ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এম.এ. সালেহ

অভিমত ॥ সৃজনশীল পদ্ধতিতে পাঠ

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ৩০ জানুয়ারি ২০১৫

অভিমত ॥ সৃজনশীল পদ্ধতিতে পাঠ

মানুষের জীবনের শিক্ষাকে কীভাবে আরও গভীরভাবে যুক্ত করা যায় সেই ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করতে পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে ব্যাপক গবেষণা, জরিপ, পর্যালোচনা, পুনঃর্বিবেচনা চলছে। বাংলাদেশেও শিক্ষার ক্ষেত্রে নতুন নতুন পদ্ধতি অনুসরণ করছে। পশ্চিমা বিশ্বসহ পৃথিবীর প্রায় সবদেশে এই আশঙ্কা থেকে বেরিয়ে যেতে গতানুগতিকে শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে সরে এসে নতুন এক শিক্ষা পদধতির উন্মোচন করেছেন যেখানে একজন শিক্ষার্থীকে সব বিষয়ে জানার ব্যবস্থাকে নিশ্চিত করতে পারে। এই পদ্ধতির নাম সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতি। এই পদ্ধতির মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী একটি বিষয়ের ওপর সর্বোচ্চ নজর দিতে পারে, পুংখানুপুঙ্খভাবে একটি বিষয়ের গভীরে গিয়ে তা অনুধাবন করতে সে সক্ষম হয়। সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতি তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে আজ পৃথিবীর সব দেশে প্রতিষ্ঠিত মনোবিজ্ঞানী আর শিক্ষাবিদদের ঐকান্তিক গবেষণা আর পর্যালোচনার ফসল হচ্ছে সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতি। এই শিক্ষা পদ্ধতির ফলে একজন শিক্ষার্থীকে কেবল মুখস্থ বিদ্যার ওপর নির্ভরশীল হতে হয় না, তাকে পুরো বিষয়ের ওপর দখল রাখতে হয় অর্থাৎ পুরো বিষয়টি তাকে গভীরভাবে পড়ে আত্মস্থ করতে হয়। এইই আত্মস্থ করার মধ্যদিয়ে শিক্ষার্থীকে বিষয়টিকে মর্মে মর্মে উপলব্ধি করতে হয়- আত্মস্থ ও মর্মোপলব্ধি শিক্ষার্থীকে সমৃদ্ধ করে। শিক্ষার্থীকে ভবিষ্যতে সঠিকভাবে উপযুক্ত করে তুলতে অর্থাৎ বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে তাকে সময়োপযোগী করে তুলতে সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে কিছু সংস্কারের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। শিক্ষাক্ষেত্রে অভিজ্ঞ ও প্রখ্যাত শিক্ষাবিদদের সমন্বয়ে এসব সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে যা বর্তমানে কার্যকরও হচ্ছে। এক্ষেত্রে সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতির ক্ষেত্রে সরকার বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে উন্নত দেশের সঠিক জ্ঞানে সমৃদ্ধ শিক্ষার্থীদের মতো আমাদের শিক্ষার্থীদের মনোজগতকেও সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সমান গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ২০১০ সাল থেকে সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতির আওতায় দেশে সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি চালু হয়েছে। শিক্ষাবিদরা বলছেন, নকল করে পাস করা আর ভোঁতাপাখির মতো পড়া মুখস্থ করার একঘেয়ে নিয়মনীতিকে পরিহার করার লক্ষ্যে এই সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এই পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন চেতনার জন্ম দেবেÑ নীতি নৈতিকতার বিষয়টি স্পষ্ট করবে। ২০১০ সালে এসএসসি পরীক্ষায় প্রথমবারের মতো বাংলা ও ধর্ম বিষয়ে সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি চালু হয়। ২০১১ সালে বাংলা ও ধর্মের সঙ্গে যুক্ত হয় বিজ্ঞান, সাধারণ বিজ্ঞান, ভূগোল, রসায়ন ও ব্যবসায় পরিচিতি বিষয়ে। এরপর ২০১২ সালে এসএসসির পাশাপাশি এইচএসসি পরীক্ষায় প্রথম বাংলায় সৃজনশীল পদ্ধতিতে প্রশ্ন চালু হয়। ২০১৩ সালে বাংলার সঙ্গে যুক্ত হয় রসায়ন, পৌরনীতি, ব্যবসায় নীতি বিষয়ে সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি চালু হয়েছে। ২০১৪ সালে এইচএসসিতে পদার্থবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস, সমাজকল্যাণ, সমাজবিজ্ঞান, হিসাববিজ্ঞান, ব্যবসায় উদ্যোগ ও প্রায়োগিক ব্যবস্থাপনায় এই প্রশ্ন পদ্ধতি প্রয়োগ হয়েছে। মাধ্যমিক স্তরে এ পর্যন্ত ২৫টি বিষয়ে সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি চালু রয়েছে। ২০১৫ সালে গণিত ও উচ্চতর গণিতেও সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সৃজনশীল চিন্তাচেতনা সমৃদ্ধ নাগরিকই সকল ক্ষেত্রে সৃজনশীলতার ছাপ রাখতে পারে। অভিজ্ঞ, সৃজনশীল মনন ও মেধায় সমৃদ্ধ শিক্ষকরা নতুন প্রজন্মকে সৃজনশীল করে। তোমার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে। আমাদের গর্বিত পূর্বসূরি বিজ্ঞানী স্যার জগদীশচন্দ্র বসু, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, গণিতবিদ আর্যভট্ট, রাধানাথ শিকদার, মেঘনাধ সাহা, ড. কুদরত-ই-খুদাসহ বিভিন্ন বিজ্ঞানীরা তাদের স্ব স্ব ক্ষেত্রে অনুসন্ধিৎসু মন আর সৃজনশীল মেধার স্বাক্ষর রেখে বাংলাদেশের সুনাম ও মর্যাদাকে বাড়িয়ে দিয়ে গেছেন। সৃজনশীল পাঠ পদ্ধতি ও প্রশ্ন পদ্ধতিতে শিক্ষকদের একটা বড় ভূমিকা আছে। এ বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) সর্বশেষ জানুয়ারি ও ফেব্র“য়ারি মাসে পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, ঢাকা অঞ্চলে ৬৩ ভাগ শিক্ষক নিজে প্রশ্নে প্রণয়ন করেন। ঢাকা অঞ্চলের মতো দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকরা সৃজনশীল প্রশ্ন করার ক্ষেত্রে সাফল্য দেখাচ্ছেন। বর্তমান সরকার শিক্ষার আলোয় জাতিকে আলোকিত ও উত্তাসিত করার লক্ষ্যে সৃজনশীল পাঠ পদ্ধতির ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করেছে। সনাতন ও সতানুগতিক শিক্ষা পদ্ধতির বাইরে এসে পরিবর্তিত শিক্ষা ব্যবস্থার অর্থাৎ উন্নত ও সহজেই বোধসম্য এমন প্রতি জোর দিয়েছে। আজকের আলোকিত শিক্ষার্থী আগামী দিনের দেশ পরিচালনায় সহায়ক শক্তি হবে এমন প্রত্যাশয় সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতি দেশে অনুসৃত হচ্ছে। এই শিক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে একদিকে যেমন শিক্ষার প্রসার ঘটবে অন্যদিকে জাতীয় শিক্ষার উন্নয়নে গৃহীত পদক্ষেপ শতভাগ সফল হবে। লেখক : গবেষক, প্রাবন্ধিক
×