ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সামাজিক নিরাপত্তায় বড় অঙ্কের সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

সামাজিক নিরাপত্তায় বড় অঙ্কের সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীতে ২ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। দরিদ্র অন্তঃসত্ত্বা মহিলা ও মায়েদের সুনির্দিষ্ট সেবা দিতে এবং স্থানীয় পর্যায়ে কমন ইম্পিøমেন্টেশন প্ল্যাটফর্ম তৈরিতে এ অর্থ ব্যয় করা হবে। ফলে প্রায় ৫ লাখ দরিদ্র গর্ভবতী মহিলা ও শূন্য থেকে ৫ বছর বয়সী সন্তানের মা সরাসরি অর্থ সহায়তার আওতায় আসবে। এ বিষয়ে ইনকাম সাপোর্ট প্রোগ্রাম ফর দ্য পুওরেস্ট শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নিতে যাচ্ছে স্থানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৩৭৭ কোটি ৮০ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংকের সহায়তার বাইরে সরকারী তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে ৩৭ কোটি ৮০ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠেয় সভায় সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা। এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি,পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য শফিকুল আজম জানান, বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে অত্যাবশ্যকীয় সেবা প্যাকেজ কার্যকর ও সমৃদ্ধ সমন্বিত উপজেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে কমিউনিটি পর্যায়ের স্বাস্থ্য সেবা পুনরুজ্জীবিত করা, মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু হ্রাস করা এবং শিশু ও নারীদের পুষ্টি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। তাই এ প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের কাজ করবে স্থানীয় সরকার বিভাগ। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্র জানায়, প্রকল্পটির অনুকূলে ৩০ কোটি মার্কিন ডলার (প্রায় ২৩৪০ কোটি টাকা) ঋণ বিষয়ে সরকার ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে নেগোসিয়েশন সম্পন্ন হয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় এ সংক্রান্ত প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে চুক্তি স্বাক্ষরের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্র জানায়, বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর এক-তৃতীয়াংশ সামাজিক কর্মসূচীর আওতায় রয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে অধিকাংশ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী বাস্তবায়িত হয়ে থাকে। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কাঠামো দুর্বল হওয়ায় নিরাপত্তা কর্মসূচীর সুবিধাদি প্রকৃত দরিদ্রদের মাঝে পৌঁছাচ্ছে না। সামাজিক নিরাপত্তা প্রদানের জন্য উপকারভোগী শনাক্তকরণ, তালিকাভুক্তিকরণ, অর্থ প্রদান এবং অভিযোগ নিষ্পত্তিকরণ ইত্যাদি কার্যক্রম করার জন্য কমন ইম্পিøমেন্টেশন প্লাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করা গেলে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যা দূর হবে। এ প্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার বিভাগ বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় একটি পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। ওই প্রকল্পের ধারাবাহিকতায় প্রস্তাবিত প্রকল্পটি গ্রহণ করা হচ্ছে। দেশের ৭টি জেলার ৪২টি উপজেলার ৪৪৩টি ইউনিয়নের ১ দশমিক ৬ মিলিয়ন পরিবারের প্রায় ৫ লাখ দরিদ্র গর্ভবতী মহিলা ও শূন্য থেকে ৫ বছর বয়সী সন্তানের মায়েদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় নিয়ে আসা হবে। প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে, অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের গর্ভকালীন চারবার স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রেক্ষিতে ২০০ টাকা হারে নগদ ৮০০ টাকা প্রদান করা হবে। শূন্য থেকে ৪২ মাস বয়সী শিশুদের প্রতি মাসে গ্রোথ পরীক্ষার প্রেক্ষিতে ৫০০ টাকা হারে অর্থ প্রদান করা হবে। ২৫ থেকে ৬০ মাস বয়সী শিশুদের প্রতি তিন মাস অন্তর গ্রোথ পরীক্ষার প্রেক্ষিতে প্রতিবার ১০০০ টাকা করে নগদ অর্থ প্রদান করা হবে। অন্তঃসত্ত্বা মহিলা ও মায়েদের জন্য প্রতিমাসে শিশু পুষ্টি ও উন্নত শিক্ষা সংক্রান্ত কর্মশালায় অংশগ্রহণ সাপেক্ষে প্রতিবার ৫০০ টাকা হারে নগদ অর্থ প্রদান করা হবে। এ কর্মসূচীটি যেসব উপজেলায় বাস্তবায়িত হবে সেগুলো হচ্ছে, গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি, গাইবান্ধা সদর, গোবিন্দগঞ্জ, পলাশবাড়ী, সাদুল্লাপুর, সাঘাটা এবং সুন্দরগঞ্জ উপজেলা। কুড়িগ্রাম জেলার ভূরুঙ্গামরী, চর রাজিবপুর, চিলমারী, কুড়িগ্রাম সদর, নাগেশ্বরী, ফুলবাড়ী, রাজারহাট, রৌমারী ও উলিপুর উপজেলা। লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধা উপজেলা। নীলফামারী জেলার জলঢাকা উজেলা। জামালপুর জেলার বক্সীগঞ্জ, দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, জামালপুর সদর, মাদারগঞ্জ, মেলান্দহ এবং সরিষাবাড়ী উপজেলা। ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা, ধোবাউরা, ফুলবাড়ীয়া, গফরগাঁও, গৌরিপুর, হালুয়াঘাট, ঈশ্বরগঞ্জ, ময়মনসিংহ সদর, মুক্তাগাছা, নান্দাইল, ফুলপুর এবং ত্রিশাল উপজেলা। শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী, নকলা, নালিতাবাড়ী, শেরপুর সদর এবং শ্রীবর্দী উপজেলা।
×