মানিক সরকার মানিক, রংপুর ॥ তথাকথিত হরতাল অবরোধে সম্পূর্ণ এক ভিন্নচিত্র এখন রংপুর অঞ্চলে। দিনের বেলা নগর-বন্দর ও গাঁও-গেরামের সড়ক মহাসড়কে হরতাল-অবরোধে দৃশ্যমান কোন পরিবর্তন নেই। পিকেটিং কিংবা উত্তাপহীন সবকিছুই যেন চলছে স্বাভাবিকভাবে। আর রাতের বেলা সেসব সড়কই হয়ে উঠছে সহিংসতায় বীভৎস। জ্বলছে গাড়ি, পুড়ছে মানুষ। দেখছে শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষ আর চোখের জল ফেলছে। এই হচ্ছে হরতাল অবরোধে নগর-বন্দরের চিত্র। কিন্তু এসবে আর চোখ রাখতে কিংবা অভ্যস্ত হতে চাইছে না দেশের শান্তিপ্রিয় সাধারণ জনগণ। তারা নিস্তার আর মুক্তি চাইছে বীভৎস এই অপরাজনীতির বেড়াজাল থেকে।
পর্দার আড়ালে লুকিয়ে থেকে জঙ্গী ওসামা বিন লাদেন কিংবা জাওহারির মতো ইন্টারনেটের মাধ্যমে দেশের ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াগুলোতে হরতাল-অবরোধের একটি প্রেসরিলিজ পাঠিয়েই খালাস হরতাল অবরোধকারীরা। আর টেলিভিশনের স্ক্রলে সেই আহ্বানের সংবাদ দেখেই ইচ্ছার বিরুদ্ধে শুধু জানমালের নিরাপত্তার কথা ভেবে শান্তিপ্রিয় মানুষ পালন করছেন তা। পেট্রোলবোমায় মানুষ পুড়িয়ে মারা আর দেশের সম্পদ ধংস করার লাগাতার এই হরতাল অবরোধে বীতশ্রদ্ধ এখন নগর-বন্দরের শিক্ষিত সচেতন মানুষ ছাড়াও গাঁও-গেরামের আলু আর সরিষার ক্ষেতে কাজ করা কৃষাণ-কৃষাণিরাও। তাদের মুখেও ধিক্কার আর ঘৃণার কথা উচ্চারিত হচ্ছে এখন। সকালে ঘুম থেকে উঠে বাইরে বেরুলে সবার মুখেই একই কথা একই প্রশ্ন; একই উৎকণ্ঠার কথা শোনা যায় আর তা হলো কবে শেষ হবে হরতাল-অবরোধ নামীয় এ অনাচার। মিডিয়ার কাছেই তারা জানতে চায় স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরও ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করা এই নোংরা মানুষগুলোর নোংরামি কর্ম থেকে প্রকৃত কবে মুক্ত হবে তারা!
ঘরে বসে টেলিভিশনের স্ক্রলের মাধ্যমে হরতাল ডেকেই বিপ্লবী দায়িত্ব পালন করছেন বড় কিংবা ছোটমাপের নেতারা। পুলিশী হামলা-মামলা গ্রেফতার আর হয়রানির ভয়ে পিকেটিংয়েও মাঠে নেই কেউই। পালিয়ে বেড়াচ্ছেন নেতা-পাতিনেতারাও। এছাড়া নেই আওয়ামী লীগ কিংবা ১৪ দলেরও হরতালবিরোধী কোন মিছিল সমাবেশ। দেশ এবং মানুষের প্রতি এ সব রাজনীতিকদেরও যেন নেই কোন মমত্ব আর দায়িত্ববোধ। সবকিছুই যেন কেমন গা-সওয়া ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। বরং হরতাল অবরোধ আর নৈরাজ্যবিরোধী মিছিল মানববন্ধন আর সমাবেশ করছে অরাজনৈতিক বিভিন্ন সংগঠন ও সাধারণ মানুষ। স্থানীয় জেলা ও পুলিশ প্রশাসন সন্ত্রাস অরাজকতা আর নৈরাজ্য দূরীকরণে কঠোর ব্যবস্থা নিলেও পালিয়ে থেকেই আচমকা চোরাগোপ্তা হামলা পেট্রোলবোমা ছুড়ে মানুষ মারছে তারা। গত বুধবার রাতে দিনাজপুরের কাহারোলে দুর্বৃত্তের ছোড়া পেট্রোলবোমায় অগ্নিদগ্ধ ট্রাকচালক নীলফামারীর সোহাদিয়া বোচা গ্রামের আব্দুল মালেক (৫০) সোমবার দুপুরে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এছাড়া একই ঘটনায় মৃত্যুর প্রহর গুণছেন ঠাকুরগাঁওয়ের সিংগিয়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম (৪৫)। এ নিয়ে গত কয়েক দিনে শুধু রংপুর আর দিনাজপুরেই পেট্রোলবোমার শিকার হয়ে প্রাণ হারাল ৮ জন। এছাড়াও রংপুর মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে মৃত্যুর প্রহর গুণছেন আরও ৯ অগ্নিদগ্ধ। রবিবার রাতে রংপুরের বিভিন্ন স্থান থেকে বিভিন্ন অভিযোগে জামায়াত-বিএনপির ২০ নেতাকর্মীসহ ৫৯ জনকে গ্রেফতার করেছে রংপুর জেলা পুলিশ। এ নিয়ে গত সপ্তাহখানেক নাশকতাসহ বিভিন্ন অভিযোগে শুধু রংপুর জেলাতেই গ্রেফতার হয়েছে সহস্রাধিক মানুষ।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: