ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জনতা ফুঁসে উঠছে, গুলিস্তান ও মালিবাগে বোমাবাজদের গণধোলাই

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

জনতা ফুঁসে উঠছে, গুলিস্তান ও মালিবাগে বোমাবাজদের গণধোলাই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জামায়াত শিবির, বিএনপি-ছাত্রদলের নাশকতায় দিন দিন ফুঁসে উঠছে জনতা। বাঁচার তাগিদে নিরীহ মানুষই এখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। যেখানেই নাশকতার ছোবল, সেখানেই প্রতিরোধ প্রতিবাদ। আন্দোলনের নামে গত একমাস ধরে বিএনপি-জামায়াত যেভাবে দেশব্যাপী পেট্রোলবোমা ও ককটেল নিক্ষেপ করে নিরীহ লোকজনকে হত্যা করছে, তাতে শান্তিপ্রিয় মানুষের মাঝে দেখা দিচ্ছে প্রচ- ক্ষোভ ও প্রতিশোধাত্মক মনোভাব। মানবতাবিরোধী এহেন পৈশাচিকতায় দিন দিনই বাড়ছে সাধারণ মানুষের প্রতিবাদ, ধিক্কার ও নিন্দার ঝড়। এমনই প্রতিক্রিয়ার জের ধরে মঙ্গলবার রাজধানীতে একাধিক স্থানে গণধোলাইয়ের ঘটনা ঘটে। এর একটি গুলিস্তানে অপরটি মালিবাগে। এর আগেও গত সপ্তাহে একই কায়দায় গণধোলাইয়ের শিকার হয়েছে আন্দোলনের নামে নাশকতাকারী ও বোমাবাজরা। পুলিশ জানায়, বঙ্গবন্ধু স্কয়ারের সামনে যাত্রীবাহী একটি বাসে আগুন দেয়ার সময় অজ্ঞাত পরিচয় এক যুবককে গণধোলাই দিয়েছে জনতা। ঘটনাটি মঙ্গলবার বিকেল সোয়া ৫টার দিকে ঘটে। পল্টন থানার উপ-পরিদর্শক বিবেকানন্দ জানান, গাড়িতে আগুন দেয়ার সময় জনতা ওই যুবককে হাতেনাতে ধরে ফেলে। পরে তাকে পিটুনি দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। ওই যুবকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বিকেল ৫টার দিকে বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে যাত্রাবাড়ী থেকে মিরপুরগামী শিখর পরিবহনে আগুন দেয়ার সময় তাকে ধরে ফেলা হয়। প্রায় ২৬ বছর বয়সী এই যুবকের পরিচয় পাওয়া যায়নি। তাকে আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাইরে থেকে পেট্রোল ঢেলে বাসটিতে আগুন দেয়া হয়। আগুন দেয়ার পরপরই এক যুবককে ধরে গণপিটুনি দেয়া হয়। পুলিশ গিয়ে ওই যুবককে জনতার রোষ থেকে উদ্ধার করে। অন্যদিকে দমকল বাহিনী বাসটির আগুন নেভায়। এ দিকে মোহাম্মদপুরে মঙ্গলবার সকালে জনতা-পুলিশের সঙ্গে হরতাল সমর্থকদের বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ গুলি ছুড়লে দুই পিকেটার আহত হয়। মোহাম্মদপুরের সলিমুল্লাহ রোডে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধ দুই পিকেটার হলেন নাজমুল হোসেন (৪০), ফজলুল হক (৩৭)। তারা বর্তমানে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসাধীন। এদিকে পুলিশের দাবি, পিকেটারদের ছোড়া ইট ও ককটেলে এসআই রাজীবও আহত হন। মোহাম্মদপুর থানার ডিউটি অফিসার মোঃ মাহফুজ জানান, সকালে এসআই রাজীবসহ পুলিশের একটি টিম সলিমুল্লাহ রোডে টহল দিচ্ছিল। এ সময় হরতাল সমর্থনকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে পিকেটারদের বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়। এতে এসআই রাজীব আহত হন। পুলিশ গুলি ছুড়লে দুই পিকেটার বিদ্ধ হয়। পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাজীব বলেন, প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছি। সুস্থ বোধ করায় বাসায় চলে এসেছি। সন্ধ্যায় মালিবাগের একটি বাসে আগুন দেয়ার সময় জনতা হাতেনাতে ধরে ফেলে এক তরুণকে। পরে তাকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে। রাতে তাকে পুলিশ ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করতে জানতে পারে মূলত সে একজন ভাড়াটে বোমাবাজ। মিরপুর পল্লবীতেও পুলিশের বিস্ফোরকবিরোধী অভিযান চলাকালে পালিয়ে যাওয়ার সময় ইসমাইল (৩০) নামে একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তার পায়ে গুলি লেগেছে। এছাড়া এ ঘটনায় আরও দুজনকে আটক করেছে পুলিশ। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে সাতটি তাজা ককটেল, দুই কেজি পাথর এবং পাঁচটি জর্দার কৌটা জব্দ করা হয়েছে। জানা যায়, জনতার দেয়া তথ্যমতে-সোমবার মধ্যরাতে মিরপুর শাহপরান বস্তিতে অভিযান চালায় পল্লবী থানা পুলিশ। অভিযানে হৃদয় (২৮), স্বপন (২৯) ও ইসমাইল (৩০) নামে তিনজনকে আটক করা হয়। এদের মধ্যে ইসমাইল পুলিশের গুলিতে আহত হন। তার পায়ে গুলি লাগে। পল্লবী থানার উপ-পরিদর্শক রাসেল জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শাহপরান বস্তিতে অভিযান চালানো হয়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের গুলিতে ইসমাইল আহত হন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, রাতে বিস্ফোরক বানানোর পাশাপাশি দিনের বেলায় এরা তিনজন বাসের হেলপার বা কন্ডাক্টর হিসেবে কাজ করেন। ইসমাইল বর্তমানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। উল্লেখ্য, গত ৫ জানুয়ারি বিএনপি জোটের অবরোধ শুরুর পর থেকে বিভিন্ন স্থানে বাসে আগুন দেয়া ও বোমাবাজি ঘটছে। এতে প্রায় অর্ধশত মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই গাড়িতে যাতায়াতের সময় অগ্নিদগ্ধ হন। নাশকতাকারীদের ধরিয়ে দিতে সরকারের পাশাপাশি পুলিশ, র‌্যাব ইতোমধ্যে পুরস্কার ঘোষণা করেছে। নাশকতার জন্য অবরোধ-হরতাল আহ্বানকারী জোটের নেতাকর্মীদের দায়ী করছে সরকার।
×