ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জাগো সম্ভাবনাময়

জাতীয় কবিতা উৎসব শেষ ‘যুগান্তরের আহ্বান’ জানিয়ে

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

জাতীয় কবিতা উৎসব শেষ ‘যুগান্তরের আহ্বান’ জানিয়ে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মূর্ত সৃষ্টিশীলতার আদি অভিব্যক্তি তার বাকবাহিত উচ্চারণ, যার আদি রূপ কবিতা। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ কিংবা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ নানা আন্দোলন-সংগ্রামে হাতিয়ার হয়েছে কবিতা। শৃঙ্খল মুক্তির ডাক দিয়ে ১৯৮৭ সালে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নতুন গতির সঞ্চার করে শুরু হয়েছিল জাতীয় কবিতা উৎসব। সেই থেকে এ উৎসবের আয়োজন করে আসছে জাতীয় কবিতা পরিষদ। চলমান অস্থির সময়ে সম্ভাবনার প্রত্যাশায় জাতীয় কবিতা উৎসব ২০১৫’র সোমবার ছিল সমাপনী দিন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার চত্বরে ‘জাগো সম্ভাবনায় জাগো কবিতায়’ সেøাগানে এ উৎসবের সূচনা হয় রবিবার। এবারের ২৯তম উৎসবটি উৎসর্গ করা হয়েছে বরেণ্য শিক্ষাবিদ অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী ও পথিকৃৎ চিত্রশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীকে। আর ২০১৪ সালের জাতীয় কবিতা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন কবি মোহাম্মদ রফিক। উৎসবের সমাপনী দিন তাঁর হাতে তুলে দেয়া হয় এই পুরস্কার। এদিন সকালে ‘নতুন কবিতা : যুগান্তরের আহ্বান’ শিরোনামের সেমিনার দিয়ে সমাপনী দিনের কার্যক্রম শুরু হয়। বোরহানউদ্দীন খান জাহাঙ্গীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মফিদুল হক, শংকরলাল ভট্টাচার্য, রণজিৎ বিশ্বাস, সুবোধ সরকার ও রফিক উম মুনীর চৌধুরী। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মামুনুর রশীদ। এর পর পরই শুরু হয় ‘বাংলাদেশের কবিতা : ভাবরূপের পালাবদল’ শিরোনামের দ্বিতীয় সেমিনার। এতে সভাপতিত্ব করেন নূহ্ উল আলম লেনিন। এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন রফিক উল্লাহ খান। বক্তব্য রাখেন ভারত থেকে আগত অধ্যাপক আশিস সান্যাল, অধ্যাপক কাজল বন্দ্যোপাধ্যায়, বিশ্বজিৎ ঘোষ, কামাল চৌধুরী, বুলবুল মহলানবীশ ও সৌমিত্র শেখর। সেমিনারে বক্তারা বলেন, রাজনৈতিক অধঃগতির কারণে আমাদের কবিরা আর আগের মতো কবিতাঙ্গনে তাদের ভূমিকা রাখতে পারছেন না। ১৯৭৫ সাল পরবর্তী সময়ে ধর্মান্ধার যে ভয়াবহ রূপ ছিল সেসব ক্ষেত্রে আমাদের কবিদের তেমন আশাব্যঞ্জক সাড়া পাওয়া যায়নি। বক্তারা আরও বলেন এ উৎসবস্থল কোন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মিলনায়তন নয়, উন্মুক্ত মঞ্চ। শুরুর দিকে এটি ছিল টিএসসির সড়কদ্বীপ-রাজপথে। মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে হয়তো কবিতাকে কেউ কেউ তেমন গুরুত্ব দেবেন না কিন্তু বিবেচনা করি, কবিতার যে নতুন পাঠ জাতীয় কবিতা উৎসবের উন্মুক্ত প্রান্তরে সৃষ্ট হয়েছিল, তার বার্তা পৌঁছে গিয়েছিল সারা বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে। জয়ের একটি সরব ভূমিকায় তাই জাতীয় কবিতা উৎসব বিশেষ মান্যতা দাবি করে। ‘জাগো সম্ভাবনায় জাগো কবিতায়’ উৎসবের এ বছরের মর্মবাণী যেন আগামী দিনগুলোকে স্বপ্নবাস্তবতায় পূর্ণ করার অভিপ্রায়। দুপুর থেকে শুরু হয় কবিতা পাঠের আসর। এতে দেশের কবিদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন চীন, ভারত, মালয়েশিয়া, সুইডেন, ডেনমার্ক, যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড ও ইকুয়েডরের কবি ও লেখকরা। সারাদেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা কবিদের স্বরচিত কবিতাপাঠের সঙ্গে উৎসবে বৈচিত্র্য দিয়েছে খ্যাতিমান বাকশিল্পীদের আবৃত্তি, কবিতার গান। কবিতা পাঠের চারটি পর্বে সভাপতিত্ব করেন পর্যায়ক্রমে কবি শিহাব সরকার, বেলাল চৌধুরী, আসাদ চৌধুরী ও নির্মলেন্দু গুণ। কবিতা পাঠের এক পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হয় পুরস্কার প্রদান পর্ব। এতে কবি মোহাম্মদ রফিককে প্রদান করা হয় গত বছরের জাতীয় কবিতা পুরস্কার। সবশেষে কবিতার গান দিয়ে দুই দিনের জাতীয় কবিতা উৎসবের সমাপ্তি হয়।
×