ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আঞ্চলিক হরতালের ফাঁদে মানুষকে জিম্মি করা হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:২১, ২৮ জানুয়ারি ২০১৫

আঞ্চলিক হরতালের ফাঁদে মানুষকে জিম্মি করা হচ্ছে

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ জনরোষে মাঠে নামতে না পারলেও আত্মগোপনে থেকে একের পর এক আঞ্চলিক হরতাল ডেকে মানুষকে জিম্মি করার চেষ্টা করছে বিএনপি ও জামায়াত-শিবির। কথায় কথায় ‘মুড়ি-মুড়কির’ মতো একের পর হরতালে বিষিয়ে তুলেছে সাধারণ মানুষকে। এসব আঞ্চলিক হরতালের কোন আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিয়ে মোবাইল ফোন, ই-মেইল বেছে নিয়েছে তারা। অনেক সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও হরতালের ঘোষণা দেয়া হচ্ছে। গত ৫ জানুয়ারির পর রাজশাহী অঞ্চলে চলমান অবরোধের মধ্যে অন্তত ১০ দিন হরতালের ডাক দিয়েছে জামায়াত-শিবির ও বিএনপি। মাঠে সাড়া না থাকলেও কথিত হরতাল দিয়ে মানুষকে জিম্মি করার নতুন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে তারা। এসব হরতালে জনজীবনে তেমন প্রভাব না পড়লেও যানবাহন চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কৃষক নির্ধারিত সময়ে তাদের পণ্য গন্তব্যে নিতে পারছে না। মূলত সাধারণ মানুষকে স্থানীয়ভাবে জিম্মি করতেই এখন আঞ্চলিক হরতালের ফাঁদ পেতেছে জামায়াত-শিবির ও বিএনপি। সর্বশেষ মঙ্গলবার গণমাধ্যম কর্মীদের ই-মেইলে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলায় ৪৮ ঘণ্টার হরতাল আহ্বান করে বার্তা পাঠানো হয়েছে। রাজশাহী মহানগর ছাত্রশিবিরের প্রচার সম্পাদক আসাদুজ্জামান সাক্ষরিত ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হলেও তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জে নাশকতা করে পালাতে গিয়ে ট্রাকের নিচে পড়ে শিবির কর্মীর মৃত্যুর ঘটনাকে ‘হত্যাকা-’ দাবি করে এ হরতালের ডাক দেয়া হয়। ই-মেইলে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করে বলা হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ সিটি কলেজ ইসলামি ছাত্রশিবিরের সভাপতি আসাদুল্লাহ তুহিনকে র‌্যাব ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছে। তাই বুধবার সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টার হরতাল আহ্বান করা হয়েছে। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আসাদুজ্জামান উল্লেখ্য করেন, মঙ্গলবার রাজশাহী অঞ্চলের ছাত্রশিবির নেতৃবৃন্দের জরুরী বৈঠকে হরতাল আহ্বানের সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে ছাত্রশিবির রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি পলাতক আশরাফুল আলম ইমন, রাজশাহী মহানগর সভাপতি ডাঃ আনোয়ারুল ইসলাম, বগুড়া শহর শাখার সভাপতি আলাউদ্দিন সোহেলসহ আট জেলার সভাপতিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন বলা হলেও কোথায় কখন বৈঠক হয়েছে তা উল্লেখ করা হয়নি। এর আগে বাস পোড়ানো মামলায় খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করার প্রতিবাদে সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিএনপির রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক হারুন-অর-রশিদ আট জেলায় বুধবার সকাল ৬টা থেকে ২৪ ঘণ্টার হরতাল আহ্বান করে। তবে মাঠে পাওয়া যায়নি তাদের। একই দিনে চারঘাট উপজেলা জামায়াতের আমির ও ভাইস-চেয়ারম্যান নাজমুল হককে গ্রেফতারের প্রতিবাদে রাজশাহী জেলা র্পূব জামায়াতের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জেলায় বুধবার সকাল ৬টা থেকে ২৪ ঘণ্টার হরতালের ডাক দেয়া হয়। এসব হরতাল আহ্বান করা হচ্ছে কোন ইস্যু ছাড়াই। ৫ জানুয়ারির পর রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলে একের পর এক আঞ্চলিক হরতাল আহ্বান করা হলেও মাঠে কোন পিকেটারের হদিস মিলছে না। তারা আত্মগোপনে থেকে দুই একটি চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। এর আগে ইস্যু ছাড়ায়, রাজশাহী, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৬ জানুয়ারি, ১৮ ও ১৯ জানুয়ারি রাজশাহী বিভাগে, ২১ জানুয়ারি রাজশাহীর পুঠিয়ায়, ২২ জানুয়ারি জেলার দুর্গাপুরের হরতাল আহ্বান করা হলেও কোন হরতালেই মানুষের মধ্যে প্রভাব পড়েনি। তবে আঞ্চলিক হরতালের কবলে পড়ে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। তারা অভিযোগ করেন, কথায় কথায় মুড়ি-মুড়কির মতো আঞ্চলিক হরতাল তাদের সর্বশান্ত করছে। গোদাগাড়ীর কৃষক আনোয়ার আজাদ বলেন, আঞ্চলিক হরতালের নামে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে ফেলেছে জামায়াত-শিবির ও বিএনপি। জনরোষে মাঠে নামতে না পেরে তারা এখন আঞ্চলিক হরতালের ফাঁদ বেছে নিয়েছে। এতে দূরের গন্তব্য নয়, এক হাট থেকে অন্য হাটেও মালামাল বহনে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। তিনি এসব হরতালের নামে মানুষকে জিম্মি করার কৌশল রুখে দেয়ার দাবি জানান। রাজশাহী জেলা পুলিশের সিনিয়র একজন কর্মকর্তা জানান, হরতাল অবরোধে কোন সাড়া না পেয়ে আত্মগোপনে থেকে একের পর হরতাল আহ্বান করছে মিডিয়ার মাধ্যমে। মোবাইল ফোন কিংবা ই-মেলের মাধ্যমে ডাকা হরতালের প্রচারের কারণে তারা এখন মাঠে না নেমে মিডিয়াকেই ব্যবহার করছে। এ সব বিষয়ে গনমাধ্যম কর্মীদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান পুলিশের ওই কর্মকর্তা।
×