয় ক্রুইফের। বুঝে যান, বিবাদ করে লাভ নেই। বরং বাফুফের সঙ্গে সমঝোতা করে বাকি বকেয়া বতেন নিয়ে মানে মানে কেটে পড়াই সমীচীন। শেষ পর্যন্ত সেটাই করেন তিনি। বাংলাদেশে আগমনের ৩৬ ঘণ্টার মধ্যেই আবারও নিজ দেশ হল্যান্ডের উদ্দেশে বিমানে ওঠেন। বাফুফে তাঁতে জানিয়ে দেয়, পাওনা চার মাসের বেতন পরে ক্রুইফের কাছে হল্যান্ডে পাঠিয়ে দেয়া হবে। জাতীয় ফুটবল দলের ১৬তম বিদেশী কোচ ছিলেন ক্রুইফ। তাঁর অধীনে জাতীয় ফুটবল দল ভারত, নেপাল, মালয়েশিয়ার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ এবং এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপ, সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ এবং এশিয়ান গেমসে অংশ নেয়। কোনটিতেই তাঁর দল আশাতীত রেজাল্ট করতে পারেনি। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশকে ১৬৫ থেকে ১০০-১২০-এর মধ্যে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন ক্রুইফ। ক্রুইফ অক্টোবরে ফিরে যাওয়ার সময় বাংলাদেশের ফিফা র‌্যাঙ্কিং ছিল ১৮১! সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ছিল ক্রুইফদের মূল এ্যাসাইনমেন্ট, সেখানে সপ্তম হয় বাংলাদেশ। ব্যর্থ হন ক্রুইফ। এখন দেখার বিষয়, শেষ পর্যন্ত আবারও ক্রুইফের প্রস্তাবে রাজি হয়ে তাঁকে আবারও বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের দ্রোণাচার্য্য বানিয়ে আসন্ন বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টে কেমন রেজাল্ট পায় বাফুফে।
×