ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রাচীন নগরী বিক্রি

প্রকাশিত: ০৩:২৫, ২৮ জানুয়ারি ২০১৫

প্রাচীন নগরী বিক্রি

এটা একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা। জায়গা-জমি-বাড়ি-গাড়ি-স্বর্ণালঙ্কার বা মূল্যবান ধাতব পদার্থের জিনিস বিক্রি হয় এমন খবর আমরা সবাই জানি। কিন্তু এখানে বিক্রি হচ্ছে একটি দেশের এক নগরী। অবিশ্বাস্য মনে হলেও ঘটনা সত্যি। তুরস্কে একটি প্রাচীন নগরী বিক্রির জন্য নিলামে উঠেছে। দাম তোলা হয়েছে ২২ মিলিয়ন তুর্কি লিরা, যার মার্কিন মুদ্রায় প্রায় দশ মিলিয়ন ডলার। তবে এলাকাটিতে নতুন ভবন বানানো যাবে না। বিষয়টি একটি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে বদরুম উপত্যকার উত্তরে প্রতিষ্ঠিত এই নগরীর নাম বার্জিলিয়া। এটি এখন জনপ্রিয় একটি হলিডে স্পট। বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এটি একটি প্রথম সারির পুরাতাত্ত্বিক স্থান, যার সামনে একটি মনোরম লেক রয়েছে। এর কাছেই আছে একটি ছোট্ট গ্রাম। জানা গেছে, নগরীটি থেকে পুরো সাগর ও লেক চোখে পড়ে। এ স্থানটিতে আরও রয়েছে একটি এ্যাম্পিথিয়েটার বা খোলা আকাশের নিচে নাট্যশালা, মন্দির এবং কারুকার্যময় কবরস্থান। ধারণা করা হচ্ছে, এটি যিনি ক্রয় করবেন তাঁকে রুচিশীল ও ধনাঢ্য ব্যক্তি হতে হবে। তবে দেশটির প্রতœতত্ত্ববিদসহ অনেকেই বলছেন সরকারেরই এটি কিনে রাখা উচিত। এতে করে প্রাচীন এ নগরীর সঠিক দেখভাল করা সম্ভব হবে। তাঁদের অভিমত ব্যক্তিগত মালিকানায় থাকলে অনেক সময় পুরাতাত্ত্বিক গবেষণার কাজ ক্ষতি হয়। তুরস্ক একটি প্রাচীন ও প্রতœতত্ত্বসমৃদ্ধ দেশ। এখানে আধুনিকতা এবং ঐতিহ্য পাশাপাশি অবস্থান করে। দেশটির স্থাপত্য সাজসজ্জা ইস্তাম্বুল, ইজমির, কোনিয়া ও আঙ্কারার সাংস্কৃতিক প্রতীক বা চিহ্ন সবাইকে আকৃষ্ট করে। এসব জাতীয় প্রতিষ্ঠান ঐতিহ্যবাহী ও আধুনিক উভয়ভাবে দেশটির মানুষের মধ্যকার সহিঞ্চুতা এবং সহাবস্থানের দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। ইউরোপ ও এশিয়ার ব্যাপক পরিবর্তনের মুখেও আধুনিক তুরস্ক হচ্ছে একটি ধর্মনিরপেক্ষ মুসলিম রাষ্ট্র। যে জাতি তাদের মনোরম সুন্দর প্রাসাদ, চমৎকার চার্চ এবং মনোমুগ্ধকর মসজিদগুলো বাইজেনটাইন রোম, গ্রিক, সেলজুক ওসমানীয় সাম্রাজ্যের ঐতিহ্য শত শত বছর ধরে স্মরণীয় করে রেখেছে, এমন একটি নগরী তার ঐতিহ্য হারাক তা কারও প্রত্যাশা হতে পারে না। কালের আবর্তে বিলুপ্ত হতে চলেছে বিশ্বের অনেক ঐতিহাসিক স্থান ও নিদর্শন। এসব স্থান ও নিদর্শনকে ঘিরে রয়েছে অনেক কাহিনী ও ইতিহাস। এই ধরনের স্থান এবং নিদর্শনের মালিক মূলত হয়ে থাকে রাষ্ট্র। যার সার্বিক তদারকির দায়িত্বে থাকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। তুরস্কের এই প্রাচীন নগরীটি কি কারণে ব্যক্তি মালিকানায় রয়েছে বা বিক্রির প্রক্রিয়া চলছে তা জানা না গেলেও এই ধরনের নিদর্শন সংরক্ষণের দায় রাষ্ট্রের ওপর বর্তায়। যেহেতু এই নগরীটির ক্রেতা রাষ্ট্রও হতে পারবে তাই দেশটির প্রতœতত্ত্ববিদদের পরামর্শ নিয়ে এটি রাষ্ট্রেরই সংরক্ষণ করা উচিত। ইদানীং প্রাচীন ঐতিহ্য সংরক্ষণের কাজটি করে আসছে ইউনেস্কো। তারাও পারে এটির দায়িত্ব নিতে। প্রয়োজনে মূল কাঠামো ঠিক রেখে সংস্কার করে আরও দর্শনীয় স্থান হিসেবে এটি গড়ে তোলা যেতে পারে। যা থেকে আসতে পারে সরকারের প্রচুর রাজস্বও। মানুষের গৌরবময় প্রাচীন ঐতিহ্য অতীত সম্পর্কে ধারণা দেয়। এতে মানুষের জাতীয় চেতনা, জাতীয় বোধ বৃদ্ধি পায়। এগুলো দেশ-বিদেশের পর্যটকদের জন্যও আকর্ষণীয় হয়ে উঠে। এই নগরীটি কার হাতে বা মালিকানায় যাবে তা এখনও নিশ্চিত করে জানা না গেলেও এই নগরীর গৌরববোধ অটুট থাক এই প্রত্যাশা সবার।
×