ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

খালেদা জিয়ার উদ্দেশে সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানের মহাসমাবেশে শাজাহান খান

জ্বালাও পোড়াও থামান নইলে আপনার অফিস ঘেরাও হবে

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ৩১ জানুয়ারি ২০১৫

জ্বালাও পোড়াও থামান নইলে আপনার অফিস ঘেরাও হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম জিয়াকে গ্রেফতার করে কারারুদ্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন নৌপরিবহনমন্ত্রী ও শ্রমিক, কর্মচারী ও পেশাজীবী মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক শাজাহান খান। তিনি বলেন, আর যাতে কোন মানুষকে পুড়ে মরতে না হয় এজন্য খালদা জিয়াকে গ্রেফতার করতে হবে। ২০ দলীয় জোটের অবরোধ প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ১৪ লাখ এসএসসি পরীক্ষার্থীর দিকে তাকিয়ে বেগম জিয়াকে অবশ্যই হরতাল, অবরোধ প্রত্যাহার করতে হবে। প্রত্যাহার করা না হলে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের পানি ও বিদ্যুতের লাইন কেটে দেয়া হবে। তার কার্যালয় অবরুদ্ধ করা হবে। শুক্রবার বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শ্রমিক, কর্মচারী ও পেশাজীবী মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদ আয়োজিত সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, হরতাল-অবরোধে যেসব গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে সেসব গড়ি নিয়ে গুলশান কার্যালয় ঘেরাও করা হবে। খালেদা জিয়ার জন্য যাঁরা কার্যালয়ে খাবার নিয়ে যান তাঁরাও খাবার নিয়ে যেতে পারবেন না। তিনি ২০ দলীয় জোটকে ‘বিষ’ উল্লেখ করে বলেন, এরা দেশে সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ সৃষ্টি করে পাকিস্তান সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। এর নেতৃত্বে রয়েছেন খালেদা জিয়া। তাদের জ্বালাও পোড়াওয়ের কারণে দেশের সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। ইতোমধ্যে ১৫ শ্রমিক ড্রাইভারকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। ৫৬ জন পোড়ার ক্ষত নিয়ে আর্তনাদ করছে। শিল্প প্রতিষ্ঠান আজ ধ্বংসের মুখে। শিক্ষা ব্যবস্থা হুমকির মুখে। দয়া করে জ্বালাও পোড়াও বন্ধ করুন। না হলে যে আগুনে জ্বলছে দেশ, এই একই আগুনে আপনাকেও জ্বলতে হবে। জ্বালাও পোড়াওয়ের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া পুত্রশোকে শোকাহত। তাঁকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়। অথচ কত পিতা-মাতার কোল তিনি খালি করেছেন। এর বিচার কী হবে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যে আচরণ করেছেন তার জবাব কী দেবেন? সমাবেশে শাজাহান খান হরতাল-অবরোধের নামে পেট্রোলবোমা মেরে, পরিবহন শ্রমিক ও নিরীহ মানুষকে হত্যা, অগ্নিদগ্ধ করা, যানবাহনসহ নানা সম্পদ ধ্বংস করা ও সকল প্রকার নাশকতা, নৈরাজ্যের বিরুদ্বে সকল মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার আহ্বান জানান। তিনি এসব জ্বালাও পোড়ায়েও বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করতে, হরতাল-অবরোধের নামে শ্রমিক-কর্মচারী হত্যা ও যানবাহনে আগুন দেয়ার প্রতিবাদে মহাসমাবেশে চারদিনের কর্মসূচী ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে দেশবাসীর কাছে ১২ দফা আহ্বান তুলে ধরা হয় মহাসমাবেশ থেকে। কর্মসুচী ॥ শ্রমিক, কর্মচারী ও পেশাজীবী মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদ ঘোষিত চার দফা কর্মসূচীর মধ্যে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক ঐক্য পরিষদ আজ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামন্যে যে প্রতীকী বিক্ষোভ কর্মসূচী ঘোষণা করেছে, তার সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করা হয়েছে। ৩ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সব জেলা শহরে শহীদ মিনারে শ্রমিক-কর্মচারীসহ বিভিন্ন পেশার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ, ৫ ফেব্রুয়ারি দুপুর পৌনে একটা থেকে একটা পর্যন্ত সব অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানাবে। একই সময়ে সব ধরনের গাড়ি, লঞ্চ-স্টিমার ও যানবাহন টানা ১৫ মিনিট রাস্তায় দাঁড়িয়ে চলমান হরতাল-অবরোধের প্রতিবাদ জানাবে। এ সময় লঞ্চ, স্টিমার, ফেরি, কার্গো, লাইটারেজ, অয়েল ট্যাঙ্কারসহ সকল নৌযানে এবং রেলগাড়ি ও মালগাড়িসহ সকল প্রকার যানবাহনে হর্ন টানা দুই মিনিট পর্যন্ত বাজিয়ে চলমান অবরোধ ও হরতালের নামে শ্রমিক ও যাত্রীসহ অসংখ্য মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা, নাশকতা ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো হবে। একই দিন ও সময়ে সকল দোকান মালিক ও কর্মচারী নিজ নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে দাঁড়িয়ে পাঁচ মিটিন পর্যন্ত বাঁশি বাজিয়ে প্রতিবাদ করবে। একই সময়ে একটানা ১৫ মিনিট ক্ষেত-খামারে কৃষকরা নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করবে। ৭ ফেব্রুয়ারি সকালে ঢাকায় শ্রমিক-কর্মচারী-পেশাজীবী-মুক্তিযোদ্ধাসহ সব শ্রেণী-পেশার নারী, ছাত্র ও যুব সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে জাতীয় কনভেনশন করবে শ্রমিক, কর্মচারী, পেশাজীবী ও মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদ। এছাড়া দেশবাসীর কাছে সংগঠনের পক্ষ থেকে শাজাহান খান ১০ দফা তুলে ধরেন। এ আহ্বানের মধ্যে রয়েছে আগামীকাল থেকে শুরু হওয়া এসএসসি পরীক্ষার্থীদের যাতে শিক্ষাজীবন ধ্বংস না হয় সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহার করা না হলে প্রশাসনের পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকসহ সব শ্রেণী-পেশার সবাই মিলে পাড়া-মহল্লায় পরীক্ষা কেন্দ্রের স্কুলগুলোতে পাহারার ব্যবস্থা করতে হবে। বোমাবাজদের চিহ্নিত করে তাদের নামের তালিকা প্রশাসনের হাতে তুলে দিতে হবে। বোমাবাজদের জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে হবে। তাদের পুলিশের হাতে সোপর্দ করতে হবে। পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও আনসার জীবনবাজি রেখে বোমাবাজ, জঙ্গী ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। সবাইকে আইনশৃঙ্খল রক্ষাকারী এসব বাহিনীর পাশে দাঁড়িয়ে প্রশাসনকে সহায়তা করতে হবে। বাস ট্রাক, লঞ্চ, স্টিমার, ফেরি, ও রেলগাড়ির অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র খুলে রাখতে হবে, যাতে আগুন জ্বালার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত আগুন নেভানোর কাজ করা যায়। যারা অপরাজনীতি করে, যারা জঙ্গীবাদ, তালেবান, বোমাবাজ, গণতন্ত্রের নামে সন্ত্রাস করে তাদের সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে। ওদের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করতে হবে। রাজনীতির অঙ্গন থেকে বিতাড়িত করতে হবে। শাজাহান খান আহ্বান জানান, দেশে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় সন্ত্রাসীদের কঠোরহস্তে দমনের দাবিতে সকল শ্রেণী-পেশার সংগঠনের পক্ষ থেকে ভিন্ন ভিন্নভাবে মিছিল মিটিং সমাবেশ করতে হবে। সড়ক, নৌ, রেল পরিবহন চলাচল নির্বিঘœ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ও সকল শ্রেণী-পেশার সংগঠনের নেতাকর্মীদের ও সংগঠকদের স্থানীয় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে থাকতে হবে। এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে উর্ধে তুলে ধরতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেনÑ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হেলাল মোর্শেদ খান, ভাইস চেয়ারম্যান ইসমত কাদির গামা, ওসমান আলী, চলচ্চিত্রকার কাজী হায়াৎ, নারী নেত্রী শিরিন আখতার প্রমুখ। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেনÑ আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথ, উপ-প্রচার সম্পাদক অসীম কুমার উকিল প্রমুখ। মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) হেলাল মোর্শেদ খান বলেন, ২০ দলীয় জোটের নৈরাজ্য প্রতিহত করতে মাঠে থাকতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের এই সরকারকে আমাদের ধরে রাখতে হবে। আর যেন বাংলাদেশে কোন রাজাকারের গাড়িতে জাতীয় পতাকা না ওঠে।
×