ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আঁধারের বিরুদ্ধে আলো

প্রকাশিত: ০৩:৩৫, ২৬ জানুয়ারি ২০১৫

আঁধারের বিরুদ্ধে আলো

টানা প্রায় তিন সপ্তাহ পার হয়ে গেল, নাশকতা থামছে না। অবরোধের নামে যাত্রীবাহী চলন্ত বাসে পেট্রোলবোমা ছুড়ে মানুষ হত্যার কর্মসূচী শেষ হচ্ছে না। এই সন্ত্রাস-সহিংসতার ভেতর ফের চাপিয়ে দেয়া হয়েছে টানা ৩৬ ঘণ্টার হরতাল। বাতাস ভারি হয়ে উঠছে ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটের। ২০ দলীয় জোটের মানুষ খুনের তালিকায় বেঁচে যাওয়া অগ্নিদগ্ধ মানুষের ঠাঁই যেন আর হচ্ছে না হাসপাতালের ওই ইউনিটে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, ওরা গোটা দেশকেই বার্ন ইউনিট বানাতে চাইছে! ফের তারা নিরীহ নাগরিকদের ওপর হামলা চালিয়েছে। আগের দুটি শুক্রবারের তুলনায় এবারের আক্রমণ আরও বড় ও নৃশংস। রাজশাহীতে নয়জন দগ্ধ হয়েছেন। রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে যাত্রীবাহী বাসে ছোড়া পেট্রোলবোমায় পুড়ে যান ২৯ যাত্রী। এঁদের মধ্যে নয়জনের শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। জনগণের রাজনীতি তথা গণতন্ত্রের রাজনীতির সঙ্গে এ ধরনের বর্বরতার ন্যূনতম কোন সম্পর্ক নেই। গণতান্ত্রিক রাজনীতির ভিত্তি হলো জনসমর্থন, লক্ষ্য হলো জনকল্যাণ। জনগণকে অগ্নিদগ্ধ করে, জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে আর যাই হোক জনসমর্থন অর্জন করা যায় না। বিএনপি অন্যতম একটি বড় রাজনৈতিক দল হওয়া সত্ত্বেও বর্তমানে তার কর্মকা- বিশ্লেষণ করলে তাকে সন্ত্রাসী দল আখ্যা দেয়াটাই সমীচীন। প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে তাদের এই ধারাবাহিক অপরাধ কি মানবতাবিরোধী অপরাধের আওতায় পড়ে না? আঁধারের বিরুদ্ধে আলোর মিছিল নিয়ে জেগে উঠেছে জনতা এবং সমাজের সৃষ্টিশীল মানুষ তথা শিল্পী-সাহিত্যিকরা। মানুষ হত্যার প্রতিবাদে রাজপথে নেমে আসা সাধারণ মানুষ এখনও শান্তিপূর্ণভাবেই তাদের প্রতিবাদ জানাচ্ছে। তাদের হাতে পোস্টারে বিএনপি নেত্রীকে উদ্দেশ করে লেখা হয়েছেÑ হে দেশনেত্রী দেশের মানুষ শান্তি চায়। একই আহ্বান শেখ হাসিনার প্রতিও জানানো হয়েছে। দেশব্যাপী নাশকতা চালানোর হুকুম জারি করলে তাকে আর কী উপায়ে ‘দেশনেত্রী’ বলা যাবে? শুক্রবার শহীদ মিনারে সহিংসতা প্রতিরোধে সোচ্চার সংস্কৃতিকর্মীদের এক সমাবেশে নাশকতার বিরুদ্ধে তাদের অবস্থানের কথা ঘোষণা করেন। গণজাগরণ মঞ্চ আলোর মিছিলের আয়োজন করে। কবিতা, ছবি, গান আর নাটকের মাধ্যমে প্রতিবাদ ও শান্তির ব্যতিক্রমী আলোক জ্বালানোর প্রক্রিয়া শুরু করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। দেশের সচেতন মানুষ ও সংস্কৃতিকর্মীদের এ জাতীয় অহিংস উদ্যোগ সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, সহিংসতা ও হত্যাকা-ের বিরুদ্ধে দেশের সাধারণ মানুষকে অতীতের মতো উদ্বুদ্ধ ও উজ্জীবিত করবেÑ এটা নিশ্চিত বলা যায়।
×