ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শেষ পর্যন্ত বাঁচানো গেল না সেই নবজাতককে

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

শেষ পর্যন্ত বাঁচানো  গেল না সেই  নবজাতককে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণার পর দাফনের জন্য গোসল করানোর সময় নড়ে ওঠা সেই নবজাতককে অবশেষে বাঁচানো গেল না। যে ভেন্টিলেটরে রেখে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস দেয়া হচ্ছিল রবিবার বেলা ১১টায় সেখানেই নবজাতকের মৃত্যু হয়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক মুশফিকুর রহমান জানান, শনিবার বিকেল থেকে শিশুটিকে কৃত্রিম উপায়ে শ্বাস-প্রশ্বাস দেয়া হচ্ছিল। সেখানে তার মৃত্যু হয়। শনিবার শিশুটিকে মৃত ঘোষণার পর মৃত্যুসনদ দেয়া এবং দাফনের আগে গোসলের সময় তার নড়ে ওঠার ঘটনাটি গণমাধ্যমের আলোচনার হয়। ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার জন্ম দেয় দেশব্যাপী। এর আগে শুক্রবার রাত ১১টায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ২১২ নম্বর ওয়ার্ডে সুলতানা আক্তারের কোল আলো করে জন্ম নেয় শিশু পুত্রটি। নাম দেয়া হয় সোবহান। শিশুটির বাবা জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, জন্মের পর তার বাচ্চা এতই ছোট ছিল যে তাকে ঠিকমতো কোলেও নেয়া যাচ্ছিল না। শনিবার সকালে সহকারী রেজিস্ট্রার হৃদস্পন্দন ও শ্বাস-প্রশ্বাস পরীক্ষা করে শিশুটিকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এরপর তিনি শিশুটির ডেথ সার্টিফিকেট লেখেন। ডেড সার্টিফিকেট নম্বর ৬৩৭০/১৮০। ডেথ সার্টিফিকেট লেখার পর আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করার প্রস্তুতি নেয়ার সময়ই নড়ে ওঠে শিশুটি। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডের প্রধান ্যাপক ডাঃ ফেরদৌসি ইসলাম সাংবাদিকদেও জানান, শুক্রবার রাত ১০টার দিকে পেটে ছয় মাসের বাচ্চা নিয়ে সুলতানা আক্তার হাসপাতালে ভর্তি হন। ভর্তির দুই ঘণ্টা পর স্বাভাবিকভাবেই বাচ্চা প্রসব করেন সুলতানা। শিশুটি ’প্রিম্যাচিউর’ হওয়ায় ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর শ্বাসকষ্ট ছিল ও হৃদস্পন্দন কম ছিল। সঙ্গে সঙ্গে ২১১ নম্বর ওয়ার্ডের ইনকিউবেটরে রাখা হয়। তিনি জানান, শনিবার সকালে শিশুটির নানি হনুফা বেগম তাঁকে কোলে নিয়ে দেখতে পান শিশুটির শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক নেই। পরে ওই ওয়ার্ডের সহকারী রেজিস্ট্রার হৃদস্পন্দন ও শ্বাস-প্রশ্বাস পরীক্ষা করে শিশুটিকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এরপর তিনি শিশুটির ডেথ সার্টিফিকেট লেখেন। পরে নবজাতককে আজিমপুর কবরস্থানে দাফনের প্রস্তুতির সময় নড়েচড়ে ওঠে। পরে পুনরায় ওই ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়। কিন্তু শিশু প্রিম্যাচিউরড না হওয়া শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক না হওয়া তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করে শেষ রক্ষা করা যায়নি। রবিবার সকালে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবিএম জামালকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটিকে পাঁচ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। শিশুটির বাবা জাহাঙ্গীর কেরানীগঞ্জে একটি ওয়ার্কশপে কাজ করেন। কেরানীগঞ্জের চুনকুঠিয়া গ্রামের থাকেন তাঁরা। গ্রামের বাড়ি বিক্রমপুর-মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজংয়ে। জেরিন নামে তিন বছরের একটি মেয়ে রয়েছে তাদের। নিহত শিশুটি বাবা জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, শনিবার দুপুরে দাফনের সময় মৃত নবজাতক হঠাৎ নড়ে চড়ে ওঠার পর চমকে ওঠে তার স্বজনরা। ভয়ে আঁতকে ওঠে সেখানে আগত দর্শনার্থীরা। অনেকে আতঙ্কে চিৎকার দিয়ে ওঠেন। এ কেমন কথা। কিভাবে মৃত শিশু জীবিত হলো। শনিবার বিকেল ৩টার দিকে আজিমপুর কবরস্থানে এ দৃশ্য দেখে সবাই এমনই চমকে ওঠেন। পরে পুনরায় শিশুটি ঢামেক হাসপাতালে শিশু বিভাগে ভর্তি করা হয়। পরে নবজাতককে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। এদিকে শিশুটিকে একনজর দেখার জন্য হাসপাতালে উৎসুক জনতার ভিড় বাড়তে থাকায় আনসার পাহারা বাড়ানো হয়। এত কিছুর পর শিশুটিকে বাচানো যায়নি।
×