ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

একুশে গ্রন্থমেলায় এবার বরাদ্দ পাচ্ছে ৫২ লিটলম্যাগ স্টল

প্রকাশিত: ০৮:০৯, ২৭ জানুয়ারি ২০১৫

একুশে গ্রন্থমেলায় এবার বরাদ্দ পাচ্ছে ৫২ লিটলম্যাগ স্টল

মনোয়ার হোসেন ॥ পয়লা ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে বাঙালীর মননের অনন্য আয়োজন অমর একুশে গ্রন্থমেলা। ইতোমধ্যে মেলার প্রথমবার যুক্ত হওয়া প্যাভিলিয়নের সঙ্গে চার, তিন, দুই ও এক ইউনিটের স্টল বরাদ্দ চূড়ান্ত হয়েছে। সেই সূত্রে রবিবার বরাদ্দ দেয়া হলো লিটলম্যাগ কর্নারের স্টল। বাংলা একাডেমির বয়ড়াতলায় এই কর্নারে এবার ঠাঁই পেয়েছে ৫২ ছোট পত্রিকার প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। আজ মঙ্গলবার লটারির মাধ্যমে স্টলের বিন্যাসিত স্থান বুঝিয়ে দেয়া হবে। সব মিলিয়ে এবার মেলার আয়োজক বাংলা একাডেমির নিজ আঙিনা ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বসছে ৩ শতাধিক স্টল। এদিকে আসন্ন বইমেলা ঘিরে রাজধানীর ফকিরেরপুল, আরামবাগ, সূত্রাপুর, বাংলাবাজার, শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেট, পাটুয়াটুলী, কাঁটাবনসহ বিভিন্ন এলাকার ছাপাখানায় চলছে অবিরাম কর্মতৎপরতা। রাত-দিন পরিশ্রমে ব্যস্ত বইয়ের প্রকাশনার সঙ্গে সম্পৃক্ত শ্রমিকরা। তুমুল গতিতে চলছে কম্পোজ আর প্রুফ রিডিংয়ের কাজ। কারণ, গ্রন্থমেলার সূচনা দিন থেকে পাঠকের হাতে নতুন বই তুলে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে প্রকাশনা সংস্থাগুলো। তাই সাজসাজ রব বইমেলা ঘিরে। একদিকে লেখকরা যেমন হিমশিম খাচ্ছেন প্রুফ নিয়ে। অন্যদিকে প্রচ্ছদ নিয়েও দারুণ সময় কাটছে প্রচ্ছদশিল্পীদের। বইয়ের মূল অনুষঙ্গ কাগজ ও কালির দোকানেও দেখা গেছে প্রচ- ভিড়। বাংলাবাজার, ফকিরেরপুল, জিন্দাবাহার, শিরীষ দাশ লেন, সূত্রাপুর, ইসলামপুর, বাবুবাজারসহ রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় কাগজ ও কালির দোকানে দেখা গেলো বিরামহীন ব্যস্ততা। আরামবাগের কয়েক বাইন্ডার জানান, সারা বছর কাজের মাত্রা কম থাকলে বইমেলা আসার এক মাস আগে থেকেই শুরু হয় আমাদের বিশাল কর্মযজ্ঞ। অতিরিক্ত লোক নিয়োগ দিয়ে তা সামলানোর চেষ্টা করা হয়। এ প্রসঙ্গে আফজাল নামে এক বাইন্ডার বলেন, সারা বছর অন্য কাজ করি। মেলা উপলক্ষে মানিকগঞ্জ থেকে ঢাকায় চলে আসি। আয় বেশ ভাল। তিন মাসের আয় একমাসে করা যায়। সারা বছর প্রতীক্ষায় থাকি এ সময়টার জন্য। স্টল সজ্জার কর্মযজ্ঞ ॥ স্টল সজ্জার জন্য মেলার দুই অংশ একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দিনরাত কাজ করে চলছেন শ্রমিকরা। দুইদিন আগে প্যাভিলিয়ন ও স্টল বরাদ্দ বুঝে পাওয়ায় এখন স্টল সাজাতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন প্রকাশকরা। প্রথমবারের প্যাভিলিয়ন যারা পেয়েছেন তারাও তাদের প্যাভিলিয়নটি সুন্দরভাবে সাজানোর জন্য নিজেরাই মাঠে নেমে গেছেন। সোমবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অংশে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অন্যপ্রকাশ, কাকলী, অনন্যা, সময় প্রকাশন প্যাভিলিয়ন সজ্জায় তদারকি করছেন স্টল মালিকরা। প্রাথমিকভাবে ইট-সিমেন্টের ঢালাই দিয়ে মেঝে তৈরি করছেন। আজ থেকেই এসব প্যাভিলিয়নে মূল কাঠামো স্থাপনের কাজ শুরু হবে। কথা হয় অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানালেন, ‘প্যাভিলিয়নের জন্য আরও পরিসরে দরকার। মাত্র ৪০০ বর্গফুট দিয়ে স্টল সাজানো যায় না। প্যাভিলিয়ন নির্মাণের ক্ষেত্রে নানাদিক দেখতে হয়। তার মধ্যে অন্যতম হলো পর্যাপ্ত জায়গা ছেড়ে বইয়ের তাক তৈরি, যাতে পাঠক-ক্রেতা স্বচ্ছন্দে ঘুরে-ফিরে বই দেখে কেনাকাটা করতে পারেন। কিন্তু জায়গা কম। হয়ত সেই সুবিধা থাকবে না। তারপরও পাঠকদের সুবিধার জন্য বেশ কিছু উপায় রেখে প্যাভিলিয়ন নির্মাণ করা হচ্ছে। সংস্কৃতিমন্ত্রীর মেলার প্রস্তুতি পরিদর্শন ॥ মেলার সার্বিক প্রস্তুতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ নানা বিষয় খতিয়ে দেখতে সোমবার মেলা প্রাঙ্গণ পরিদর্শন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর । এ সময় একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানসহ প্রকাশকদের মধ্যে মাজহারুল ইসলাম, ফরিদ আহমেদ, সৈয়দ জাকির হোসাইনসহ মেলা কমিটির কয়েক সদস্য উপস্থিত ছিলেন। মেলার চৌহদ্দি ঘুরে দেখেন মন্ত্রী। রাজনৈতিক পরিস্থিতি মেলায় বিঘœ সৃষ্টি করবে না উল্লেখ করে সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন বলেন, একুশে গ্রন্থমেলা এখন জাতীয় বুদ্ধিবৃত্তিক সাংস্কৃতিক উৎসবে পরিণত হয়েছে। তাই এই মেলা সব সময়ই রাজনীতির উর্ধে বিবেচনা করা হয়। এছাড়া বাঙালীর অহংকারে পরিণত হওয়া এই মেলাকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের জন্য আমি সকল রাজনৈতিক দলের সহায়তা কামনা করছি। লিটলম্যাগ কর্নারে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ॥ স্টলের নীতিমালা যথাযথ মেনেও নিজ পত্রিকার নামে স্টল পায়নি এমন কয়েক লিটলম্যাগ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তাদের বক্তব্য, নিয়মানুযায়ী গেল দুই বছর অমর একুশে গ্রন্থমেলায় নিজ পত্রিকার নামে স্টল পেলেও এবার পায়নি। লিটলম্যাগের আওতাবদ্ধ না হয়েও স্বজনপ্রীতি ও ব্যক্তিগত সম্পর্কের রেশ ধরে কোন কোন লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। নিজ নামে বরাদ্দ পাওয়া বিতর্কিত পত্রিকাগুলোর মধ্যে সুন্দরম, অনুপ্রাণন, মত ও পথ, সপ্তবর্ণা এবং কৃষাণ। তাদের ভাষ্য- বাংলা সাহিত্য চর্চা ও বিকাশে লিটলম্যাগ একটি অনন্য আন্দোলন। কোন প্রকার ব্যবসার সঙ্গে এর সম্পৃক্ততা নেই। তবে কেন কোন্ বিবেচনায় যাচ্ছেতাই সিদ্ধান্ত নিয়ে হতাশ করা হচ্ছে। লিটলম্যাগ চত্বরের আহ্বায়ক সরকার আমিন বলেন, মেলা কমিটি নিয়মানুযায়ী যাদের উপযুক্ত মনে করেছে তাদের দিয়েছে, যাদের যোগ্য মনে করেনি তাদের দেয়ন। অবশ্য এ বিষয়ে মেলা কমিটির সদস্য সচিব জালাল আহমেদ জানান, লিগলম্যাগ কর্নার নিয়ে কোন অনিয়মের ঘটনা আমাকে জানায়নি কেউ। এমনকি একাডেমির মহাপরিচালককেও কেউ কিছু জানায়নি। যারা অভিযোগ করছেন তারা আমাদের কাছে এসে কোন অভিযোগ করেননি।
×