ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সিডনির মেলব্যাগ ॥ অজয় দাশগুপ্ত

হায় বিএনপি সব ঝুট হালাল নেহি হ্যায়

প্রকাশিত: ০৩:১৮, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

হায় বিএনপি সব ঝুট হালাল  নেহি হ্যায়

নিজেদের দোষ হালাল করার স্বার্থে রাজনীতিতে একটা চালু কথা শুনতে পাই। এখানে নাকি শেষ কথা বলে কিছু নেই। যাদের জীবন আছে তাদের তো অবশ্যই একটা শেষ আছে। এই শেষ নিয়ে দুনিয়ায় আজ কত কা-। শেষের সুরক্ষায় কেউ মানুষ খুন করছে, শেষের টানে কেউ জীবন তুচ্ছ করে মরছে। তারপরও বলে কিনা শেষ নেই। বাংলাদেশে আখেরাত বা শেষের রাজনীতির পুরোধা দল বিএনপি। বলে নেই, আমি কোন লীগের সাপোর্টার নই। মুক্তিযুদ্ধ, অসাম্প্রদায়িকতা আর গণতন্ত্র ছাড়া কোন কিছুতেই শর্তহীন আস্থা নেই আমার। ফলে আমি যুক্তিতর্কে বিশ্বাস করেই বলছি, বিএনপি এ দেশের শেষের রাজনীতিতে ‘অমিত শাহ’ বিতর্কে শেষ পেরেক ঠুকে প্রমাণ করেছে তাদের জনসমর্থনজনিত দেউলিয়াত্ব এখন প্রকাশ্য। কে না জানে ক্ষমতারোহণে বিএনপির বড় এক হাতিয়ার ভারতবিরোধিতা, যেটা এক সময় উগ্র সাম্প্রদায়িকতার কাজ করত। বাংলাদেশের শান্তিকামী ও সহাবস্থানে বিশ্বাসী নিরীহ মানুষের ওপর সে দায় অনেকবার চাপিয়ে দিয়েছে তারা। স্রেফ ক্ষমতায় যাবার জন্য বৃহৎ প্রতিবেশীকে মোকাবেলার পরিবর্তে চামচামি আর দেশে বিভাজন বজায় রাখার দল বিএনপি। জিয়াউর রহমান থেকে যাদু মিয়া বা আজকের লেজুড় সাত খুনের আসামি শফিউল আলম প্রধান। এদের সবার কাজই ভারতবিরোধিতা। ‘একদা ছিল না কম্পিউটার হস্তযুগলে’ ছিল না মোবাইল, আই প্যাড, ফলে সত্যকে মিথ্যা, মিথ্যিাকে সত্য বলা ছিল সহজ। প্রমাণ হতে হতে ঘটনা জুড়িয়ে ঠা-া, ফায়দা যা নেয়ার তাও নেয়া শেষ। এখন আর তা হয় না। হয় না বলে ঢাকার খালেদা জিয়া, চট্টগ্রামের সাকা চৌধুরীদের রাজনীতির ভাগ্যাকাশ ফকফকা। এদের ভারতবিরোধিতা যে কতটা ভ-ামি আর মেকী সেটাই আরও একবার প্রমাণ করল বিএনপি। তাও এমন এক সময়ে যখন তার শিরে সংক্রান্তি। বাংলাদেশের জনগণ কি এত বোকা যে তাদের দিন কে রাত বলে চালান যাবে? তা হলে বাংলাদেশের বিএনপি বা ভারতবিরোধিতার প্রধান দল বিএনপি এই মিথ্যাচার করল কি কারণে? তাঁরা কি ভেবেছিলেন অমিত শাহের নামে গুজব বা কিছু একটা রটিয়ে দিলে সেটা পরখ করা হবে না? এই যদি তাঁদের ভাবনা হয় তাহলে আগামীতে তারা নেতৃত্ব দেবেন কিভাবে? প্রজন্মের পর প্রজন্ম এখন যা বাংলাদেশ দিল্লী তার হাতের মুঠোয়। এখন আর দিল্লীকা লাড্ডু বলে বায়বীয় কিছু নেই। রিজভীরা সেটা ভুলে গেছেন। খালেদা জিয়ার চারপাশে এখন যে অন্ধকার, ক্ষমতা বিতাড়িত মানুষের হতাশা। বিজেপি প্রধানের সঙ্গে মিথ্যা ফোনালাপের ঘোষণা তারই নির্লজ্জ এক উদাহরণ। কি ঘটেছিল বা আদৌ কথা হয়েছিল কিনা সে খবর ভারত ও বাংলাদেশের মিডিয়া খুললেই জানা যাবে। যেটা জানা যাবে না সেটা হচ্ছে কোন দেউলিয়াত্ব বিএনপিকে আজ ঘোর দুশমনের সাহায্য বা কৃপা লাভে এমন পাগল করে তুলেছে। এই মিথ্যাচার বা অমিত শাহ্ গুজব আসলে বিএনপির কষ্ট ও হতাশার ফসল। আমাদের রাজনীতির বড় দুর্ভাগ্য কেউ ঘটনার মূলে বা পরবর্তী ফলাফলে যাবার তোয়াক্কা করে না। সাংবাদিকতাও এখন সে পন্থী। ঘটনার ফেনানো বর্ণনা আর পাবলিককে সত্য মিথ্যার ককটেল খাওয়াতে ব্যস্ত। মূলত: এ ঘটনা একদা জনপ্রিয় এখনও প্রান্তিক পর্যায়ে ভোটের রাজনীতিতে বাক্স উল্টে দেয়ার ক্ষমতা রাখা বিএনপির নেতৃত্বশূন্যতা ও আদর্শহীন প্রভুনির্ভরতার কদর্য বহির্প্রকাশ। আওয়ামী লীগ ক্ষমতারোহণের পর যত ভুল করেছে তার একটিরও ফায়দা নিতে পারেনি তারা। সেতু ভক্ষণ, কালো বিড়াল, বস্তায় টাকার চলাচল, রাস্তায় চাপাতিতে নিহত যুবক, গুম খুনে শীতলক্ষ্যার লাশÑ কিছুই ইস্যু নয় তাদের। তাদের উদ্দেশ্য গদী, গদী অর ক্ষমতার লোভে বিদায়ী রাষ্ট্রদূতের করুণা যাঞ্চা, নোবেল জয়ীর লেজ ধরে বিদেশে লবিং করা, জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে গোপনে ধ্বংসে মতো বিএনপি আজ জনগণের কাছ থেকে অনেক দূরে। এটা কি আসলেই খুব অপ্রত্যাশিত কিছু? সেনা শাসনের দিন শেষ, ক্যান্টমেন্টের বাড়তি খাতির নেই। সকালে ভারতবিরোধিতা, বিকেলে ব্যাঙ্গালুরু বা কলকাতার হোটেলে নিশিযাপন, আমেরিকার চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করে সে দেশে ছেলেমেয়ে রাখার রাজনীতি এক সময় তো মুখথুবড়ে পড়বেই। যে কারণে এখন তলানীতে ছাই থাকলেও দুধমাছি মওদুদরা আর নেই। খালেদা জিয়া ও বিএনপি ভাবছে বিজেপি তাদের উদ্ধার না করলেও এসব গুজবে সরকারী দলের রক্ত হিম হয়ে আসবে। যদি তারা এবার শেষ রক্ষা করতে না পারেন ও তা হবার নয়। কারণ রাজপথে বিএনপি কোনদিনও আওয়ামী শক্তির সঙ্গে মোকাবেলায় পারবে না। জনগণের রাজনীতিতে হাজার হাজার ভুলের পরও এ দল প্রান্তিক পর্যায়ে সংগঠিত। বিএনপি এদিন যে সুবিধা ও অপশক্তির দোয়া ভোগ করেছে সেটাই তার মেরুদ- ভেঙ্গে দিয়েছে। আজ যখন তার সামনে সত্যিকার বিপদ ও দুঃসময় উপস্থিত তখন মিথ্যার ওপর ভর দিয়ে ঘাট পার হবার চেষ্টা করছে তারা। এই মিথ্যা বিপদকে আরও ঘনীভূত করবে। জনগণের যে অংশে তাদের সমর্থন তাদের সংখ্যা বিশাল হলেও নিয়ন্ত্রক নয় তারা। মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তের ভেতর বিজেপি প্রধান অমিত শাহ্ ও আমেরিকান বিবৃতি বিষয়ক ডাহা মিথ্যাচার যে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে তা থেকে উত্তরণের উপায় নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন বা কর্মসূচীতে ফিরে যাওয়া। একে একে সব নাটক যখন বহুল অভিনীত ও পানসে হয়ে উঠবে বিএনপি কি আদৌ তার নিজ নামে বা পুরনো কায়দায় টিকে থাকতে পারবে? তখন অমিত শাহ্ তো কোন ছাড় শাহেন শাহ এসেও বাঁচাতে পারবে না। বিএনপি কি আসলেই নিঃশেষের শেষ প্রান্তে?
×