ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

এবার ‘মৃত’ নবজাতক দাফনের সময় নড়ে উঠল

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

এবার ‘মৃত’ নবজাতক দাফনের সময় নড়ে উঠল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে একের পর এক অলৌকিক ঘটনা ঘটছে। এবার মৃত ঘোষণার পর কবর দেয়ার সময় জেগে উঠল নবজাতক শিশুপুত্র। দাফনের সময় মৃত নবজাতক হঠাৎ নড়েচড়ে ওঠার পর চমকে ওঠে তার স্বজনরা। ভয়ে আঁতকে ওঠেন সেখানে আগত দর্শনার্থীরা। অনেকে আতঙ্কে চিৎকার দিয়ে ওঠেন। এ কেমন কথা। কিভাবে মৃত শিশু জীবিত হলো। শনিবার বিকেল ৩টার দিকে আজিমপুর কবরস্থানে এ দৃশ্য দেখে সবাই এমনই চমকে ওঠেন। বিষয়টি কবরস্থানে চাউর হয়ে পড়ে। উৎসুক জনতার ভিড় ঠেলে স্থানীয় ছাত্র ও অন্যদের সহায়তায় নবজাতককে আজিমপুর কবরস্থান থেকে পুনরায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। পরে নবজাতককে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। এদিকে শিশুটিকে একনজর দেখার জন্য হাসপাতালে উৎসুক জনতার ভিড় বাড়তে থাকে। পরে আনসার পাহারা বাড়ানো হয়। শুক্রবার রাত ১১টায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ২১২ নম্বর ওয়ার্ডে ভূমিষ্ট হয় শিশুপুত্র। মা সুলতানা আক্তারের কোল আলো করে আসা শিশুটির নাম রাখা হয় সোবহান। শনিবার সকালে সহকারী রেজিস্ট্রার হৃদস্পন্দন ও শ্বাস-প্রশ্বাস পরীক্ষা করে শিশুটিকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এরপর তিনি শিশুটির ডেথ সার্টিফিকেট লেখেন। ডেথ সার্টিফিকেট নম্বর ৬৩৭০/১৮০। ডেথ সার্টিফিকেট লেখার পর আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করার প্রস্তুতি নেয়ার সময়ই নড়ে ওঠে শিশুটি। এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর বিকেলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক নারীকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। এমনকি মৃত্যুর প্রমাণপত্র (ডেথ সার্টিফিকেট) ইস্যু হয়েছিল তার নামে। এ ব্যাপারে ঢামেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, নবজাতক ওয়ার্ড ঘুরে দেখা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আসলে কী ঘটেছিল। তিনি জানান, এ ঘটনায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবিএম জামালকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে পাঁচ দিনের মধ্যেই। মোস্তাফিজুর রহমান আরও জানান, ওই শিশুর ডেথ সার্টিফিকেট লেখার ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। এভাবে ডেথ সার্টিফিকেট দেয়া ঠিক হয়নি। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডের প্রধান অধ্যাপক ডাঃ ফেরদৌসি ইসলাম জানান, শুক্রবার রাত ১০টার দিকে পেটে ছয় মাসের বাচ্চা নিয়ে সুলতানা আক্তার হাসপাতালে ভর্তি হন। ভর্তির দুই ঘণ্টা পর স্বাভাবিকভাবেই বাচ্চা প্রসব করেন সুলতানা। শিশুটি ’প্রিম্যাচিউর’ হওয়ায় ভূমিষ্ট হওয়ার পর শ্বাসকষ্ট ছিল ও হৃদস্পন্দন কম ছিল। সঙ্গে সঙ্গে ২১১ নম্বর ওয়ার্ডের ইনকিউবেটরে রাখা হয়। তিনি জানান, শনিবার সকালে শিশুটির নানি হনুফা বেগম তাকে কোলে নিয়ে দেখতে পান শিশুটির শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক নেই। এরপর ২১২ নম্বর ওয়ার্ডের চিকিৎসককে এটা জানালে তিনি ওয়ার্ডের সহকারী রেজিস্ট্রারকে পরীক্ষা করার নির্দেশ দেন। সহকারী রেজিস্ট্রার হৃদস্পন্দন ও শ্বাস-প্রশ্বাস পরীক্ষা করে শিশুটিকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এরপর তিনি শিশুটির ডেথ সার্টিফিকেট লেখেন। ডেথ সার্টিফিকেট নম্বর ৬৩৭০/১৮০। ডেথ সার্টিফিকেট লেখার পর অভিভাবকরা তাকে দাফনের জন্য আজিমপুর গোরস্তানে নিয়ে গোসল করানোর সময় নড়ে ওঠে নবজাতকটি। পরে নবজাতকে পুনরায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ডাঃ ফেরদৌসি ইসলাম জানান, বর্তমানে ২১১ ওয়ার্ডে ভেন্টিলেটরের মাধ্যমে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস দিয়ে রাখা হয়েছে ওই শিশুকে। তিনি আরও জানান, ভূমিষ্ট হওয়ার পর শুক্রবার রাতে অভিভাবকদের জানানো হয়, শিশুটিকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে (আইসিইউ) রাখতে হবে। কিন্তু ঢামেকে আইসিইউ খালি নেই। ৪০ শতাংশ শিশু ছয় মাসে ভূমিষ্ট হয়। তাদের বাঁচানো খুব কঠিন হয় বলে জানান ডাঃ ফেরদৌসি। নবজাতক শিশুর বাবার নাম জাহাঙ্গীর আলম। তিনি একটি কারখানায় কাজ করেন। কেরানীগঞ্জের চুনকুঠিয়া গ্রামে থাকেন তারা। নবজাতকের বাবা জাহাঙ্গীর আলম জানান, রাত ১০টার দিকে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী সুলতানা আক্তারকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর এক ঘণ্টা পরই পুত্র সন্তানের জনক হন তিনি। নাম রাখেন সোবহান। তাদের প্রথম সন্তানের জন্ম হয় আড়াই বছর আগে। নাম রাখেন জান্নাতুল। জাহাঙ্গীর আলম জানান, সোহবানকে ২১১ নম্বর নবজাতক ওয়ার্ডে রাখা হয়। সেখানে তার নানি হনুফা বেগমের কাছে ছিল সে। শনিবার সকাল ৯টায় সোহবান নড়াচড়া না করলে চিকিৎসককে জানানো হয়। চিকিৎসক পরীক্ষা করে তার ডেথ সার্টিফিকেট লিখে দেন। তিনি জানান, এরপর ভায়রা এজাজ খানকে সঙ্গে নিয়ে শিশু সন্তান সোবহানকে দাফন করার জন্য আজিমপুর কবরস্থানে যান। নিয়ম অনুযায়ী ৫শ’ টাকা দিয়ে বাঁশ ও খলফা নেন। এরপর সোবহানের দাফনের প্রস্তুতি চলছিল। গোসল করানোর সময় সোহবান হঠাৎ নড়াচড়া করতে থাকে। পরে তিনিসহ তার স্বজনরা আঁতকে ওঠেন। আশপাশে যারা ছিলেন তার আঁতকে চিৎকার চেঁচামেচি করে উঠে। পরে তড়িঘড়ি করে শিশু সন্তান সোবহানকে পুনরায় হাসপাতালে নিয়ে আসেন। আজিমপুর কবরস্থানের অফিস সহকারী নুরুল হুদা জানান, শিশুটিকে গোসল করাতে যান কবরস্থানে আকবর, জালাল ও নূরু। গোসল করাতে গেলে নবজাতকটি নড়াচড়া করে ওঠে। এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক নারীকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। এমনকি মৃত্যুর প্রমাণপত্র (ডেথ সার্টিফিকেট) ইস্যু হয়েছিল তার নামে। মরদেহও নিতে এসেছিলেন মর্গের লোকজন। কিন্তু মৃত ঘোষণার সাড়ে তিন ঘণ্টা পর জেগে উঠে ওই নারী। তখন হাসপাতালে আগত রোগী ও দর্শনার্থীরা আতঙ্কে চিৎকার চেঁচামেচি করে। চমকে যান সেখানকার ওয়ার্ড বয়, কর্মচারী ও নার্স।
×