ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘জাপানীদের হত্যার জন্য আইএসকে চড়া মূল্য দিতে হবে’

প্রতিশোধের সঙ্কল্প আবের

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

প্রতিশোধের সঙ্কল্প আবের

জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) হাতে তাঁর দেশের নাগরিকদের নিহত হওয়ার ঘটনার প্রতিশোধ নেয়ার সঙ্কল্প ব্যক্ত করেছেন। দেশটির দীর্ঘদিনের শান্তিবাদী নীতি থেকে সরে গিয়ে আবে সন্ত্রাসীদের চরমমূল্য দিতে বাধ্য করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন। এর আগে গত সপ্তাহে আইএস জঙ্গীরা দ্বিতীয় জাপানী জিম্মিকে হত্যা করার নৃশংস দৃশ্য সম্বলিত ভিডিও প্রচার করে। খবর নিউইয়র্ক টাইমস ও ইয়াহুনিউজের। এরূপ প্রতিশোধ নেয়ার সঙ্কল্প পাশ্চাত্যে সাধারণ ঘটনাই হতে পারে, কারণ সেখানকার নেতারা চরমপন্থী হামলার সম্মুখীন। কিন্তু এরূপ সংকল্প এ সময়ের আগে সংঘাত বিমুখ জাপানে শোনা যায়নি। সাংবাদিক কেনজি গোতো ও আরেক জিম্মি হারুনা ইউকাওয়ার হত্যাকা-ের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশোধ নেয়ার আহ্বান এমনকি সামরিক প্রতিষ্ঠানেও বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। সঙ্কট দীর্ঘকালের এ শান্তিকামী দেশটির নীতি পাল্টে দিতে পারে। গোতোর নৃশংস হত্যকা-ের মধ্য দিয়ে ১২ দিনের জিম্মি সঙ্কটের অবসান ঘটে। এ ঘটনার পর শান্তিকামী ও সমৃদ্ধ দেশ জাপানের জন্য বিশ্ব হঠাৎ করে আরও বেশি বিপজ্জনক স্থানে পরিণত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। অথচ যুক্তরাষ্ট্র ও এর পশ্চিমা মিত্ররা যে ধরনের সহিংসতার সম্মুখীন, জাপান সে ধরনের সহিংসতা থেকে দীর্ঘদিন নিজেকে মুক্ত বলে দেখে এসেছে। এক সাবেক উচ্চপদস্থ জাপানী কূটনীতিক কুনিহিকো মিয়াকে বলেন, এটি জাপানের জন্য ১১ সেপ্টেম্বর। জাপানের সদিচ্ছা ও মহৎ উদ্দেশ্য দেশটিকে বাইরের বিপজ্জনক বিশ্বের হাত থেকে রক্ষা করতে যথেষ্ট- এ দিবাস্বপ্ন ত্যাগ করার সময় এখনই। আমেরিকানরা এ নির্মম সত্যের সম্মুখীন হয়েছে। ফরাসিরা এর সম্মুখীন হয়েছে, আর এখন আমরাও। জাপানের আধুনিক ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে ওই সঙ্কট সৃষ্ট হয়। দু’বছর আগে ক্ষমতায় আসার পর দৃঢ়মনা রক্ষণশীল আবে তার দেশ যাতে নিষ্ক্রিয় শান্তিবাদ ত্যাগ করে বিশ্ব ঘটনাপ্রবাহে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করে, সেই চেষ্টা করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর জাপান শান্তিবাদী সংবিধান গ্রহণ করে। বিশ্লেষক ও সাবেক কূটনীতিকরা বলেন, জাপান বিশ্বের পরিম-লে পা রাখতে আসলেই কতখানি প্রস্তুত, ওইসব নির্মম হত্যাকা-ই এর এক গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হবে। শিনজো আবে সোমবার বলেন, তিনি চান জাপানী সামরিক বাহিনীর বিদেশের জাপানী নাগরিকদের উদ্ধার করার সম্ভাবনা নিয়ে বিতর্ক হোক। এর একদিন আগে আইএস জঙ্গীরা এক জাপানী সাংবাদিকের শিরñেদ করেছে বলে জানায়। তারা সেই সঙ্গে পৃথিবীর কোথায়ও কোন জাপানী নিরাপদ নয় বলে সতর্ক করে দেয়। আবে জঙ্গীদের আবারও নিন্দা করেন। তিনি বলেন, জাপান সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের এক সদস্য হিসেবে এ প্রতিশ্রুতি পালনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং এর নাগরিকদের নিরাপত্তা দেয়ার সামর্থ্য থাকা উচিত। আবে এক পার্লামেন্টারি কমিটিতে বলেন, জাপানী নাগরিকদের নিরাপত্তা অক্ষুণœ রাখা সরকারের দায়িত্ব এবং এক্ষেত্রে আমরাই সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব রয়েছে। তিনি আরও বলেন, তিনি বিপন্ন জাপানীদের উদ্ধার করার কাঠামো নিয়ে আলোচনা করতে চান। ওইসব হত্যাকা-ের পরিপ্রেক্ষিতে জাপানের সেনাবাহিনীকে বিদেশে উদ্ধার তৎপরতা চালানোর অনুমতি দেয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। কিন্তু জাপানের শান্তিবাদী সংবিধান সেই কাজ থেকে সেনাবাহিনীকে বিরত রাখছে। আবে পার্লামেন্টের কমিটিকে বলেন, জাপান আইএসের ওপর মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিমান হামলায় অংশ নিতে বা রসদ সরবরাহও করতে পারে না। আবের প্রতি এবং তার জাপানকে বিশ্বক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের আরও বড় অংশীদারে পরিণত করার চেষ্টার প্রতি জনগণের জোর সমর্থন রয়েছে। জাপান এর প্রতিরক্ষার জন্য এখনও যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল। আগামী সপ্তাহগুলোতে আবে সেনাবাহিনীর ভূমিকা সম্প্রসারণ করতে আইনের পরিবর্তন চাইবেন। যেমন সেনাবাহিনীকে আক্রান্ত কোন বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রকে সাহায্য করার পদক্ষেপ নিতে দেয়া হতে পারে। বর্তমান আইনে সেনাবাহিনী সেই কাজটি করতে পারে না। তবে আবে এ কথাও বলেন, তিনি এখনও জাপানকে বহুলাংশে এক বেসামরিক ভূমিকাতেই সীমাবদ্ধ রাখতে চান। আবে গত সপ্তাহে পার্লামেন্টে বলেন, কোন দেশই সন্ত্রাসবাদ থেকে পুরোপুরি নিরাপদ নয়। আমরা কিভাবে আইএসের প্রভাব রোধ করতে বা সন্ত্রাসবাদের অবসান ঘটাতে পারি? জাপানকে অবশ্যই এ লক্ষ্য অর্জনে ভূমিকা পালন করতে হবে।
×