ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যাত্রাশিল্পে অশ্লীলতা বন্ধে নজরদারি বাড়ানো উচিত ॥ তাপস সরকার

প্রকাশিত: ০৬:২০, ২৯ জানুয়ারি ২০১৫

যাত্রাশিল্পে অশ্লীলতা বন্ধে নজরদারি বাড়ানো উচিত ॥ তাপস সরকার

যাত্রা, মঞ্চ, টিভি ও বেতার নাটকের সাড়া জাগানো অভিনয়শিল্পী তাপস সরকার। অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি ঐতিহ্যবাহী লোকনাট্যগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠালগ্নের আহ্বায়ক পরে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। সংগঠনটির ৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমিতে আজ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে দু’দিনব্যাপী নাট্যোৎসব ও গুণীজন সম্মাননা। উৎসব নিয়ে গুণী এই অভিনয় শিল্পীর সঙ্গে কথা হয়। নাট্যোৎসব সম্পর্কে বলুন.. তাপস সরকার : আমি এ উৎসব উদ্যাপন পর্ষদের আহ্বায়ক। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে আজ বিকেল ৫টায় উৎসবের উদ্বোধন করবেন মঞ্চসারথী আতাউর রহমান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি সংস্কৃতি সচিব ড. রণজিৎ কুমার বিশ্বাস এবং বিশেষ অতিথি থাকবেন বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সভাপতিম-লীর সদস্য ঝুনা চৌধুরী ও সেক্রেটারি জেনারেল আকতারুজ্জামান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমাকে সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। প্রতিবারের মতো এবারের উৎসবেও সংগঠনের পক্ষ থেকে দেশের গুণী নাট্যজন ও সংস্কৃতিকর্মীদের সম্মাননা দেয়া হবে। এরা হলেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, সারা জাকের, লিয়াকত আলী লাকী, এসএম মহসীন, যাত্রানট হাবিব সারোয়ার ও এক্সিম ব্যাংকের এমডি ড.হায়দার আলী মিয়া। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও গুণীজন সম্মাননা অনুষ্ঠানের পর লোকনাট্য দলের পরিবেশনায় মঞ্চায়ন হবে নাটক ‘কঞ্জুস’। উৎসবের শেষ দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় লোকনাট্যগোষ্ঠীর পরিবেশনা এবং আমার নির্দেশিত ‘অসত্যের মহোৎসব বা দিন বদলের পালা’ নাটকের মঞ্চায়ন হবে। লোকনাট্যগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠালগ্ন সম্পর্কে বলুন.. তাপস সরকার : আমি তখন চারণিক নাট্যগোষ্ঠীর স্বত্বাধিকারী। এ যাত্রাদলের নির্দেশক ও কর্ণধার ছিলেন প্রখ্যাত যাত্রানট এবং একুশে পদকপ্রাপ্ত অভিনয় শিল্পী অমলেন্দু বিশ্বাস। সময়টা ছিল ১৯৭৮’র ফেব্রুয়ারি। তখন স্বাধীন বাংলাদেশেও নাট্যচর্চায় বেশ এগিয়ে চলেছে। বাংলাভাষার প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা রেখে আমরা সমমনা কয়েকজন মিলে একত্রিত হয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম নাটক করব। সেই চেতনা থেকে জন্ম হলো লোকনাট্যগোষ্ঠীর। অমলেন্দু দা’কে অনুরোধ করলাম আমাদের প্রথম নাটকের নির্দেশনার দায়িত্ব নিতে। দাদা সানন্দে রাজি হয়ে গেলেন। পুরোদমে মহড়া শেষে মঞ্চায়িত হলো ভৈরবনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের পালা ‘মা-মাটি মানুষ’। ভাল-মন্দ, ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে লোকনাট্যগোষ্ঠী ৩৮তম বছরে পদার্পণ করল। লোকনাট্যগোষ্ঠীর প্রযোজনা নিয়ে বলুন.. তাপস সরকার : আমাদের সংগঠনটি শুধু নাটকই প্রযোজনা করছে না, পাশাপাশি যাত্রাপালাও মঞ্চে নিয়ে এসেছে। ইতোমধ্যে আমরা ১১টি নাটক ও ৯টি যাত্রাপালা প্রযোজনা করেছি। দেশে যাত্রাশিল্পের বর্তমান অবস্থা কেমন? তাপস সরকার : আপনারা হয়ত অবগত আছেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি থেকে যাত্রাদল নিবন্ধনের সময় একটা বিশেষ অঙ্গীকারনামা দিতে হয়েছে যে, পালা মঞ্চায়নের সময় কোন অশ্লীল নৃত্য পরিবেশন করা যাবে না। দেশের ত্রিশ শতাংশ দল এই নিয়ম মানছে বাকি সত্তর শতাংশ মানছে না। তারা যাত্রার নামে অশ্লীল নৃত্য পরিবেশন করে যাত্রাশিল্পকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়ার চেষ্টায় লিপ্ত। যাত্রাশিল্পকে এগিয়ে নিতে করণীয় কি? তাপস সরকার : সরকারের উচিত একটি ভিজিলেন্স টিম গঠন করে যেখানে যাত্রাপালা পরিবেশন করার অনুমতি দেয়া হয়েছে সেখানে নজরদারি বাড়ানো উচিত। আগে স্থানীয়ভাবে কোন স্কুল, কলেজ উন্নয়নে যাত্রাপালা পরিবেশিত হতো এখন সেগুলো তেমন হয় না। মালিকপক্ষেরও সদিচ্ছা নিয়ে যাত্রাশিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখা উচিত। সরকারীভাবে নাটকের দলগুলোর মতো ভাল ভাল যাত্রাদলকেও অনুদান এবং বিদেশে পালা পরিবেশনের সুযোগ দেয়া উচিত। তাহলে যাত্রাশিল্প আবার প্রাণ ফিরে পাবে। যাত্রা নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কি? তাপস সরকার : ইচ্ছে আছে বিভাগীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতা ভিত্তিক যাত্রা পরিবেশনের ব্যবস্থা করা এবং বিজয়ী দলকে ঢাকাতে চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করানো। এ ব্যাপারে সরকারসহ অন্যান্য বেসরকারী প্রতিষ্ঠানেরও সহযোগিতা কামনা করি। -গৌতম পাণ্ডে
×