ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঢাবি ইংরেজী বিভাগের পুনর্মিলনী

স্মৃতিঘন সেই ক্যাম্পাস জীবনকে ফিরে দেখা ॥ গপ্প-আড্ডায় কিছুক্ষণ

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

স্মৃতিঘন সেই ক্যাম্পাস জীবনকে ফিরে দেখা ॥ গপ্প-আড্ডায় কিছুক্ষণ

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ সেই টিএসসি, সঙ্গে শীতের পিঠা, ফুচকা, চা, বুড়ো-গুড়ো সবমিলিয়ে আড্ডা গল্প আর গানে গত শুক্রবার বিকেল বেলায় সবাই যেন সেই অতীত জীবনের রঙিন দিনগুলোতে ফিরে গিয়েছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের পুনর্মিলনীতে এসে পুরনোরা মেতেছিলেন ক্যাম্পাস জীবনের স্মৃতি রোমন্থনে। আর বিভিন্ন সেক্টরের নেতৃত্বে থাকা প্রবীণদের সান্নিধ্য পেয়ে উপদযাপনের উল্লাসে মেতেছিলেন নবীন শিক্ষার্থীরা। বিভাগ এল্যামনাই সোসাইটির আয়োজনে প্রতি বছরই এই পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সবুজ চত্বরে অনুষ্ঠিত হওয়া এই অনুষ্ঠানে মিলিত হয়েছিলেন বিভাগটি থেকে পাস করা ৪৭৫ জন সাবেক শিক্ষার্থী। বিকেল চারটা থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও প্রাক্তনরা আসতে শুরু করেন তিনটার পর থেকেই। কিছুক্ষণের মধ্যেই টিএসসির মাঠের মধ্যে সাজানো সারি সারি টেবিল আর চেয়ার হয়ে ওঠে তুমুল আলোচনা আর আড্ডার জায়গা। একই সঙ্গে ক্যামেরা আর মুঠোফোনের সাহায্যে সেই মিলনের দৃশ্যটি যতœ করে ধরে রাখতে দল বেঁধে বিভিন্ন ভঙ্গিতে চলে ছবি তোলা। বিকেল সোয়া পাঁচটা বাজতেই সঞ্চালক যখন অনুষ্ঠান শুরুর জন্য সবাইকে প্যান্ডেলে ডাকলেন, তখন ওই আড্ডা ছেড়ে কেউই উঠে আসতে চাইছিলেন না। প্রয়াত অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীর স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। উদ্বোধনী বক্তব্য দেন বিভাগের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক তাহমিনা আহমেদ। সোসাইটির সভাপতি ওয়াজির সাত্তার এবং সাধারণ সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী তাদের বক্তব্যে সংগঠনের বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা তুলে ধরেন। এরপর স্মৃতিচারণ করতে মঞ্চে আসেন সাংবাদিক সৈয়দ বদরুল আহসান। প্রতিবারের মতো এবারও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে ইংরেজী বিভাগের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণীর মেধাবী শিক্ষার্থীদের পুরস্কৃত করা হয় সোসাইটির পক্ষ থেকে। যাঁরা পুরস্কার বিতরণ করেন, তাঁদের মধ্য ছিলেন এই অনুষ্ঠানের সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ এ্যালামনাই অধ্যাপক আহসানুল হক, যিনি বিভাগটি থেকে ১৯৫৬ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী নেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মজিদসহ অনেকেই ব্যস্ততার ফাঁকে ছুটির এই একটি বিকেল কাটাতে এসেছিলেন পুরনো বন্ধু আর সহপাঠীদের সঙ্গে। এ সময় মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের বলেন, এই একটি অনুষ্ঠানেই বিভাগের বন্ধু-বান্ধব, ছোট-বড় অনেকের সঙ্গে দেখা হয়। এ কারণে এই পুনর্মিলনী তিনি ‘মিস’ করতে চান না। তিনি বলেন, মোটামুটি প্রতি বছরই আমি এখানে আসি। সিভিল সার্ভিসে যারা আছে, তাদের সঙ্গে আমার প্রায়ই দেখা হয়। কিন্তু বাকিদের সঙ্গে এখানেই দেখা হয়। মোশাররাফ হোসাইনের সঙ্গে একই ক্লাসে পড়তেন আব্দুল মজিদ। তিনিও পুনর্মিলনীতে এসেছিলেন কিছুক্ষণের জন্য হলেও জীবনে ফেলে আসা সেই সব দিনে ‘ফেরার লোভে’। তিনি বলেন, দেখতে দেখতে অনেক বছর কেটে গেল। বছরগুলো খুব দ্রুত কাটে। এই অনুষ্ঠান বছরে একবার হলেও মনে হয় এটি খুব অল্পসময়ের মধ্যেই হচ্ছে। বিভাগের কয়েক বছরের সিনিয়র হলেও একই আড্ডায় দেখা যায় সাবেক রাষ্ট্রদূত নাসিমা হায়দারকে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এখানে এলে মনে হয়, এই তো আমার ক্যাম্পাস, আমার বিশ্ববিদ্যালয়। একফাঁকে অনুষ্ঠানে এসে ঘুরে যান র‌্যাবের দায়িত্ব নেয়া বেনজীর আহমদ। তিনিও এই বিভাগের সাবেক ছাত্র। তাঁর সহপাঠী জাহাঙ্গীর হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আমি আর বেনজীর একই স্টাডি সার্কেলে ছিলাম। আজ মনে হয়, এই তো সেদিন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনকে খুব মিস করি। ফাতেমা চৌধুরী এ বিভাগ থেকে পাস করেন ’৯০-এর দশকে। এরপর ব্যারিস্টারি পড়তে চলে গিয়েছিলেন দেশের বাইরে। স্বাভাবিকভাবেই বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগে কিছুটা ভাটা পড়ে। তিনি বলেন, ২০০০ সালে এ্যালামনাই সোসাইটির এই অনুষ্ঠানে প্রথম আসি। সে বছর আমার বন্ধুদের কাউকে পাইনি। এরপর এই অনুষ্ঠানে আসার হার আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পেয়েছে। এবার প্রায় ১০ জন এসেছি। ২০১৩ সালে স্নাতক পর্যায়ে ভাল ফলের স্বীকৃতি হিসেবে এবার মেহেদী করিম সীমান্ত, নুসরাত জাহান ও আনিকা সাবাকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। ২০১২ সালে ইংরেজী সাহিত্যে স্নাতকোত্তর শ্রেণীর শিক্ষার্থীর মধ্যে পুরস্কার পেয়েছেন জয়নাল আবেদীন, শাহাদাত হোসেইন, মোঃ আব্দুল্লাহ আল মোকতাদির ও শেহেরিন আতাউর খান। আর ফলিত ভাষাতত্ত্বের মাস্টার্সে ভালো ফলের পুরস্কার পেয়েছেন তামান্না শারমিন কবির, মোহাম্মদ হুমায়ুন রশিদ ও হুমায়রা ফাতেমা নিজাম। অনুষ্ঠানে গান গেয়ে শোনান হোসনেয়ারা মিরা ও রোমানা ইসলাম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন দ্রাবিড়া আঞ্জুমান হুদা।
×