ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আজহারুলের আপীল

প্রকাশিত: ০৭:৪৭, ২৯ জানুয়ারি ২০১৫

মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আজহারুলের আপীল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম সুপ্রীমকোর্টে আপীল আবেদন করেছেন। ১১৩ যুক্তিতে আজহারকে নির্দোষ দাবি করে ফাঁসির রায় বাতিল করে তাকে খালাস দেয়ার আর্জি জানিয়ে আপীল আবেদনটি দায়ের করেন তার আইনজীবীরা। ৯০ পৃষ্ঠার মূল আপীল আবেদনের সঙ্গে আরও ২৩৪০ পৃষ্ঠা নথিপত্র সংযুক্ত করা হয়েছে এ আবেদনে। বুধবার সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ্যাডভোকেট অন রেকর্ড জয়নাল আবেদিন তুহিন এই আবেদনটি দাখিল করেন। আজহারের আপীল দায়েরের বিষয়টি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন জামায়াত নেতাদের আইনজীবী এ্যাডভোকেট শিশির মোহাম্মদ মনির। এর আগে গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী এটিএম আজহারকে মৃত্যুদ- দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, জোরপূর্বক আটকে রাখা, নির্যাতন ও লুটপাটের পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রংপুর জেলা আলবদর বাহিনীর এই কমান্ডারকে সর্বোচ্চ সাজার রায় দেয় আদালত। আজহারের বিরুদ্ধে রায়ে বলা হয়েছে, রংপুরের কারমাইকেল কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র থাকাকালে আজহার জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের রংপুর শাখার সভাপতি ও ওই জেলার আলবদর বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন। রংপুর ক্যান্টনমেন্টে যাতায়াতের মাধ্যমে তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। আসামি আজহার মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের স্বজন, মুক্তিকামী বাঙালী এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে দিতেন এবং তাদের হত্যা, গণহত্যা, আটক ও নির্যাতনে পরিকল্পনা, ষড়যন্ত্র করে তা বাস্তবায়নে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। এছাড়া রায়ের পর্যবেক্ষণে আজহারের নির্যাতনের শিকার একজন বীরাঙ্গনাকে পুনর্বাসন করতে রাষ্ট্রকে বলেছে ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে নতুন প্রজন্মের কাছে তাদের আত্মত্যাগ তুলে ধরতে পাঠ্যপুস্তকে বীরাঙ্গনাদের বিষয়টি তুলে ধরতেও সুপারিশ করা হয় রায়ে। ওই বীরাঙ্গনাকে ক্ষতিপূরণ দিতে ট্রাইব্যুনালের কাছে দাবি জানিয়েছিল প্রসিকিউশন। আজহারের বিরুদ্ধে ওই বীরাঙ্গনা রাষ্ট্রপক্ষের প্রথম সাক্ষী হিসেবে ক্যামেরা ট্রায়ালে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রংপুর টাউন হলে স্থাপিত পাকিস্তানী ও রাজাকার ক্যাম্পে আজহারের নেতৃত্বে ধর্ষণ ও নির্মম নির্যাতনের শিকার হন তিনি। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রংপুর অঞ্চলে ১২৫৬ ব্যক্তিকে গণহত্যা-হত্যা, ১৭ জনকে অপহরণ, একজনকে ধর্ষণ, ১৩ জনকে আটক, নির্যাতন ও গুরুতর জখম এবং শত শত বাড়িঘরে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের মতো ৯ ধরনের ৬টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয় এটিএম আজহারের বিরুদ্ধে। আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন ১৯৭৩-এর ৩(২)/এ, ৩(২)/সি, ৩(২)/ডি, ৩(২)/জি ও ৩(২)/এইচ এবং ৪/১ ও ৪/২ ধারা অনুসারে এসব অভিযোগ গঠন করা হয়। এসব অভিযোগের মধ্যে ১ নম্বর বাদে বাকি পাঁচটি অভিযোগই প্রমাণিত হয়েছে ট্রাইব্যুনালের রায়ে। সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটির (উর্ধতন নেতৃত্বের দায়) অভিযোগ ছাড়াও তিনি যে আলবদর কমান্ডার ছিলেন তাও প্রমাণিত হয়েছে বলে রায়ে বলা হয়েছে। রায়ে ২ নম্বর (ধাপপাড়া গণহত্যা), ৩ নম্বর (ঝাড়ুয়ারবিল গণহত্যা) এবং ৪ নম্বর (রংপুর কারমাইকেল কলেজের চারজন অধ্যাপক ও একজন অধ্যাপক পতœীকে হত্যা) অভিযোগে মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছে আজাহারকে। এছাড়া ৫ নম্বর অভিযোগে এক নারীকে ধর্ষণ ও পাকিস্তানী সেনাদের ধর্ষণে সহায়তার দায়ে ২৫ বছর ও ৬ নম্বর অভিযোগে নির্যাতনের দায়ে ৫ বছরসহ আরও ৩০ বছরের কারাদ-াদেশ দেয়া হয়েছে এই বদর কমান্ডারকে। তবে ১ নম্বর অভিযোগ (মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ভাসানী (ন্যাপ) নেতা ও রংপুর শহরের বিশিষ্ট আয়কর আইনজীবী এ ওয়াই মাহফুজ আলীসহ ১১ জনকে গণহত্যা) প্রমাণিত না হওয়ায় এ অভিযোগ থেকে খালাস পান আজহার।
×