ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এবার লভ্যাংশ পাচ্ছেন না ডিএসইর ট্রেকহোল্ডাররা

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ২৭ জানুয়ারি ২০১৫

এবার লভ্যাংশ পাচ্ছেন না  ডিএসইর ট্রেকহোল্ডাররা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ডিমিউচুয়ালাইজেশনের (মালিকানা থেকে প্রশাসন পৃথককরণ) পর প্রথম হিসাব বছরে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ট্রেকহোল্ডাররা লভ্যাংশ পাচ্ছেন না। প্রকৃতপক্ষে ডিএসইর রিজার্ভ বাড়িয়ে কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের কাছে কোম্পানির শেয়ারকে আরও আকর্ষণীয় করতেই এ সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে পরিচালনা পর্ষদ। তাই লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও প্রথম বছরের মুনাফা থেকে লভ্যাংশ পাচ্ছেন না ট্রেকহোল্ডাররা। এছাড়া নগদ লভ্যাংশ দেয়ার মতো পর্যাপ্ত পরিচালন আয়ও হয়নি ডিএসইর। জানা গেছে, ২০১৩ সালের নবেম্বরে স্টক এক্সচেঞ্জ বিন্যস্তকরণের পরবর্তী সাত মাসের আয়-ব্যয়ের হিসাব নিয়ে ২০১৩-১৪ হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে ডিএসইর। এ সময় প্রতিষ্ঠানটির মোট আয় হয়েছে ১৩৫ কোটি টাকা। আর শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) দাঁড়িয়েছে ০.৭৪ টাকা। বাজার পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির আয়ের সিংহভাগই এসেছে সুদ আয় থেকে। বর্তমানে বিভিন্ন ব্যাংকে স্টক এক্সচেঞ্জটির প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার স্থায়ী আমানত (ফিক্সড ডিপোজিট) রয়েছে। ডিমিউচুয়ালাইজেশনের পর লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় ডিএসইর পরিশোধিত মূলধন ৫ লাখ থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৮০৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়, যা দেশের সবচেয়ে বড় পরিশোধিত মূলধনি কোম্পানি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বিরাট অঙ্কের পরিশোধিত মূলধনি কোম্পানিতে রূপান্তরিত হওয়ায় ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়া প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশীয় রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও বিভিন্ন কারণে শেয়ারবাজারের প্রতি আস্থাহীনতায় স্টক এক্সচেঞ্জটিতে শেয়ার লেনদেন অনেক কমে গেছে। এ পরিস্থিতিতে পরিচালন আয় থেকে ব্যয় নির্বাহ করে ট্রেকহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেয়াটা কঠিন হয়ে পড়ছে। ডিএসইর পরিশোধিত মূলধন হিসেবে ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দিতে হলে ন্যূনতম ১৮০ কোটি টাকা প্রয়োজন, যা বর্তমান পরিচালন আয় থেকে নির্বাহ করা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে ডিএসইর এক পরিচালক জানান, প্রথম বছরে আয় হলেও তা লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণের জন্য যথেষ্ট নয়। যদিও এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি। তবে কৌশলগত বিনিয়োগকারীর কাছে স্টক এক্সচেঞ্জের শেয়ার মূল্যকে আকর্ষণীয় করতে রিজার্ভ বড় রাখা প্রয়োজন। এটি হলে ভবিষ্যতে ট্রেকহোল্ডাররা অনেক বেশি লাভবান হবেন। জানা গেছে, বর্তমানে ডিএসইর সিংহভাগ আয় আসছে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকে ১ হাজার কোটি টাকা স্থায়ী আমানত থেকে। ডিএসইর আয়ের অন্যতম উৎস হচ্ছে লেনদেন থেকে প্রাপ্ত ফি। শেয়ারবাজারে লেনদেন বর্তমানে ১০০-২০০ কোটি টাকায় নেমে আসায় কমিশন আয় কমে গেছে ডিএসইর। এর বাইরে স্টক এক্সচেঞ্জটির অন্যতম আয়ের উৎস হচ্ছে কোম্পানির তালিকাভুক্তি ফি। ডিএসইতে চালু হওয়া নতুন লেনদেন ব্যবস্থা চালুর পর হাওলা ফি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে লাগা চার্জও (লেনদেনের ওপর আরোপিত কমিশন) কমিয়ে আনা হয়েছে। শেয়ারের লেনদেন ফি দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ করা হয়। বন্ড মার্কেটের ক্ষেত্রে লেনদেন ফি ট্রেড প্রতি ৫০ টাকা ধার্য করা হয়। দেশের অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জও (সিএসই) লেনদেনের খরচ কমিয়ে আনে। উল্লেখ্য, স্টক এক্সচেঞ্জেস ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন ২০১৩-এর আলোকে সে বছরের ২৯ জুলাই দেশের উভয় শেয়ারবাজার কর্তৃপক্ষ ডিমিউচুয়ালাইজড স্টক এক্সচেঞ্জের মালিকানার ধরন, ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি, নির্বাহীদের দায়িত্ব, সম্পদ বণ্টন বিষয়ক প্রস্তাব বা স্কিম জমা দেয়। একই বছরের সেপ্টেম্বরে মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা পৃথকীকরণে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের ডিমিউচুয়ালাইজেশন স্কিমের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ডিমিউচুয়ালাইজেশনের মাধ্যমে স্টক এক্সচেঞ্জ অলাভজনক থেকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়। রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক থেকে স্টক এক্সচেঞ্জের নিবন্ধন প্রাপ্তির পর নবেম্বরে স্টক এক্সচেঞ্জ গ্যারান্টি দ্বারা সীমাবদ্ধ পাবলিক কোম্পানি থেকে শেয়ার দ্বারা সীমাবদ্ধ পাবলিক কোম্পানিতে রূপান্তর হয়। এর পরই এক্সচেঞ্জ ডিমিউচুয়ালাইজড বলে গন্য হয়। স্টক এক্সচেঞ্জ ডিমিউচুয়ালাইচশেনের পরে ভবিষ্যতে দেশে ডেরিভেটিভস, কমোডিটিজ, ফিউচার এবং অপশন মার্কেট চালু করার লক্ষ্যে সর্বাধুনিক ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যেই নাসডাক ওএমএক্স ও ফ্লেক্সট্রেড সিস্টেম কোম্পানির সহযোগিতায় স্বয়ংক্রিয় অত্যাধুনিক ট্রেডিং সফটওয়্যার ডিএসই এক্সস্ট্রিম আইনেট ম্যাচিং ইঞ্জিন এবং ডিএসই ফ্লেক্স-টিপি চালু হয়েছে। প্রযুক্তি নির্ভর বিভিন্ন সুবিধা সংবলিত নতুন লেনদেন ব্যবস্থা চালুর ফলে শেয়ারের লট প্রথা তুলে দেয়া সম্ভব হয়েছে। এতে অডলট-সংক্রান্ত সমস্যা দূর হয়েছে। নতুন সফটওয়্যার চালুর ফলে ভবিষ্যতে সহজেই ইটিএফ, সুকুকসহ অন্যান্য ইসলামিক সিকিউরিটিজ, ডেরিভেটিভস প্রডাক্টস চালুর উদ্যোগও নেয়া হয়েছে।
×