ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জ্বালাও পোড়াও বন্ধ দাবিতে রাজপথ উত্তাল ॥ পেশাজীবী সম্মিলিত পরিষদের মানববন্ধন

আমার স্বজন পুড়ে কেন কয়লা হবে-এ মৃত্যু থামাও...

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২৫ জানুয়ারি ২০১৫

আমার স্বজন পুড়ে কেন কয়লা হবে-এ মৃত্যু থামাও...

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি-জামায়াত জোটের ডাকা টানা অবরোধ ও হরতালের নামে মানুষ পুড়িয়ে মারার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানিয়েছেন সব শ্রেণী-পেশার মানুষ। ‘এ মৃত্যু থামাও’, ‘এটি মানুষ হত্যা’, ‘আমার স্বজন কেন পুড়ে কয়লা হবে’, ‘সীমাহীন ধিক্কার’, ‘এটি রাজনীতি নয়’- এমন হাজারও প্রতিবাদী স্রোগানে রাজপথ ছিল প্রকম্পিত। সবাই বলেছেন, বেঁচে থাকার জন্য আমরা এক হয়েছি। আমরা পেট্রোলবোমায় দগ্ধ হয়ে মরতে চাই না। এমন রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে জ্বালাও পোড়াও বন্ধের দাবি উঠেছে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে। নাশকতাকারীদের কঠোর হস্তে দমনের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সংগঠনগুলো বলছে, বাসে বোমা মেরে মানুষ পুড়িয়ে মারার অভিযোগে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হোক। অবিলম্বে অর্থনীতি বিধ্বংসী এমন কর্মকা- বন্ধ করা না হলে দেশের সব দোকানপাট বন্ধ রাখারও হুমকি এসেছে ব্যবসায়ী সমাজ থেকে। শনিবার রাজধানীতে আয়োজিত পৃথক প্রতিবাদ সমাবেশ, মৌনমিছিল, মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলনে এ সব দাবি জানানো হয়। ‘মানুষ মেরে লাভ কার, সীমাহীন ধিক্কার’, ‘এটি রাজনীতি নয়, মানুষ হত্যা’, ‘পুড়ছে মানুষ, জ্বলছে দেশ, জাগুক বিবেক, কাঁদছে দেশ’- এমন অসংখ্য প্রতিবাদী প্ল্যাকার্ড নিয়ে শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচীর আয়োজন করে পেশাজীবী সম্মিলিত পরিষদ। এতে শিক্ষক-সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, খেলোয়াড়, সংস্কৃতিকর্মী, আইনজীবী, ছাত্র-জনতা বিভিন্ন পেশার মানুষ অংশ নেন। পরে গণহত্যা ও সহিংসতার প্রতি একরাশ ঘৃণা ছুড়ে মৌন পদযাত্রা করেন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার অভিমুখে। পেট্রোলবোমায় মানুষ পুড়িয়ে মারা ও জনজীবনকে আতঙ্কিত করার প্রতিবাদে তারা দৃপ্ত পায়ে এগিয়ে যান শহীদ মিনারে। যে শহীদ মিনার বাঙালী জাতির স্বাধিকার আন্দোলনের সূতিকাগার। বিএনপির টানা অবরোধ ও হরতালে সাধারণ মানুষের জীবন যখন ওষ্ঠাগত, তখনই তারা বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমেছেন বলে জানান। বিশিষ্ট সাংবাদিক আবেদ খান বলেন, মানবতার জন্য আমাদের যখন পথে নামতে হয় তখন বুঝতে হবে বেঁচে থাকার জন্য আমরা এক হয়েছি। নাশকতা ও ধ্বংসের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। নাশকতা সৃষ্টিকারীদের কঠোর হস্তে দমন করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। ‘আমার স্বজন কেন পুড়ে কয়লা হবে’- এমন প্রশ্নের ফেস্টুন হতে মৌনমিছিলের অগ্রভাগে দেখা গেছে পেট্রোলবোমায় আহত কয়েকজনের স্বজনকে। মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, তাঁদের যেমন জীবনের নিরাপত্তা নেই, তেমনি এতটুকুও বলার জায়গা নেই- ‘এ মৃত্যু থামাও...’। কাকে বলবে? কে শুনবে? তাদের কথা। পেশাজীবীরা মানববন্ধন ও মৌন মিছিল শেষে সহিংসতা ও মানুষ পোড়ানো বন্ধ করে সাধারণ নাগরিকদের জন্য স্বাভাবিক জীবনযাপন নিশ্চিত করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আহ্বান জানান। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, চলমান সহিংসতা রোধে সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে। দেশের মানুষ চায় সরকার সহিংসতা প্রতিরোধে আরও কঠোর হোক। কারণ খালেদা জিয়া সংলাপ চান; কিন্তু জঙ্গীদের সঙ্গ ছাড়েন না। তিনি জঙ্গীদের সঙ্গ ত্যাগ না করে তাদের মানুষ পোড়ানোর কাজে ব্যবহার করছেন। কঠোর হাতে এদের দমন করার জন্য জনগণকে সরকারের কাছে শক্তভাবে আবেদন করতে হবে। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাত্রনেতা ওমর শরীফের নেতৃত্বে সাদা পতাকা হাতে শান্তির দাবিতে মৌনমিছিলে সমর্থন জানান ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তিনি বলেন, যারা আজ গাড়িতে আগুন দেয় তাদের কাউকে যদি ধরে হাত পুড়িয়ে দেয়া হয় তবেই তারা এই যাতনা বুঝবে। এদের আরও কঠোর হাতে দমন করার জন্য তিনি সরকারের কাছে দাবি জানান। তিনি বলেন, দেশের ছাত্র-জনতা সন্ত্রাস দমনে সরকারের পাশে আছে, আগামী দিনেও পাশে থাকবে। ‘আমরা বাঁচতে চাই, রাজনৈতিক সহিংসতার বলি হতে চাই না’- এমন ফেস্টুন হাতে উঁচিয়ে রেখেই অভিনেত্রী ডলি জহুর বলেন, আমরা আর রাজনীতির নামে সহিংসতা দেখতে চাই না। নির্বিঘ্নে নির্ভয়ে অভিনয় করতে চাই। জীবনের নিরাপত্তা চাই। আজকের পরিস্থিতির জন্য রাজনীতিবিদদের রাষ্ট্র ও সমাজের কাছে জবাবদিহি হতে হবে। অভিনেতা জাহিদ হাসান বলেন, বসার আগে দেশ। যখন দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় তখন আমরা আর বসে থাকতে পারি না। বর্তমান সহিংসতার প্রতিবাদে তাই আমাকে রাস্তায় নামতে হয়েছে। দেশের প্রতিটি মানুষ দেশকে শান্তির জনপদ হিসেবে দেখতে চায়। কর্মসূচীতে সংহতি প্রকাশ করে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু বলেন, আজ তরুণ প্রজন্মের দায়িত্ব মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষা করা। যারা জ্বালাও-পোড়াও করছে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা তাদের এখন প্রধান দায়িত্ব। শান্তির বাংলাদেশ পেতে হলে এ ধরনের কর্মকা-ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। খালেদা যে কর্মকাণ্ড গড়ে তুলেছেন তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ নয়, প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। যতদিন পর্যন্ত এ ধরনের কর্মকা- বন্ধ না হবে ততদিন পর্যন্ত রাজপথে অবস্থান করে খালেদার হাতকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক বলেন, বাংলাদেশ যখন উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে, তখন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া বাংলাদেশকে মৃত্যুকূপে পরিণত করতে চায়। জীবন্ত মানুষ আজ মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। এ অবস্থায় আর ঘরের মধ্যে বসে থাকা যায় না। ’৭১, ’৬২, ’৫২-এর মতো আবারও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তিনি আরও বলেন, আর যদি একটি পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করা হয়, তবে রাজপথে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। আপনি সহিংসতার পথ পরিহার করে শান্তির পথে আসুন দেশের মানুষের বাঁচার আন্দোলনে শরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। মোবাইল এ্যাপ্লিকেশন সবার জন্য উন্মুক্ত করা হবে বলে জানান তিনি। আরও অংশ নেন- অভিনেত্রী এ্যাডভোকেট তারানা হালিম এমপি, সাবিনা আকতার তুহিন এমপি, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, অভিনয়শিল্পী ড. ইনামুল হক, এটিএম শামসুজ্জামান, জাহিদ হাসান, হাসান মাসুদ, চিত্রনায়িকা নিপুণ, ক্রিকেটার আকরাম খান, নাইমুর রহমান দুর্জয়, খালেদ মাহমুদ সুজন, নাট্যকার সৈয়দ হাসান ইমাম, সাবেরী আলম প্রমুখ। আগামী শুক্রবার বিকেল তিন ৩টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে একই দাবিতে সমাবেশ হবে। সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘নৈরাজ্য সহিংসতা গণতন্ত্রের ভাষা নয়’, ‘আন্দোলনের নামে সহিংসতা বন্ধ কর’, ‘রাজনীতি মানবিক কর’- লেখা প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার হাতে নিয়ে আরেকটি মানববন্ধন পালন করেছে সেক্টর কমান্ডারস্ ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ ’৭১। এ মানববন্ধনে যুদ্ধাপরাধ বিচার মঞ্চ, সম্মিলিত জঙ্গীবাদবিরোধী মঞ্চ, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদ ও পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন সংহতি প্রকাশ করে। মুক্তিযুদ্ধের ৮নং সেক্টরের কমান্ডার ও আয়োজক সংগঠনের ভাইস প্রেসিডেন্ট লে. কর্নেল আবু ওসমান চৌধুরী খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে বলেন, অবরোধের নামে যে সহিংসতা তা অবিলম্বে বন্ধ করুন। নইলে তরুণ প্রজন্মই তা প্রতিহত করবে। আপনি জামায়াতকে ত্যাগ করলে আমরা সরকারকে অনুরোধ করব সংলাপে বসার জন্য। সাবেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল এম হারুন অর রশীদ বীরপ্রতীক বলেন, সরকার পরিবর্তন হবে জনগণের রায়ে। আর সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই কেবল এটি সম্ভব। সহিংসতার মাধ্যমে নয়। আমরা পাকিস্তান ও আফগানিস্তান হতে চাই না। বিএনপিকে বলছি, অবিলম্বে সহিংসতা থামান। তা না হলে সারাদেশে অবরোধের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। মানববন্ধনে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হক টুকু অভিযোগ করে বলেন, সহিংসতার রাজনীতি বিএনপি ও তার জোটসঙ্গী জামায়াতের জন্য নতুন কিছু নয়। খালেদা ও জামায়াত সহিংসতার জন্য জিহাদ ঘোষণা করেছে। রাজনীতি ও ধর্মের নামে তারা এখন যা করছে তা ১৯৭১ সালেও করেছিল। গত এক বছর ধরে দেশ শান্তিপূর্ণভাবে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু ৫ জানুয়ারির নামে খালেদা জিয়া এখন সুপরিকল্পিতভাবে সহিংসতা করছেন। আজকে হাসপাতালগুলোর বার্ন ইউনিটে দগ্ধ শিশু ও মায়েদের আর্তচিৎকারে বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, সংবাদপত্র, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে সহিংসতা বন্ধ করার জন্য আমরা খালেদা জিয়াকে আহ্বান জানিয়েছি। কিন্তু তাঁর বোধোদয় হয়নি। গণতন্ত্রের পুরোধা ব্যক্তিত্ব যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন ১৮৬১ সালে সে দেশের মানুষকে শান্তিতে রাখার জন্য নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের গ্রেফতার করেছিলেন। তাই বেগম জিয়া যদি নৈরাজ্য ও সহিংসতার পথ ছেড়ে না আসেন, তবে তাঁকেও গ্রেফতার করতে হবে। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ম. হামিদ বলেন, রাজনীতির লক্ষ্য হলো গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ে জনমত গঠন করা। অবরোধ-সহিংসতা রাজনীতির ভাষা হতে পারে না। মুক্তিযুদ্ধের সময় সাধারণ মানুষ যাতে আতঙ্কিত না হয়, সে জন্য মুক্তিযোদ্ধারা সজাগ ছিলেন। কিন্তু আজ স্বাধীন দেশে পেট্রোলবোমার আতঙ্ক মানুষকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। সুষ্ঠু গণতন্ত্রের স্বার্থে অবরোধের মতো কর্মসূচী বন্ধে আইন করা উচিত। মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সেক্টর কমান্ডরস্ ফোরামের মহাসচিব হারুন হাবিব, কার্যনির্বাহী সদস্য তুষার আমীন, ঢাকা বিভাগীয় সম্পাদক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ পাটোয়ারী, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারাণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, সাংবাদিক সাংবাদিক সালেহ চৌধুরী, মোশাররফ হোসেন প্রমুখ। মানববন্ধন শেষে সহিংসতাবিরোধী এক শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। প্রেসক্লাবের সামনে থেকে শুরু হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শোভাযাত্রাটি শেষ হয়। পরে সেখানেও একটি সমাবেশ হয়। জ্বালাও-পোড়াও, মানুষ হত্যা, সন্ত্রাস, হরতাল-অবরোধের প্রতিবাদে শনিবার রাজধানীর তোপখানায় বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সমাবেশ হয়। সমাবেশে সন্ত্রাসী ও জঙ্গীবাদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, সন্ত্রাসী ও জঙ্গীবাদ নিমর্ূূলে বিশ্বের অন্যান্য দেশে যেমন আচরণ করা হয় বাংলাদেশেও একই রকম আচরণ করা হবে। বর্তমানেও একই পথ অবলম্বন করা হচ্ছে। কথা পরিষ্কার এদের নির্মূল ছাড়া কোন পথ নেই। দেশবাসীর পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। বিএনপি জোর করে মানুষ হত্যা করে দাবি আদায় করতে চায়। তাদের এই আচরণ মেনে নেয়া হবে না। বাংলাদেশে জনগণের ওপর নির্যাতন করে দাবি আদায়ের সংস্কৃতি সৃষ্টি করতে দেয়া যাবে না। সন্ত্রাসী নির্মূলে যে পথ অনুসরণ করা হয় তাদের ক্ষেত্রেও একই পথ অনুসরণ করা হবে। যাত্রাবাড়ীতে শুক্রবার রাতে একটি বাসে পেট্রোলবোমা ছুড়ে দেয়া অগ্নিদগ্ধ ও আহতদের কথা উল্লেখ করে কামরুল ইসলাম বলেন, গত রাতে যাত্রাবাড়ীতে যে নারকীয় ঘটনা ঘটানো হয়েছে, এর নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। যারা এ সব কর্মকা- করছে তারা নিঃসন্দেহে সন্ত্রাসী। আমার মনে হয় এরপর দেশবাসী ঘুরে দাঁড়াবে। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। বিএনপির ‘শুভবুদ্ধিসম্পন্ন’ নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আপনাদের প্রতি আহ্বান জানাব, এই সন্ত্রাস বন্ধ করুন, মানুষ হত্যা বন্ধ করুন। তাহলে আপনাদর সঙ্গে কথা হলেও হতে পারে। সভার শুরুতে গণঅভ্যুত্থানে নিহত নেতাদের স্মরণে শ্রদ্ধা জানাতে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন- ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়য়া, ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য কামরুল আহসান, মুকুল চৌধুরী, শাহে আলম মুরাদ, আব্দুল হক সবুজ প্রমুখ। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন ওয়ার্কার্স পার্টির ঢাকা মহানগরের সভাপতি আবুল হোসাইন। শনিবার দুপুরে রাজধানীর নিউ এলিফ্যান্ট রোডে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির এক সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ী নেতারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, অবিলম্বে বিএনপির টানা অবরোধ-হরতালের নামে জ্বালাও পোড়াও বন্ধ হলে দেশের সব দোকান বন্ধ রাখা হবে। সংগঠনের সভাপতি এসএ কাদের কিরণ বলেন, হরতাল-অবরোধের নামে মানুষ পুড়িয়ে মারা হচ্ছে। এ সব ঘটনায় সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে দোকান মালিক-কর্মচারীরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। এটা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী হতে পারে না। তিনি বলেন, টানা অবরোধ ও হরতালের কারণে ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ব্যবসায়ীরা তাদের সন্তানদের স্কুলের ফিস, বাড়িভাড়া, সার্ভিস চার্জ ও ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। এসএ কাদের কিরণ বলেন, দেয়ালে পিঠ নয়, দেয়ালই ভেঙ্গে গেছে দোকান মালিকদের। টানা অবরোধ ও হরতালের কারণে দোকান খোলা থাকলেও ক্রেতা সমাগম না হওয়ায় ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তিনি একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, সারাদেশে প্রায় ২৫ লাখ দোকানে গড়ে প্রায় ১২ হাজার টাকা লেনদেন হয়। সারাদেশে এ সব দোকানে দৈনিক ৩ হাজার কোটি টাকা লেনদেনের বিপরীতে প্রায় ৩শ’ কোটি টাকা লাভ হয়। দৈনিক দোকান খরচ বাবদ ১৫০ কোটি টাকা পুঁজি থেকে যাচ্ছে। একই সঙ্গে সংসার খরচ ও ব্যাংক ঋণ মেটাতে গিয়ে অনেক ব্যবসায়ী ইতোমধ্যে দেউলিয়া হয়ে গেছেন। তিনি বলেন, ২৫ লাখ দোকানে গড়ে ৩ জন কর্মচারী হলে এ খাতের সঙ্গে সরাসরি জড়িত প্রায় ১ কোটি পরিবার। ৪ জন করে পরিবারের সদস্য ধরলে মোট ৪ কোটি সদস্য অর্থাৎ জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ দোকান ব্যবসার ওপর নির্ভরশীল। তিনি রাজনীতিবিদদের উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে বলেন, এই বিশাল দোকান ব্যবসায়ী পরিবারের ক্ষতি করে রাজনীতিবিদরা কী আনন্দ পাচ্ছেন? কার স্বার্থ রক্ষা করছেন রাজনীতিবিদরা। তিনি বলেন, দেশের চলমান এ রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে উত্তরণে দোকান মালিক সমিতির পক্ষ থেকে দুই নেত্রীকে চিঠি দেয়া হবে। আমরা তাদের সাক্ষাত চাইব। তারপর দেশব্যাপী মানববন্ধন ও অনশন কর্মসূচী পালন করা হবে। এরপরও অবস্থার উন্নতি না হলে দেশের সব দোকান বন্ধ থাকবে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসএ কিরণ বলেন, চলতি সপ্তাহের মধ্যে রাজনীতিবিদদের সঙ্গে সাক্ষাত না হলে আমরা কঠোর কর্মসূচী পালন করব। প্রয়োজনে সারাদেশের কাঁচাবাজারসহ সকল দোকান বন্ধ করে দেয়া হবে। একটি দোকানও খোলা হবে না। তখন রাজনীতিবিদরা বুঝবেন কত ধানে কত চাল। তখন আমাদের দাবি শুনলেও কাজ হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন এ ব্যবসায়ী নেতা। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির মহাসচিব শাহ আলম কিরণ, ঢাকা মহানগর দোকান মালিক সমিতির সভাপতি তৌফিক এহেসান, সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেনসহ সংগঠনের নেতারা।
×