ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সিলেটে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবলের বর্ণাঢ্য উদ্বোধন;###;বাংলাদেশ -১ মালয়েশিয়া

উদ্বোধনী ম্যাচে বাংলাদেশের পরাজয়ে উৎসব ম্লান

প্রকাশিত: ০৬:২২, ৩০ জানুয়ারি ২০১৫

উদ্বোধনী ম্যাচে বাংলাদেশের পরাজয়ে উৎসব ম্লান

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ অনেক জাঁকজমক সহকারে শুরু হয়েছে বহুল আলোচিত আন্তর্জাতিক ফুটবল আসর ‘বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ।’ ২০ ভরি ওজনের এই সোনার কাপটি নিজেদের করে নিতে এ আসরে অংশ নিচ্ছে ৬ দেশ। সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে গ্রুপ ‘এ’তে টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচটা জয় দিয়েই শুরু করতে চেয়েছিল স্বাগতিক বাংলাদেশ। খেলেছিলও দারুণ। কিন্তু মুহূর্তের এক ভুল। আর তাতেই সর্বনাশ! প্রতিপক্ষ মালয়েশিয়া অনুর্ধ-২৩ জাতীয় ফুটবল দল ৫০ মিনিটে সেই যে গোল করে এগিয়ে যায়, সেই গোল আর শত চেষ্টাতেও শোধ করতে পারেনি স্বাগতিক বাংলাদেশ। ফলে ৯০ মিনিট শেষে তাই ০-১ গোলের হার স্বীকার করেই ভগ্ন মনোরথে ড্রেসিংরুমে ফিরতে হয় মামুনুলবাহিনীকে। বিজয়ী দলের পক্ষে জয়সূচক গোলটি করেন মোহাম্মদ সিয়াজওয়ান। বাংলাদেশকে হারিয়ে শুভসূচনা করল মালয়েশিয়া, যারা এই আসরের প্রথম চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল (১৯৯৬-৯৭ আসরে)। বিফলে গেল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিনের সেই উৎসাহ প্রণোদিত পুরস্কারের ঘোষণা, ‘বাংলাদেশ মালয়েশিয়াকে এই ম্যাচে হারাতে পারলে পুরো দল বোনাস পাবে মোট ৩০ লাখ টাকা।’ ম্যাচ শেষে অনেক ফুটবলপ্রেমীই মন্তব্য করেছেন, ‘সিলেট হচ্ছে বাংলাদেশ দলের জন্য অপয়া মাঠ!’ তাদের পক্ষেও যুক্তিও আছে। ১৯৬৫ সালে তৈরি হওয়া এ স্টেডিয়ামে গত বছরের ২৯ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয় প্রথম কোন ফিফা আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচ। স্মরণকালের সেরা দর্শক-ঢলের সেই ম্যাচে বাংলাদেশ অনুর্ধ-২৩ দল ০-১ ব্যবধানে হেরেছিল নেপাল অনুর্ধ-২৩ দলের কাছে। এবারও সেই একই মাঠ, একই স্কোর, এই দর্শক-জোয়ার। শুধু প্রতিপক্ষ ভিন্ন! বৃহস্পতিবারের ম্যাচ জেতে নিজেদের ‘বৃহস্পতি তুঙ্গে’ নিতে পারল না লোডভিক ডি ক্রুইফের শিষ্যরা। ডাগআউটে ক্রুইফকে দেখা গেছে নিজ দলের খেলোয়াড়দের একের পর এক গোল মিসের মহড়ায় আক্ষেপে পুড়তে। একই অবস্থা ছিল স্টেডিয়ামের গ্যালারি ভর্তি (১৮ হাজার) দর্শক এবং টিভির পর্দায় চোখ রাখা কোটি কোটি ফুটবলপ্রেমীরও। ভাল খেলেও আক্ষেপের হার মেনে নিতে হয়েছে ‘বেঙ্গল টাইগার্স’দের। পক্ষান্তরে বিজয়ের তৃপ্তি নিয়েই মাঠ ছাড়ে ‘মালয় টাইগার’রা। খেলা শুরুর আগে অনুষ্ঠিত হয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। শিল্পীদের মনোহর নাচ-গানে মেতে উঠে সবাই। খেলা শুরুর আগে দু’দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে পরিচিত হন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, বাফুফে সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিন, সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী, সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ, সহ-সভাপতি তাবিথ আউয়াল, টুর্নামেন্টের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তা শেখ মোঃ মারুফ হাসান, যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়সহ আরও অনেকে। এছাড়া ‘কিক-অফ’-এর আগে সিলেটে জন্ম নেয়া জাতীয় হকি দলের সাবেক বিশ্বখ্যাত হকি তারকা জুম্মন লুসাইয়ের সাম্প্রতিক মৃত্যুতে তার স্মরণে স্টেডিয়ামে উপস্থিত সবাই এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। ম্যাচের প্রারম্ভে উভয় দলই সর্তকভাবে খেলা শুরু করে। দু’দলেরই ফর্মেশন ছিল ৪-৩-৩। ২ মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারত মালয়বাহিনী। নাজিরুল বাংলাদেশের বক্সে ঢুকে ডান পায়ের যে জোরালো বাঁকানো শটটি নেন, তা বাংলাদেশ গোলরক্ষক রাসেল মাহমুদ লিটন ঝাঁপিয়ে পড়েও নাগাল পাননি। তবে ভাগ্য ভাল, বলটি অল্পের জন্য পোস্ট ঘেঁষে বাইরে চলে যায়। ৮ মিনিটে নাজিরুলের শট পোস্টে লেগে ফিরে এলে আবারও গোলবঞ্চিত হয় মালয়েশিয়া। পরের মিনিটে আক্রমণ বাংলাদেশের। সোহেল রানার চমৎকার ক্রস পা ছুঁইয়ে গোল করতে ব্যর্থ হন ফরোয়ার্ড জাহিদ হাসান এমিলি। ১৬ মিনিটে ফ্রি কিক থেকে মালয়েশিয়ার এ্যাডামের হেড আবারও বাংলাদেশের গোলপোস্টে লেগে ফিরে আসে। একই মিনিটে কাউন্টার এ্যাটাক থেকে গোল করার সুযোগ নষ্ট করে নতুন নক্সার জার্সি পরে খেলতে নামা বাংলাদেশ। আবারও ক্রস থেকে বলে পা ছুঁইয়ে শট নিতে পারেননি সেই এমিলি! তিনি আবারও ২৪ মিনিটে বক্সের ভেতর বল পেয়ে উঁচু ও লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নিলে আক্ষেপ বাড়ে আরও। ২৮ মিনিটে আবারও বাংলাদেশের বারপোস্টে বল লাগায় সফরকারীরা। এবার শট নেন এ্যাডাম। ৩৪ মিনিটে মালয় ফরোয়ার্ড রিদজুয়ানের জোরালো গড়ানো শট ঝাঁপিয়ে পড়ে আটকে দেন গোলরক্ষক লিটন। ৩৯ মিনিটে বাংলাদেশের সোহেল রানার বাঁ পায়ের দুর্বল শট ধরতে কোন সমস্যা হয়নি মালয় গোলরক্ষক ফারহানের। বিরতির বাঁশি বাজলে গোলশূন্য স্কোরলাইন নিয়ে ড্রেসিংরুমে যায় দু’দল। বিরতির পর বাংলাদেশী দর্শকরা যখনই আশায় ছিলেন এ অর্ধে ঠিকই গোল আদায় করবে বাংলাদেশ, তখনই উল্টো গোল হজম করে বসে বাংলাদেশ! খেলার তখন ৫০ মিনিট। মালয় ফরোয়ার্ড সিয়াজওয়ান বাংলাদেশের ডি-বক্সের বাইরে বল পেয়ে সতীর্থ কাউকে বল পাস দিতে সচেষ্ট ছিলেন। আশপাশে কাউকে না দেখে বল নিয়ে ফাঁকা স্থান দিয়ে ছুটতে ছুটতেই খেয়াল করলেন গোলরক্ষক লিটন নিজ পজিশনে নেইÑ গোলপোস্ট ছেড়ে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছেন। সুযোগটাকে কাজে লাগালেন সিয়াজওয়ান। বল নিয়ে ছুটতে ছুটতে আচমকা বাঁ পায়ের বাঁক খাওয়ানো উঁচু শটে লিটনের মাথার ওপর দিয়ে বল জড়িয়ে দেন জালে (১-০)। লিটন তো বটেই, পুরো বাংলাদেশ দলই হয়ে পড়ে হতভম্ভ! এরপর সমতায় ফিরতে সর্বশক্তিতে চেষ্টা করে বাংলাদেশ। ৫৬, ৬৩, ৭৬, ৭৯, ৮৩ ও ৮৬ মিনিটে ছয়টি আক্রমণ শাণিয়েও ফায়দা লুটতে পারেনি স্বাগতিক দল। ৮৩ মিনিটে বক্সের ভেতর উইঙ্গার জাহিদ হোসেনের ক্রস হেডে বল পেয়ে বদলি ফরোয়ার্ড শাখাওয়াত রনির গড়ানো শট মালয়েশিয়ার গোলপাস্টে লেগে ফেরত এলে গ্যালারিজুড়ে দর্শকদের মাঝে যে হাহাকার ওঠে, ম্যাচ শেষের বাঁশি বাজলে তা আরও ভারিই হয়েছে বরং!
×