ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বার্ন ইউনিটে প্রতি মুহূর্তেই আসছে দুঃসংবাদ

জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে অনেকেই, স্বপ্ন তছনছ

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে অনেকেই, স্বপ্ন তছনছ

মিয়াজ আহমেদ লাবু ॥ বাবা অনেকটাই অক্ষম। দুই মাস আগে মা মারা গেছে। মায়ের জন্য দোয়া অনুষ্ঠান করতে টাকা নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি। আগুনে সব পুড়ে গেছে। মায়ের দোয়া অনুষ্ঠানের টাকা যোগাড় করবে কে? মায়ের দোয়া অনুষ্ঠানে আর থাকা হলো না। আমি মরে গেলে ওদের সংসার চালাবে কে? কষ্ট ও যন্ত্রণায় বিড়বিড় করে বললেন, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে অবরোধকারীদের পেট্রোলবোমায় মারাত্মক দগ্ধ শফিকুল ইসলাম। এ সময় তার চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরছিল। তার একটা প্রশ্ন ছিল, রাজনীতি বুঝি না। খই বিক্রি করে সংসার চালাই। টাকা না দিলে বাবা, ভাই-বোন না খেয়ে থাকবে। এ কেমন রাজনীতি। ওরা (অবরোধকারীরা) কেন আমাকে পুড়িয়ে মারতে চায়। তার মতো রাশেদুল ইসলাম রাশেদের সারাশরীর পুড়ে গেছে। আজ বুধবার মধ্যপ্রাচ্য যাবার কথা। কিন্তু অবরোধকারীদের ছোঁড়া পেট্রোলবোমায় রাশেদ ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। জমি বন্ধক রেখে ভিসার টাকা জোগাড় করেছিল রাশেদ। না গেলে জমি ছাড়াবো কিভাবে। এ সময় তার শিয়রে থাকা এত শীত লাগে কেন রে! আমি বাড়ি যাব, বাড়ি যাব? মাঝে মাঝে এমন অসংলগ্ন কথাবার্তা বলে চিৎকার করে উঠছিল রাশেদ। চিকিৎসকরা জানিয়েছে, রাশেদ ও শফিকুলের শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদেরকে বার্ন ইউনিটের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। যে কোন সময় অবস্থার অবনতি হতে পারে। তারা জানান, রাশেদের শরীর ৮০ ভাগ আর শফিকুলের ২৮ ভাগ পুড়ে গেছে। তাদের মতো কুমিল্লায় চৌদ্দগ্রামে দগ্ধ রাশেদ বার্ন ইউনিটের অবজারভেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন চকোরিয়া পাহাড়চান্দা গ্রামের সালেহ আহমেদের ছেলে হানিফ, মানিকগঞ্জ জেলার জয়ম-প এলাকার জহিরুল ইসলামের ছেলে জিলকদ, জামালপুর কমলনগর গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে ফারুক আহমেদ ও আরিফ শিকদার কষ্ট ও যন্ত্রণায় ছটফট করছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বাসে অবরোধকারীদের ছোড়া পেট্রোলবোমায় গুরুতর আহতদের মধ্যে ৬ জনকে বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া একই দুর্ঘটনায় আহত হানিফ নামের একজনের বার্ন থাকায় তাকে সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক আবুল কালাম জানান, এ পর্যন্ত ১১১ জনকে বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সুস্থ অবস্থায় ৪৩ জনকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। কুমিল্লায় চৌদ্দগ্রামের মারাত্মক দগ্ধ শফিকুলের বাবার নাম আলাউদ্দিন। গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও ওলুপাড়া কাত্তাহকান্দার গ্রামে। ৫ ভাই দুই বোনের মধ্যে শফিকুল বড়। বোমায় শফিকুলের হাত, মুখ, পিঠ ও মাথা পুড়ে গেছে। মুখে আগুন দগ্ধ হওয়ায় শফিকুলের মুখম-ল অনেকটা বিকৃতি হয়ে গেছে। প্রথমে অবজারভেশন ওয়ার্ডে থাকায় অবস্থায় শফিকুল যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন। বার বার পানি পানি বলে চিৎকার করছে। তার শিয়রে বসা চাচা মনির হোসেন পানি দিতে চাইলেও কর্তব্যরত নার্স পানি দিতে বারণ করছেন। শেষে কলা খাওয়ার বাহানা ধরে শফিকুল। চাচা শফিকুলকে মুখে কলা খাওয়াচ্ছেন। কলা গিলতে গিয়েও বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন শফিকুল। সংসারের উপার্জনক্ষম ভাই শফিকুলকে দেখছে ছোট ভাই মনোয়ার। আর দু’চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি পড়ছিলো মনোয়ারের। এ সময় মনোয়ার বলছিল, ভাই রে ভাই, তুই না থাকলে সংসার চলবে কী করে? অবরোধকারীরা আর কাউকে দেখল না? শফিকুল কষ্টও যন্ত্রণায় বলেন, পাঁচ বছর আগে অভাবী সংসারের হাল ধরতে কক্সবাজারে খই বিক্রি শুরু করি। বাবা অনেকটাই অক্ষম। দুই মাস আগে মা মারা গিয়েছেন। তিনি বলেন, মায়ের কুলখানি করতে টাকা নিয়ে বাড়ি যাচ্ছিলাম। কিন্তু পেট্রোলবোমায় সব টাকা পুড়ে গেছে। মায়ের দোয়া অনুষ্ঠানে আর যাওয়া হলো না। শফিকুল মৃদু কণ্ঠে বলেন, বাসের মধ্যে ঘুমাচ্ছি। হঠাৎ আগুন আগুন বলে চিৎকার। তারপর বের হওয়ার অবিরাম চেষ্টা। জানালে ভেঙে বের হওয়ার পর আর বলতে পারবো না। তিনি বলেন, ঘুমে চোখ খুলে দেখি, আগুনে জ্বলছে। জীবন্ত মানুষ কিভাবে জ্বলে, না দেখলে বুঝবেন না। আমার পাশের সিটে দেখেছি অনেকেই হাত, পা ভেঙ্গে গেছে। বাঁচার আকুতি জানিয়ে শফিকুল বলেন, আমি না বাঁচলে আমার ভাই-বোন পথে বসবে। আর কত প্রাণ গেলে দেশে শান্তি আসবে শফিকুলের প্রশ্ন? শফিকুলের শিয়রে বসে থাকা চাচা মনির হোসেন বলেন, শফিকুলের সঙ্গে সঙ্গে তার সাজানো সংসার সব শেষ হয়ে গেছে। মুখ থেকে ঊরু পর্যন্ত যে পোড়া তাতে বাঁচার আশা নেই। ছেলেটার খুব কষ্ট হচ্ছে। তিনি বলেন, সংসার আর ভাই-বোনের কথা চিন্তা করে বিয়ে পর্যন্ত করেনি। কে দেখবে ছেলেটাকে। কে দেখবে তার সংসার? বাবা তো জ্ঞান হারিয়ে পড়ে আছে। বার্ন ইউনিটের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়েছেন, দুপুরে শফিকুল অবস্থায় অবনতি হওয়ায় তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। যে কোন সময় অবস্থার অবনতি হতে পারে। কুমিল্লা দগ্ধ রাশেদুলের অবস্থা মারাত্মক। তার শরীরের ৮০ ভাগ পুড়ে গেছে। কষ্ট ও যন্ত্রণায় রাশেদুল বলছিল, আজ মঙ্গলবার না বুধবার। বুধবার হলে তো দুপুরে আমার ফ্লাইট। আপা, আমার পাসপোর্ট দেন। জমি বন্ধক রেখে ভিসার টাকা দিছি। না গেলে জমি ছাড়াবো কিভাবে। এত শীত লাগে কেন রে! আমি বাড়ি যাব, বাড়ি যাব? মাঝে মাঝে এমন অসংলগ্ন কথাবার্তা বলে চিৎকার করে উঠছেন রাশেদ। কই আপা, দেরি হয়ে যাচ্ছে তো!’ ‘মাকে বলেছি, শীতে কাঁথা দিতে, দিল না। এখন খুব শীত করছে। একটা কম্বল দেন না, এত শীত কেন? যন্ত্রণা কাতর রাশেদ বারবার চিৎকার করছেন আর নার্সদের বলছেন, ‘আপা! আপা! আমার শরীর শীতে শেষ হয়ে যাচ্ছে। মাকে কাঁথা দিতে বলেছি, কিন্তু দেননি। মা বলে, বাবা শীত লাগবে না। শীত কমে গেছে। বিদেশ গিয়ে কাঁথার কথা তো ভুলে যাবি। আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরেই তো বিদেশ পৌঁছে যাবি। সেখানে কম্বল কিনে গায়ে দিস। রাশেদের চাচা মোঃ হানিফ বলেন, পাসপোর্ট ও ভিসা সবই গেছে। কিন্তু ভাতিজার জীবন শেষ। বিদেশ যাওয়া তো দূরের কথা ভাতিজার জীবন থাকবে কি-না এটাই এখন চিন্তার বিষয়। রাশেদের সঙ্গে আসা চাচা ব্যবসায়ী মোঃ হানিফও দগ্ধ হয়েছেন। রাশেদের শয্যাপাশে কর্তব্যরত একজন চিকিৎসক জানান, রাশেদের মুখ থেকে শুরু করে শরীরের অধিকাংশই পুড়ে গেছে। তার অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক তবে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। রাশেদের বাবার নাম মৃত সৈয়দ আহমেদ। গ্রামের বাড়ি কক্সবাজার জেলার চকরিয়া থানার শাহাগচান্দা গ্রামে। হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে একই ঘটনায় পেট্রোলবোমায় দগ্ধ যন্ত্রণা জিলকদ আহমদের। তার বাবার নাম জহিরুল ইসলাম। গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার শিংগাইর থানার জয়ম-প গ্রামে। ভাইবোনের মধ্যে জিলকদ বড়। কষ্ট ও যন্ত্রণায় জিলকদ জানান, ভালভাবে লেখাপড়া করি না বলে বাবা তার এক নিকটাত্মীয়কে বলে ভিসা এনেছে (সৌদি আরবের ভিসা)। ভিসার আসার পর বাবাই বলেছে, কক্সবাজার থেকে বেড়িয়ে আয়। চার বন্ধুকে নিয়ে বেড়াতে গেলাম। বেড়ানোই কাল হলো। সৌদি গেলে পরিবার ও দেশ দুটোরই লাভ হতো। পেট্রোলবোমায় পুড়ে তো সব শেষ। এখন সৌদি যেতে পারবে তো? চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, জিলকদের পেটের অংশ বেশি পুড়ে গেছে। এছাড়া ঊরুসহ শরীরের বেশকিছু অংশ দগ্ধ হয়েছে তার। কক্সবাজার বেড়িয়ে বাড়ি ফেরার পথে দগ্ধ হন জিলকদ, শরীফুল, আলী হোসেন ও ফারুক আহমেদ। এর মধ্যে জিলকদ ও ফারুককে বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। জিলকদ আরও জানায়, বাবার স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে প্রকৌশল হবো। ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছি। লেখাপড়া করি না বলে বাবা বিদেশ পাঠাতে চায়। এ সময় জিলকদ জানায়, দুই ভাইয়ের মধ্যে আমি বড়। দরিদ্র পিতার সংসারের হাল ধরবো ভেবে বিদেশ যেতে রাজি হই। এখন বিদেশ যাওয়া তো দূরের কথা শরীর নাড়ানো কষ্ট। জিলকদ আরও জানায়, চার বন্ধু পাশাপাশি সিটে বসে ঘুমাচ্ছি। আগুনের তাপে ঘুম ভাঙে। জানালা দিয়ে লাফ না দিলে পুড়ে ছাই হয়ে যেতাম। পাশের সিটে বসা কয়েকজন চিতার আগুনের মতো পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। জীবন্ত মানুষ কিভাবে চিতার আগুনে পুড়ে মরে স্বচক্ষে দেখলাম। কিছুই করার ছিল না। প্রাণ বাঁচাতে সবাই ছুটোছুটি করছে। বিভীষিকাময় পরিস্থিতি। মুহূর্তের মধ্যে আগুন জীবন্ত মানুষের প্রাণ কেড়ে নিল। জিলকদের চাচা আবদুল আজিজ সরকার বলেন, অভাবের সংসার। বাবা অনেক কষ্টে নিকট আত্মীয়ের মাধ্যমে সৌদির ভিসা এনেছে। এখন কিভাবে যাবে? তিনি বলেন, বেড়ানোই তার কাল হলো। গতকাল সন্ধ্যায় বাড়িতে ফোন দিয়ে বলেছে রাতে আসবে। সকাল হতে না হতেই তার এক বন্ধু ফোন দিয়ে জানালো সে বার্ন ইউনিটে। তিনি আরও বলেন, সবাই সহায়তা করে টাকা দিয়েছি ভিসার জন্য। ভিসা থাক আর যাক ছেলেটা বাঁচবে কিনা নিশ্চয়তা চাই। আর কত হলে দেশ শান্ত হবে প্রশ্ন করেন তিনি। একই ঘটনায় দগ্ধ আরিফের বেশ কয়েকদিন তার ছোট ভাই নিখোঁজ। মালয়েশিয়াগামী ট্রলার ডুবির পর থেকে মা-বাবার মুখের দিকে তাকাতে পারেন না। তাই রক্তের টানে হরতাল-অবরোধ উপেক্ষা করে নিখোঁজ ভাইকে খুঁজতে কক্সবাজার ছুটে যান আরিফ শিকদার। কিন্তু ভাইকে তো পেলেন না, বরং নিজে ফিরলেন জীবন্ত দগ্ধ হয়ে। শিয়রে বসে আরিফের দুলাভাই তারা মুন্সি জানান, এক ছেলেকে হারানোর শোকের সঙ্গে আরেক ছেলেকে দগ্ধ দেখে অসহায় মা-বাবার চোখে বান বয়ে যাবে। আরিফের বাবার আমের আলী শিকদার। গ্রামের ফরিদপুর জেলার ব্রাহ্মণবাড়িয়া গ্রামে। চার ভাইয়ের মধ্যে আরিফ দ্বিতীয়। পেট্রোলবোমার আগুনে আরিফের পেট, ঊরু, পাসহ শরীরের বেশকিছু অংশ পুড়ে গেছে। জানালা ভেঙে বের হতে গিয়ে ভেঙ্গে গেছে গলার ডান পাশের হাড়। তারা মুন্সী বলেন, অভাবী সংসার হলেও, ‘ভাইদের মধ্যে সম্পর্ক ভাল। অভাবী সংসারকে সচ্ছল করতে আরেক ভাই সজিব মালেশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করছে। মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে ট্রলার ডুবিতে বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে কেউ জানে না। মা-বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে দুই হাজার টাকা হাওলাত করে ভাইকে কক্সবাজার খুঁজতে যায় আরিফ। গতকাল বাড়িতে জানিয়েছে, সজিবকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। বাড়িতে ফিরে আসছে আরিফ। সজিবকে না পেলেও, জীবন্ত দগ্ধ আরিফের অবস্থার কথা শুনলে মা-বাবাকে বাঁচানো যাবে না।’ আরিফ শিকদারের দুলাভাই আক্ষেপ করে বলেন, ‘দিনে এনে দিনে খাওয়া সংসার। এক ছেলে নিখোঁজ, আরেক ছেলে অর্ধমৃত (দগ্ধ)। এভাবে আর কত মায়ের বুক খালি হবে? ঘটনার বর্ণনা করে আরিফ বলেন, ‘আমার পাশের সিটে বসা লোক জানালা ভেঙে বের হয়। আমি দুই সিটের মাঝখানে আটকা পড়ি। পাশের সিটের লোকজন জীবন্ত পুড়ে গেছে দেখে ভেবেছিলাম বাঁচব না। কিছুটা পুড়ে যাওয়ার পর কেউ একজন আমাকে টান মেরে বের করে। এতে আমার হাড় ভেঙ্গে গেছে। তিনি আরও বলেন, আমরা তো কোনও অপরাধ করিনি। তাহলে কেন আমাদের বলিরপাঁঠা বানানো হচ্ছে। আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। বার্ন ইউনিটে কর্তব্যরত চিকিৎসরা জানিয়েছেন, অবজারভেশনে আরিফকে রাখা হয়েছে। তার পেট ও ঊরু বেশি পুড়েছে। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বাসে অবরোধকারীদের ছোড়া পেট্রোলবোমায় ৭ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় গুরুতর আহতদের মধ্যে ৬ জনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া একই দুর্ঘটনায় আহত হানিফ নামের একজনের বার্ন থাকায় তাকে সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) আনা সাতজন হলেনÑ শফিকুল ইসলাম (১৮), রাশেদুল ইসলাম (২০), মোহাম্মদ হানিফ (৩৭), জিলকদ (১৯), ফারুক আহমেদ (২০), আরিফ শিকদার (২২) এবং শরীফ। এর মধ্যে শফিকুল ইসলাম এবং রাশেদুল ইসলামের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এর মধ্যে ২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তারা হলেনÑ রাশেদুল ও শহিদুল। রাশেদুলের শরীরের ৮০ ভাগ ও শফিকুলের ২৮ ভাগ পুড়ে গেছে। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। অধ্যাপক আবুল কালাম বলেন, বার্ন ইউনিটে ভর্তি অগ্নিদগ্ধদের মধ্যে যাদের শরীরের অবস্থা ভাল বা আশঙ্কাজনক নয় তাদের কুর্মিটোলা ও মুগদা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হবে। দুই জায়গাতে পাঠানো অগ্নিদগ্ধদের দুইজন সিনিয়র অধ্যাপকের মাধ্যমে চিকিৎসা দেয়া হবে। হাসপাতাল দুটিতে ১০ শয্যা করে দুটি ইউনিট করা হবে। বার্ন ইউনিটে বোর্ড মিটিং করে এ সিদ্ধান্ত দেয়া হয়। বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রোগীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন বলে জানান আবুল কালাম। তিনি বলেন, আমরা এ টাকা দিয়ে একটি বার্ন ট্যাঙ্ক কিনবো। এ পর্যন্ত ১১১ জনকে বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সুস্থ অবস্থায় ৪৩ জনকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেনÑ বার্ন ইউনিটের মুখপাত্র অধ্যাপক সাজ্জাদ খন্দকার, বার্ন ইউনিটের সাবেক পরিচালক ডাঃ সামন্ত লাল সেন।
×