ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হাতেনাতে ধরা পড়ল হাজারীবাগের ব্যবসায়ী চক্র ॥ জেল-জরিমানা ॥ কারখানা জব্দ

পোল্ট্রি ফিডে বিষাক্ত কেমিক্যাল মিশিয়ে রমরমা বাণিজ্য

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ৩১ জানুয়ারি ২০১৫

পোল্ট্রি ফিডে বিষাক্ত কেমিক্যাল মিশিয়ে রমরমা বাণিজ্য

আজাদ সুলায়মান ॥ বিষাক্ত বাণিজ্য! ক্রোমিয়াম একটি প্রাণঘাতী কেমিক্যাল। এটি মানবদেহের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। এর প্রভাবে ক্যান্সার, টিউমার ও পুরুষত্বহীনতাসহ দুরারোগ্য রোগ বাসা বাঁধে শরীরে। অথচ মুরগি ও মাছের মাধ্যমে এই ভয়াবহ কেমিক্যালের অনুপ্রবেশ ঘটছে মানুষের শরীরে। মাছ-মুরগিকে দ্রুততম সময়ে মোটা তাজা করার জন্য খাওয়ানো হচ্ছে ক্রোমিয়াম দিয়ে তৈরি ফিড। শুধু ঢাকার কয়েকটি অলি গলি নয়, দেশব্যাপী চলছে এমন ক্রোমিয়ামসমৃদ্ধ ফিডের রমরমা ব্যবসা। ইতোমধ্যে বাজারে ছড়িয়ে গেছে ৫০০ টন ক্রোমিয়ামসমৃদ্ধ ফিড। যার বাজার মূল্য দু’কোটি টাকা। এগুলোই দেশের খামারিরা ব্যবহার করছে। যার ভয়ঙ্কর পরিণাম হিসেবে দেখা দিচ্ছে জটিল ব্যাধি। বছরের পর বছর ধরে রাজধানীর হাজারীবাগের একটি চক্র এ বিষাক্ত কেমিক্যালের তৈরি ফিডের রমরমা ব্যবসা-বাণিজ্য করে আসছে। পরিবেশবাদীরা বার বার এ সম্পর্কে জোরালো প্রতিবাদ করলেও হাজারীবাগের প্রভাবশালী এ চক্রটি ছিল ধরা ছোঁয়ার বাইরে। র‌্যাব শুক্রবার এমন একটি কারখানায় সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে হাতেনাতে আটক করে এ চক্রের প্রধান আবুল কালামসহ চার জনকে। তাদের তাৎক্ষণিক জেল জরিমানাও করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদেই বেরিয়ে আসে এ ধরনের বিষাক্ত বাণিজ্যের চাঞ্চল্যকর তথ্য। এ কারখানা থেকেই জব্দ করা হয় ৫০ হাজার কেজি ফিড। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সরকারের এখন করণীয় বাজার থেকে বিষাক্ত এ ফিড প্রত্যাহার করে নেয়া। নইলে জনস্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে মারাত্মক। এর পাশাপাশি সহনীয় মাত্রার ক্রোমিয়ামসমৃদ্ধ ফিড সম্পর্কে জনসাধারণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের পুষ্টি ইউনিটের পরিচালক ড. মোঃ মনিরুল ইসলাম জানান, সব ফিডেই ক্রোমিয়াম থাকে। তবে শরীরের জন্য সহনীয় মাত্রা হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ পিপিএম। কিন্তু ট্যানারির বর্জ্য দিয়ে তৈরি ফিডে দেখা গেছে ৪৭৯১ পিপিএম ক্রোমিয়াম। এটা মানবদেহের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। মাছ-মুরগির মাধ্যমে এ ক্রোমিয়াম মানবদেহে প্রবেশ করছে। আর এ মাত্রার ক্রোমিয়াম প্রবেশ করলে ক্যান্সার (বিশেষত ফুসফুস ক্যান্সার), টিউমার, পাকস্থলী ক্ষুদ্রান্ত্র আলসার, পুরুষত্বহীনতা, অকাল প্রসব, বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম, এ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগের মতো জটিল ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে প্রবল। তাহলে কি বাজারের সব মুরগি, ডিম ও মাছ ক্ষতিকর জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব খামার নয়। যেসব খামারে উন্নতমানের ফিড ব্যবহৃত হয় অর্থাৎ ট্যানারি বর্জ্য ব্যবহৃত হয় না, সেসব খামারে উৎপাদিত মুরগি বা মাছে সহনীয় মাত্রায় ক্রোমিয়াম থাকায় তা ঝুঁকিপূর্ণ নয়। দেশে অনেক মানসম্মত ফিড কারখানা গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের গবেষণায় তা প্রমাণিত হয়েছে। তাই ঢালাওভাবে সব মুরগি ও মাছ ক্ষতিকর তা বলা যাবে না। যাতে সাধারণ মানুষ অতিমাত্রায় উদ্বিগ্ন না হয়ে পড়ে এবং সংশ্লিষ্ট শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা বাঞ্ছনীয়। গুটিকয় অসাধু ব্যবসায়ীর অপতৎপরতা বন্ধ করতে ট্যানারি সংলগ্ন এলাকায় তদারকি বৃদ্ধি করতে হবে। ট্যানারি মালিকগণ যাতে ট্যানারি বর্জ্য (ঝুট) বিক্রি না করে সেটা মনিটর করতে হবে। ট্যানারির বর্জ্য পরিবেশসম্মত উপায়ে ধ্বংস নিশ্চিত করার জন্য র‌্যাবের মতো প্রতিষ্ঠান সার্বক্ষণিক তৎপর থাকতে হবে।
×