ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হোতা জামায়াত নেতা গ্রেফতার

খিলগাঁওয়ে যাত্রীবাহী বাসে আগুন, দগ্ধ ৪ বার্ন ইউনিটে ভর্তি

প্রকাশিত: ০৮:৪৫, ৩১ জানুয়ারি ২০১৫

খিলগাঁওয়ে যাত্রীবাহী বাসে আগুন, দগ্ধ ৪ বার্ন ইউনিটে ভর্তি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শুক্রবার রাত নয়টার দিকে রাজধানীর খিলগাঁওয়ে একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়েছে হরতাল সমর্থকরা। এ ঘটনায় মারাত্মক দগ্ধ চার যাত্রীকে ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। যাত্রাবাড়ী থেকে ছেড়ে আসা তুরাগ পরিবহনের বাসটি খিলগাঁও পুরনো পুলিশ ফাঁড়ির সামনে পৌঁছালে যাত্রীবেশী কয়েকজন বাসের পেছন থেকে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুনে বাসের যাত্রীরা দ্রুত নামলেও কয়েকজন মারাত্মক দগ্ধ হন। এরা হলেন মতিঝিল ফটোস্ট্যাট মেশিনের টেকনিশিয়ান রাজু (২০) ও জীবন (২০), অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কনস্টেবল জামাল উদ্দিন (৫৫) ও সোয়েটার কোম্পানির কর্মচারী বেলায়েত খান (২২)। তাঁদের হাত, পা, পিঠ ও মুখ ঝলসে গেছে। এছাড়া জামাল উদ্দিনের স্ত্রী খোদেজা বেগম, তার মেয়ে দীপা ও দীপার ৭ মাসের মেয়ে আয়েশাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাসায় পাঠানো হয়েছে। এছাড়া মিরপুর ১১ নম্বরে ও পলাশী কাঁচাবাজারের সামনে ককটেল বিস্ফোরণে চারজন আহত হয়েছেন। মিরপুরে ককটেল বিস্ফোরণে আহতরা হলো মুনীর (৪২), জীবন (৩০), তপন রায় (২৮), আবু বাশার (৪৫)। তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। একাধিক আহত ব্যক্তি ও পুলিশ জানায়, রাত নয়টার দিকে তুরাগ পরিবহনের বাসটি খিলগাঁও পুরাতন পুলিশ ফাঁড়ির সামনে পৌঁছলে যাত্রীবেশে ওঠা চার-পাঁচ হরতাল সমর্থক পেট্রোল ঢেলে বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। বাসের যাত্রীরা দ্রুত নেমে যান, তবে চারজন দগ্ধ হন। রাতে ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিট গিয়ে দেখা গেছে, দগ্ধ চারজনকে অবজারভেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। দগ্ধ ব্যক্তি ও তাঁদের স্বজনদের আর্তনাদ ও আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে অবজারভেশন ওয়ার্ড। জামালউদ্দিনের শরীরের শতকরা ২০ ভাগ দগ্ধ হয়েছে। বাঁ হাতসহ শরীরের অনেক অংশে ব্যান্ডেজ দেয়া হয়েছে। মুখেও সামান্য ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। তাঁর ছেলে কামরুল হাসান জনকণ্ঠকে জানান, তাঁরা যাত্রাবাড়ী থেকে রামপুরা যাচ্ছিলেন। কিছু বোঝার আগেই পেট্রোলবোমায় জ্বলে ওঠে তুরাগ পরিবহনের বাসটি। জামালউদ্দিনের স্ত্রী খোদেজা খাতুন, তার মেয়ে দীপা এবং দীপার ৭ মাসের কন্যা আয়েশাও বাসে ছিল। তারাও আঘাত পায়। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাদের বাসায় পাঠানো হয়েছে। দুর্বৃত্তদের কঠিন শাস্তি দাবির পাশাপাশি চলমান সহিংসতার শেষ দেখতে চান জামালউদ্দিন। দগ্ধ রাজু আহমেদের শরীরের শতকরা ১৫ ভাগ পুড়ে গেছে। তাঁর চেহারা চেনাই কঠিন হয়ে পড়েছে। পাশে বসে আছেন তাঁর বন্ধু রোমান। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, কাজ শেষে মতিঝিল থেকে তুরাগ পরিবহনের বাসে ওঠেন রাজু। সারাদিন কঠিন পরিশ্রম করেছেন। আর রাতে বোমার আগুনে পুড়ে গেছে তাঁর শরীর। সোয়েটার কোম্পানির কর্মচারী বেলায়েত খানের শরীরের ১২ ভাগ পুড়েছে। তাঁর ভাগ্নে সবুর জানান, মতিঝিলে ফটোস্ট্যাট মেশিনের দোকান রয়েছে মামার। বাড়ি গোপালগঞ্জে। খিলগাঁও থানার এসআই কামরুজ্জামান জানান, বাসচালক ও সহকারীদের ধারণা, দুর্বৃত্তরা আগেই বাসে উঠে আগুন দিয়েছে। হোতা জামায়াত নেতা শামসুর রহমান গ্রেফতার ॥ খিলগাঁওসহ এ এলাকার বোমা হামলা, অগ্নিসংযোগ, নাশকতা ও অরাজকতার মূল পরিকল্পনাকারী ও অর্থের যোগানদাতা জামায়াত নেতা শামসুর রহমানকে মুগদা থেকে আটক করেছে পুলিশ। শুক্রবার রাতে তাকে আটক করা হয়। ডিএমপির মিডিয়ার উপ-পুলিশ কমিশনার মাসুদুর রহমান জানান, শামসুর রহমান বিভিন্ন নাশকতামূলক কাজের সঙ্গে জড়িত। খিলগাঁও, মতিঝিল, সবুজবাগ ও শাহজাহানপুরে তার নেতৃত্বে বিভিন্ন সহিংসতা ঘটেছে। তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা ক্যাম্পাসের ডেপুটি রেজিস্ট্রার। নিজস্ব সোর্সের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে নিশ্চিত হয়েই তাকে আটক করা হয়েছে বলে তিনি জানান। তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। রাজধানীতে আরও তিন বাসে আগুন ॥ শুক্রবার পুরনো ঢাকার তাঁতীবাজার, কাপ্তানবাজার ও গুলিস্তান ওভারব্রিজ এলাকায় তিনটি বাসে আগুন দিয়েছে অবরোধকারীরা। এসব ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। এদিকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে বাসে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তিন যুবককে গ্রেফতার করেছে ঢাকা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা পুলিশকে জানায়, তারা তেঘরিয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক পাভেল মোল্লার নেতৃত্বে ওই হামলা চালায়। জেলা পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান জানান, গত ২০ জানুয়ারি মধ্যরাতে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের রাজেন্দ্রপুর বাজার বাসস্ট্যান্ডে সিরাজদিখান পরিবহন নামে একটি বাসে (ঢাকা মেট্রো-জ ১৪-০৯৫১) পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করা হয়। এতে ঘুমন্ত অবস্থায় বাসের চালক ও হেলপার দগ্ধ হন। এই অভিযোগে তাদের গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের দাবি, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা বাসে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে আগুন দেয়ার কথা স্বীকার করেছে। ফায়ার সার্ভিস কন্ট্রোল রুমের কর্তব্যরত কর্মকর্তা নাজমা আক্তার জনকণ্ঠকে জানান, শুক্রবার বিকেল পৌনে ৩টার দিকে গুলিস্তান হানিফ ফ্লাইওভারের ওপর টোল ঘরের সামনে কমল পরিবহন নামে একটি বাসে আগুন দেয় অবরোধকারীরা। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে কেউ হতাহত হয়নি। পুরনো ঢাকার ওয়ারী থানার ওসি তপন কুমার পাল জানান, বেলা আড়াইটার দিকে আদমজী থেকে গুলিস্তানগামী মদিনা এন্ট্রারপ্রাইজ নামে একটি বাসে আগুন দেয় অবরোধকারীরা। পরে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এর আগে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তাঁতীবাজার মোড়ে ভিক্টর পরিবহন নামে একটি বাসে আগুন দেয় অবরোধকারীরা। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিট ঘটনাস্থলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে বলেন ফায়ার কন্ট্রোল রুমের কর্মকর্তা নাজমা আক্তার। যশোরে ট্রাকে বোমা হামলা ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা কেশবপুর থেকে জানান, শুক্রবার রাত ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে যশোর-সাতক্ষীরা মহাসড়কের কেদারপুর নামক স্থানে একটি ধানবোঝাই ট্রাকে দুর্বৃত্তরা পেট্রোলবোমা মেরে গাড়িটির সামনের অংশে আগুন ধরিয়ে দেয়।এ সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকটি রাস্তার পাশে খাদে পড়ে যায়। এ ঘটনায় চালক আলামিন (২৫) ও হেলপার রাজু গুরুতর আহত হয়েছেন। তাঁদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। সঙ্কট সমাধানে এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় বেগম জিয়ার সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাত হয়েছে ড. কামালের। তবে ’৯১ সালের পর এটাই প্রথম সাক্ষাত। ২২ মিনিটব্যাপী সাক্ষাত শেষে বেরিয়ে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের ড. কামাল বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনকে আমরা শোক জানাতে এসেছি। আমাদের মধ্যে কোন রাজনৈতিক আলাপ হয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল বলেন, সঙ্কট সমাধানে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ আরও অনেকেই আমার সঙ্গে এসেছেন। আমরা চাই দেশে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক অবস্থা ফিরে আসুক। দেশের ১৬ কোটি মানুষও এটাই চায়। ২০ দলীয় জোট ঘোষিত কর্মসূচীতে একাত্মতা প্রকাশ করতে এসেছেনকিনাÑ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা কোকোর অকাল মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করতে এসেছি। খোলা শোক বইতে স্বাক্ষর করেছি। কোন রাজনৈতিক আলোচনা করতে আসিনি। আলোচনার কোন উদ্যোগ আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ আলোচনার উদ্যোগ আছে।
×