ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হচ্ছে নেপালের সঙ্গে

প্রকাশিত: ০৩:৪১, ২৬ জানুয়ারি ২০১৫

মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হচ্ছে নেপালের সঙ্গে

এম শাহজাহান ॥ হিমালয় কন্যা হিসেবে খ্যাত নেপালের সঙ্গে এবার বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি করার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে নেপালের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি ও মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করার বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সার্কভুক্ত এ দেশটিতে প্রতিবছর বাংলাদেশের বাণিজ্য বাড়ছে। তবে বাণিজ্য ঘাটতি বাংলাদেশের অনুকূলে নয়। কিন্তু বিপুল পরিমাণ পণ্য আমদানির পাশাপাশি দেশটিতে রফতানিরও সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশী পণ্যের চাহিদা বাড়ছে নেপালে। জানা গেছে, নেপালের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বা কানেকটিভিটি করতে ভারতের ভূ-খ- ব্যবহার করতে চায় বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে ভারতকে ট্রানজিট চুক্তি করার জন্য আহ্বান করা হয়েছে। যে চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হবে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, সার্কভুক্ত সব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য বৃদ্ধি করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য নেপালের সঙ্গেও বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ থাকলেও ভুটান ও নেপালের সঙ্গে নেই। কিন্তু ভারতের সঙ্গে আবার এ দুটো দেশের সড়ক যোগাযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, তাই নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে হলে অবশ্যই ভারতের ভূ-খ- ব্যবহার করতে হবে। এজন্য এই চারদেশের মধ্যে ট্রানজিট চুক্তি করার বিষয়ে কাজ চলছে। আশা করা হচ্ছে খুব দ্রুত এ ধরনের একটি চুক্তি করা যাবে। জানা গেছে, নেপালের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় ও মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করতে একটি খসড়া কার্যপত্র তৈরি করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আগামী ২৮ জানুয়ারি বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটি জরুরী বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। ওই বৈঠকে এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এছাড়া ২০১২-১৩ অর্থবছরে নেপাল থেকে প্রায় ২০০ কোটি টাকার পণ্য আমদানির বিপরীতে সেখানে বাংলাদেশ রফতানি করেছে মাত্র ৫০ কোটি টাকার পণ্য। বাংলাদেশ-নেপালের সঙ্গে ভারতের ৫৪ কিলোমিটার সড়কপথ দিয়ে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হলে দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসত বলে মনে করা হচ্ছে। আর এ সুযোগ কাজে লাগাতে ভারতের সঙ্গে মোটর ভেহিক্যাল ও ট্রানজিট চুক্তির পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মনোজ কুমার রায় জনকণ্ঠকে বলেন, নেপালের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সরকার বরাবরই আন্তরিক। এ কারণে আবার দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। আশা করছি, সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে নেপালে রফতানি বাড়ানো সম্ভব হবে। জানা গেছে, শিল্পের কাঁচামাল, রাসায়নিক উপাদান, তৈরি পোশাক, পাট ও পাটজাত পণ্য এবং খাদ্য ও পানীয়সহ নেপালে বাংলাদেশী পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। পাশাপাশি নেপাল থেকে অনেক শিক্ষার্থী বাংলাদেশে পড়তে চায়। আবার স্থলপথে সরাসরি যোগাযোগ করা গেলে বাংলাদেশ থেকে অনেক পর্যটক যাবে নেপালে। কিন্তু কিছু সমস্যা থাকার কারণেই এই বিপুল সম্ভাবনা বাস্তব রূপ পাচ্ছে না। বাংলাবান্ধা বন্দর থেকে নেপালের দূরত্ব মাত্র ৫৪ কিলোমিটার। স্থলপথে মাত্র ১ ঘণ্টার দূরত্ব। কিন্তু এত স্বল্প দূরত্বে হওয়া সত্ত্বেও দেশটির সঙ্গে স্থলপথে বাংলাদেশের সরাসরি কোনো যোগাযোগ নেই। কারণ মাঝখানে এ ৫৪ কিলোমিটার ভারতীয় ভূ-খ-। ফলে বাংলাদেশ থেকে একটা গাড়ির ব্যাটারি নেপালে রফতানি করতে গড়ে লেগে যাচ্ছে ২৯ দিনের বেশি। এতে খরচও বাড়ছে অস্বাভাবিক হারে । অথচ এই করিডরটা পাড়ি দিতে ঘণ্টা খানেকের বেশি সময় লাগার কথা নয়। বাংলাদেশ ও নেপালের মাঝে ভারতের করিডর ব্যবহার করতে না দেয়ায় বাণিজ্য সম্প্রসারণ করা যাচ্ছে না। তবে এখন ট্রানজিট চুক্তির মাধ্যমে এই সঙ্কট সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
×