ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যুক্তরাষ্ট্রের দায় হবে সীমিত

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ২৭ জানুয়ারি ২০১৫

যুক্তরাষ্ট্রের দায় হবে সীমিত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারতের কোন পরমাণু বিদ্যুত কেন্দ্রে দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে মার্কিন উপকরণ সরবরাহকারীদের আইনগত দায় সীমিত করতে সম্মত হয়েছেন। এরূপে ওবামার ভারত সফরকালে মার্কিন শিল্পপতিদের স্বার্থ প্রাধান্য পেল। দুই সরকারপ্রধান ঐ সাফল্যাজনক বোঝাপড়ায় পৌঁছানোর ফলে আমেরিকান কোম্পানিগুলোর জন্য ভারতে পরমাণু বিদ্যুত প্ল্যাট নির্মাণের পথ সুগম হতে পারে। গার্ডিয়ান ও নিউইয়র্ক টাইমস অনলাইনের। মার্কিন কূটনীতিকদের চাপে ভারত সরকার পরমাণু উপকরণ সরবরাহকারীদের দায় সীমিত করতে রাষ্ট্র সমর্থিত এক বীমা স্কিম চালু করতে সম্মত হয়েছে বলে মনে করা হয়। এর ফলে ভারতে আমেরিকার শত শত কোটি ডলার বিনিয়োগের পথ উন্মুক্ত হতে পারে। ভারত ব্যবহৃত পরমাণু জ্বালানি অপসারণ ও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেবে, যাতে তা সন্ত্রাসীদের হাতে পড়ার ঝুঁকি হ্রাস পায়। ৩০ বছর আগে মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের ভুপালে ইউনিয়ন কার্বাইডের কারখানা থেকে দুর্ঘটনাবশত রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হলে হাজার হাজার লোকের মৃত্যু হয়। এর পর ভারতের কঠোর ক্ষতিপূরণ আইন দেশটির জ্বালানি খাতে পরমাণু উপকরণ রফতানি করতে যুক্তরাষ্ট্রের আশা ভঙ্গ করে দেয়, যদিও ২০০৫ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ বেসামরিক পরমাণু প্রযুক্তি সরবরাহের বিষয়ে ভারতের সঙ্গে এক চুক্তি করেছিলেন। নয়াদিল্লীতে রবিবার ওবামা বলেন, আমাদের বেসামরিক পরমাণু সহযোগিতার পথ রুদ্ধ করে রেখেছে এমন দুটি ইস্যুতে আমরা এক সাফল্যজনক সমঝোতায় পৌঁছেছি। মোদি বলেন, ২০০৫ সালের বেসামরিক পরমাণু চুক্তিই আমাদের রূপান্তরিত বন্ধুত্বের কেন্দ্রবিন্দু। এ বন্ধুত্ব নতুন আস্থা ও অর্থনৈতিক সুুযোগ সৃষ্টি এবং আমাদের বিশুদ্ধ জ্বালানি ব্যবহারের উপায়কে সম্প্রসারিত করেছে। তিনি বলেন, আমরা গত চার মাস ধরে একে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অভিন্ন উদ্দেশে কাজ করে এসেছি। আমি সন্তুষ্ট হয়েছি যে, আমরা আমাদের আইন এবং কারিগরি ও বাণিজ্যিক সম্ভাব্যতার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পরবর্তী পর্যায়ে পৌঁছেছি। তবে ঐ মতৈক্যের বিস্তারিত বিষয় অস্পষ্ট রয়ে গেছে। কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলছেন, তারা ভারতের আইন পরিবর্তন করার প্রয়োজনীয়তা এড়ানোর লক্ষ্যে মতৈক্যের খুঁটিনাটি দিক প্রণয়নের জন্য এখনও কাজ করছেন। ঐ বোঝাপড়া জিই ও ওয়েস্টিং হাউসের মতো আমেরিকান কোম্পানিগুলোকে ভারতের বেসামরিক পরমাণু উন্নয়নে বিনিয়োগ করতে রাজি করতে পারবে কিনা, তা স্পষ্ট নয়। এসব কোম্পানি ভারতকে এর পরমাণু দায় সম্পর্কিত আইন বদলাতে চাপ দিতে এসেছিল, কিন্তু রবিবারের বোঝাপড়ায় এরূপ অহ্বান জানানো হয়নি। কাজেই এ বোঝাপড়া তাদের আইনগত উদ্বেগ দূর করার পক্ষে যথেষ্ট কিনা তা তাদের বিচার করে দেখতে হবে। কিন্তু উভয় সরকারই দীর্ঘদিন থেকে তাদেরকে হতাশার মধ্যে রেখেছে এমন এক বিরোধের নিরসন করতে ইচ্ছুক হওয়ার নতুন করে সম্পর্ক গড়ে তুলতে তাদের পারস্পরিক আগ্রহই প্রকাশ পেয়েছে। ভারতীয় কর্মকর্তারা অবারও আশ্বাস দিয়েছেন যে, পরমাণু দায় সম্পর্কিত তাদের আইনটি আন্তর্জাতিক কনভেনশনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ এবং এটি বিদেশী কোম্পানিগুলোকে এক আমেরিকান কর্মকর্তার ভাষায় ‘বাড়তি নিরাপত্তা’ দেবে। ওবামার সহকারীরা একথা জানান। অধিকন্ত, সব ঝুঁকির বিরুদ্ধে নয়, কোন কোন ঝুঁকির বিরুদ্ধে নিরাপত্তা দিতে সরকার সমর্থিত এক বীমা স্ক্রিমও গঠন করবে ভারত। ওয়েস্টিং হাউস ও জিই হিটাচি নিউক্লিয়ার এনার্জি এ মতৈক্যকে স্বাগত জানিয়েছে, তবে সেটি যথেষ্ট রক্ষাকবচ প্রদান করে কিনা, তা তারা স্পষ্ট করে বলেনি। কোন কোন বিশ্লেষকের মতে, ঐ বোঝাপড়া অস্পষ্ট ও অমীমাংসিত বলে মনে হয়। নয়াদিল্লীর অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের এক নিরাপত্তা বিশ্লেষক অভিজিৎ আয়ার মিত্র বলেন, এটি সুনির্দিষ্ট বিষয়ক নয়, নীতিগত বিষয়ক এক চুক্তি। আমার কাছে এটি আদৌ কোন চুক্তি নয়। আপনারা জানেন, এর অনেকখানিই আত্মপ্রশংসা মাত্র। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং বলেন, একথা ঠিক নয়। আমাকে স্পষ্ট ভাষায় বলতে দিন আমরা এক মতৈক্যে পৌঁছেছি। চুক্তি হয়ে গেছে।
×