ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাড়ছে পোশাক খাতের ক্ষতি

প্রকাশিত: ০৪:৫৪, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বাড়ছে পোশাক খাতের ক্ষতি

জসিম উদ্দিন ॥ বিএনপি-জামায়াতের চলমান সহিংস অবরোধে কপাল পুড়েছে তৈরি পোশাক কারখানা মালিকদের। প্রতিদিনই বেড়ে চলছে তাদের ক্ষতির পরিমাণ। ইতোমধ্যে ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ৯০ লাখ ১১ হাজার ২৯৮ ডলার। যা দেশী মুদ্রায় প্রায় ১৪৮ কোটি টাকা। তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ বাতিল, মূল্যছাড়, উড়োজাহাজে পণ্য পাঠানো, জাহাজীকরণে বিলম্ব ও নাশকতার কবলে পড়ে এসব ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। গত ১ জানুয়ারি পর্যন্ত বিজিএমইএতে ক্ষতির এই হিসাব পাঠিয়েছে ২৩টি সদস্য কারখানা। বিজিএমইএর সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা নিরাপদে ব্যবসা করতে চাই। এই দাবি নিয়ে আমরা রাস্তায় নেমে মানববন্ধনও করেছি। যদিও এসব আমাদের কাজ নয়। যাদের দায়িত্ব আমাদের নিরাপত্তা দেয়া বা অর্থনীতিকে রক্ষা করে কর্মসূচী দেয়া তাদের দিকে তাকিয়ে আছি। তিনি বলেন, এফবিসিসিআইও কর্মসূচী দিয়েছে সেখানেও বিজিএমইএ সংহতি প্রকাশ করবে। তবে, মনে রাখতে হবে আমাদের ব্যবসা অন্যদের মতো নয়। বিজিএমইএর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, চলমান হরতাল-অবরোধে তৈরি পোশাক কারখানাগুলোর ৯২ লাখ ৯২ হাজার ২৩৬ ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে। ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানকে মূল্যছাড় দেয়ায় ক্ষতি হয়েছে ৫ লাখ ১৫ হাজার ৭৩৩ ডলার। উড়োজাহাজে পণ্য পাঠাতে বাড়তি খরচ পড়েছে ৭ লাখ ৮২ হাজার ৯৬৫ ডলার। নাশকতায় ক্ষয়ক্ষতি ৩৯ লাখ ৩৬ হাজার ১৪৩ ডলার। পণ্য জাহাজীকরণে বিলম্ব বা আটকে আছে ৪৪ লাখ ৯২ হাজার ২২১ ডলারের পণ্য। সব মিলিয়ে চলমান হরতাল-অবরোধে তৈরি পোশাক খাতের মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৯০ লাখ ১১ হাজার ২৯৮ ডলার। যা দেশী মুদ্রায় প্রায় ১৪৮ কোটি টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত কারখানাগুলো হচ্ছে ম্যাগপাই নিটওয়্যার, ম্যাগপাই কম্পোজিট, ক্রিয়েটিভ উলওয়্যার, বেঙ্গল পোশাক, আর্ভা টেক্সটাইল, হাই ফ্যাশন কম্পোজিট, জেডএসবি গার্মেন্টস, করিম টেক্সটাইল, ফ্রেন্ডস স্টাইলওয়্যার, সাসকোটেক্স ও জুলফিকার ফ্যাশন, টি-ডিজাইন সোয়েটার্স, নার সোয়েটার্স, সিনসার নিটওয়্যার, সিনসার সোয়েটার্স, সামিয়া গামেন্টস, আলিফ আউট ওয়্যারস, দ্যা বে সুপার টেক্সটাইল, চেরি নিটওয়্যার, রেডিয়্যান্স জিন্স, রেডিয়্যান্স ফ্যাশন, ডিএস ফ্যাশন এবং রেডিয়াল ইন্টারন্যাশনাল। বিজিএমইএর সহসভাপতি মোঃ শহিদউল্লাহ আজিম বলেন, গত বছর আমারা বুঝে উঠতেই অনেক সময় অতিবাহিত হয়। একারণে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণও অনেক বেশি ছিল। এবার আমরা একদিনের মধ্যেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীর সহয়তা চাই। দ্বিতীয় দিন থেকে পুলিশী প্রহারায় বন্দরে পণ্য পৌঁছানো ও সেখান থেকে কাঁচামাল আনা হচ্ছে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ক্রেতারা অর্ডার দিচ্ছে অনেক কম। এভাবে চলতে থাকলে তা রফতানি আয়ে প্রভাব ফেলবে। এখনও যে কাজ হচ্ছে তা আগের অর্ডার। রফতানি আয়ের ওপর অবরোধের প্রভাব আগামী মার্চ-এপ্রিলে গিয়ে বোঝা যাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি বলেন, রাষ্ট্রের কাছে আমাদের জানার বিষয় হলো যে সব প্রতিষ্ঠান রুগ্ণ শিল্পে পরিণত হচ্ছে। তার তার বন্ডের নিরাপত্তা দেবে কে? এর সুরাহা করবে কে? অবরোধকারী বিরোধী রাজনৈতিক জোটের উদ্দেশে তিনি বলেন, অর্থনীতি বিধ্বস্ত করার কারও অধিকার নেই। অর্থনীতি ধ্বংস করে রাজনীতি না করার অনুরোধ করেন তিনি। শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, এই বছর তৈরি পোশাকখাতের ২৭ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয়ের লক্ষ্য পূরণ করতে হলে দৈনিক ৭ দশমিক ২০ কোটি টাকার পণ্য রফতানি করতে হয়। উল্লেখ্য, ২০০৩ সালে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে পোশাকশিল্প মালিকদের মূল্যছাড় দিতে হয়েছিল নয় হাজার কোটি টাকার পণ্যে। প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার পণ্য বেশি অর্থ দিয়ে উড়োজাহাজে পাঠাতে হয়েছিল। গত ১২ জানুয়ারি টানা অবরোধে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব চেয়ে সদস্যদের কাছে চিঠি পাঠায় বিজিএমইএ। এরপর থেকে ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তথ্য পাঠায় ২৩টি কারখানা।
×