ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অভিভাবক, শিক্ষক কর্মচারীদের অবস্থান কর্মসূচী

অবরোধ-হরতাল প্রত্যাহার দাবিতে প্রতীকী অনশন

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ৩১ জানুয়ারি ২০১৫

অবরোধ-হরতাল প্রত্যাহার দাবিতে প্রতীকী অনশন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবিলম্বে অবরোধ ও হরতাল প্রত্যাহারের জোর দাবি জানিয়ে পরীক্ষার্থীদের অভিভাবক ও পরীক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা বলেছেন, দেশের শিক্ষা কার্যক্রম ও পরীক্ষাকে দলীয় বিবেচনা ও কর্মসূচীর উর্ধে রাখতে হবে। স্কুল, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১৮ লাখ পরীক্ষার্থী ও তাদের অর্ধ কোটি অভিভাবক পরীক্ষা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে প্রতিটি মুহূর্ত অতিবাহিত করছেন। দেশের এই পাবলিক পরীক্ষার সঙ্গে সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থা গভীরভাবে সম্পৃক্ত। চলমান অবরোধ ও হরতালে শিক্ষা ব্যবস্থায় অপূরণীয় ক্ষয়ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষাবিদ ও শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলেই অমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। রাজনীতিবিদরা তাদের ছেলেমেয়েদের বাইরের দেশে লেখাপড়া করাচ্ছেন, তাদের নিরাপদ রাখছেন, অথচ আমাদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে নোংরা রাজনীতি করছেন। এই কোমলমতি শিশুদের রাজনীতির শিকার করবেন না। এই নোংরা রাজনীতির ফলাফল অশুভ কোন বার্তা বয়ে আনতে পারে, তা কোন রাজনীতিবিদের জন্যেই মঙ্গলজনক হবে না। রাজনৈতিক নেতৃবর্গের ছেলেমেয়েরাও অসন্ন এসএসসি পরীক্ষার পরীক্ষার্থী। তাই এইসব কোমলমতি শিশুদের ভবিষ্যত বিবেচনা করে অবিলম্বে পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে হরতাল অবরোধ প্রত্যাহারের ঘোষণা দিন। শুক্রবার রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সবুজ চত্বরে জাতীয় শিক্ষক কর্মচারী ফ্রন্টের উদ্যোগে দেশের বৃহত্তম পাবলিক পরীক্ষা এসএসসি সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের জন্য অবিলম্বে অবরোধ ও হরতাল প্রত্যাহারের দাবিতে-পরীক্ষার্থীর অভিভাবক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, পরীক্ষার দায়িত্ব পালনকারী কর্মচারীদের অবস্থান কর্মসূচী ও প্রতীকী অনশনে বক্তারা এসব কথা বলেন। অনশন ও অবস্থান কর্মসূচীতে বক্তারা আরও বলেন, এসএসসি পরীক্ষা অনেকটা উৎসবের মতো। এই পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ ১০ বছরের কাক্সিক্ষত গন্তব্য। আজ সেই গতিপথ রোধ করে দেয়ার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেয়ার কঠিন ষড়যন্ত্র চলছে। শিক্ষা জাতির মেরুদ-। অথচ মূর্খের মত রাজনৈতিক উচ্চাবিলাস হাসিল করতে মেরুদ-ে আঘাত করা হচ্ছে। তা হতে পারে না, তা হতে দেয়া যায় না। নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে ক্ষমতায় যাওয়া যায় না, জনগণ বিচ্ছিন্ন আন্দোলনে চোরাগোপ্তা হামলার মতো পথ বেছে নেয়া ঠিক হয়নি। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত এই স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের রাজনৈতিক আচরণ এমনটি হতে পারে না। জাতীয় শিক্ষক-কর্মচারী ফ্রন্টের প্রধান সমন্বয়ক অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ বলেন, আমাদের এই কর্মসূচী খুব জরুরীভিত্তিতে দেয়া হয়েছে । মূলত অনশন ও কর্মসূচীতে বসতে বাধ্য হয়েছি বা বাধ্য করা হয়েছে। আমাদের আশা ছিল অতীতের মতো পাবলিক পরীক্ষাকে রাজনৈতিক কর্মসূচীর বাইরে রাখা হবে। আমরা ভেবেছিলাম পরীক্ষার বেশ কয়েকদিন আগেই অবরোধ-হরতাল প্রত্যাহারের ঘোষণা আসবে; কিন্তু তা হয়নি। দেশের কোমলমতি শিশুসহ আমরা আজ তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছি। দয়া করে মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলবেন না। কোমলমতি এই পরীক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে আল্লার ওয়াস্তে এই হরতাল অবরোধ তুলে নিন। এই দেশ আমরা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জন করেছি, দয়া করে পরাধীন দেশের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচী পালন করবেন না। মনে রাখা উচিত, যারা পরীক্ষার্থী তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ সকল দলমতে বিশ্বাসী রাজনৈতিক নেতাদের ছেলেমেয়েরাও আছেন। শিক্ষক এসএম আজিজুর রহমান বলেন, এসএসসি পরীক্ষা অনেকটা উৎসবের মতো। এই পরীক্ষার সময় দেশে আনন্দঘন এক পরিবেশের সৃষ্টি হতো। ছেলেমেয়েরা নতুন জামা কাপড় পরে কেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষা দিতো। কিন্তু দেশে এখন নোংরা রাজনীতির নামে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। জাতিকে মেধাশূন্য করা, মেরুদ- পঙ্গু করে দেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। তা হতে দেয়া যাবে না। আমাদের এই নিরাপত্তা হননের অধিকার কে দিয়েছে আপনাদের? অভিভাবক অনিন্দিতা রায় বলেন, আমার বড় মেয়ে পরীক্ষা দিবে। পরীক্ষা হবে কী হবে না, হলে আদৌ কিভাবে হবে? দুটি বছর বহুকষ্টে অনেক মেধা ও শ্রম দিয়ে মেয়েটি প্রস্তুতি নিয়েছে। শেষ সময়ে এসে দেশের এই পরিস্থিতিতে আশঙ্কা ও উৎকন্ঠায় মেয়েটি প্রস্ততিতে মনোযোগ হারাতে বসেছে। তারা জানে না কিভাবে পরীক্ষা দিবে? মেয়েকে পরীক্ষার হলে পাঠালে সে যদি অগ্নিদগ্ধ হয়; কিভাবে তা সহ্য করব? চোখ ছলছল করে উঠে, কান্না চলে আসে। আবার পরীক্ষায় না পাঠালে মেয়েটির ভবিষ্যতে নেমে আসবে এক ঘোরতর অন্ধকার। তখন তার দায়ভার কে নেবে? এসএসসি পরীক্ষা অনেকটা উৎসবের মতো। আর এই উৎসবের সময় ছেলে-মেয়েরা এখন হতাশ। রাজনীতিবিদদের প্রতি অনুরোধ ক্ষমতায় টিকে থাকা কিংবা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্যে আমাদের এই কোমলমতি শিশুদের জিম্মি করবেন না। দয়া করে এই শিশুদের নিয়ে রাজনীতি করবেন না। অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদের সভাপতিত্বে অন্যদের মাঝে বক্তব্য রাখেন মোহম্মদ আজিজুল ইসলাম, অধ্যক্ষ আসাদুল হক, আব্দুর রব মিঞা, ফয়েজ হোসেন, পরিতোষ সরকার প্রমুখ। ওই কর্মসূচীতে আরও উপস্থিত ছিলেন পরীক্ষার্থীদের অভিভাবক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, পরীক্ষার দায়িত্ব পালনকারী শিক্ষক ও কর্মচারী প্রতিনিধিবৃন্দ। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত তাঁদের ওই প্রতীকী অনশন চলে।
×