ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সৌদিতে কর্মীরা যাবে মাত্র ২০ হাজার টাকা ব্যয়ে

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

সৌদিতে কর্মীরা যাবে মাত্র ২০ হাজার টাকা ব্যয়ে

ফিরোজ মান্না ॥ অপেক্ষার পালা শেষ। আগামী সপ্তাহেই ঢাকায় আসছে সৌদি প্রতিনিধি দল। সব কিছু চূড়ান্ত হবে তখনই। ছয় বছর বন্ধ থাকার পর দেশের জন্য খুলে গেছে সৌদি শ্রমবাজার। বহু প্রতীক্ষিত বাজারটি খোলার জন্য সরকার গত কয়েক বছর ধরেই চেষ্টা করে আসছিল। সেই চেষ্টার প্রতিফলন ঘটেছে এক ফেব্রুয়ারি। ওই দিনই সৌদি কর্তৃপক্ষ প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কর্মী নিয়োগের সুখবরটি জানিয়েছে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সৌদি নতুন বাদশা সালমান বিন আব্দুল আজিজ বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের অনুমোদন দেয়ার পরই সৌদি শ্রম মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসছে আগামী সপ্তাহে। প্রতিনিধি দলে কত জন থাকবেন এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় কিছু বলতে পারেনি। তবে সৌদি প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসছে এটা নিশ্চিত করেছে। সম্প্রতি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সৌদি আরব সফর করেন। প্রতিনিধি দল সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকের পর কর্মী নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত হয়। ওই বৈঠকে সৌদি শ্রমমন্ত্রী আবদেল ফকিহ বাংলাদেশ থেকে দক্ষ জনশক্তি নেয়ার কথা জানান। এই ঘোষণার কয়েকদিনের মাথায় সৌদি বাদশা বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের অনুমোদন দেন। গত দুই দিন ধরে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে কাজকর্ম বেড়ে গেছে। সৌদি থেকে যে প্রতিনিধি দল আসবে তার জন্য দফায় দফায় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী বৈঠক করেছেন। তৈরি করা হচ্ছে কিভাবে কর্মী পাঠানো হবে তার একটি কৌশলপত্র। তবে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘ আলাপ আলোচনার মাধ্যমে কর্মী পাঠানোর চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরি করা হবে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী এর আগে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে কর্মী নিয়োগে মাত্র ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা ব্যয় হবে। প্রত্যেক কর্মীর খরচ সৌদি কোম্পানিই বহন করবে। এত কম টাকা খরচে কর্মী নিয়োগ এখন পর্যন্ত কোন দেশে হয়নি। আগে প্রত্যেক কর্মীর কাছ থেকে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা নেয়া হতো। ফলে সেখানে গিয়ে একজন কর্মী তার খরচই তুলতে পারতেন না। ওই কর্মী চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে অবৈধভাবে দেশটিতে থেকে যেত। এতে ওই কর্মী সব সময় পুলিশের ভয় নিয়ে গোপনে কাজ করতেন। এবার কম টাকায় সেখানে গিয়ে চাকরির মেয়াদের মধ্যেই অনেক টাকা উপার্জন করতে পারবেন। আসলে সৌদি শ্রমবাজারটি কখনই বন্ধ ছিল না। তবে তারা নানা কারণে কর্মী নিয়োগে সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছিল। এবার বাজারটি সব ধরনের কাজের জন্যই খুলে দিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। এদিকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, একসময় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার ছিল সৌদি আরব। ১৯৭৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত এই বাজারে ২৫ লাখ ৫৮ হাজার ৪৬৩ জন বাংলাদেশী নাগরিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। ২০০৮ সালের পর থেকে এই বাজারে কর্মী নিয়োগের পরিমাণ কমে যায়। এর পেছনে অবশ্য নানা কারণ জড়িত ছিল। দেশটিতে বাংলাদেশী কর্মীরা নানা অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ে। এতে সৌদি কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশী কর্মীদের প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করতে থাকেন। ধীরে ধীরে এই অবস্থা খুবই খারাপের দিকে চলে যায়। নানা অপরাধে সেখানে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশীকে সৌদি কর্তৃপক্ষ শিরñেদ করে। অনেককে কারাগারে বন্দী রেখেছে। এর পরও এই বাজারে প্রতি বছর গড়ে ৫০ থেকে ৬০ হাজার কর্মী গিয়েছেন। এই কর্মীগুলো বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনের পাঠানো বিভিন্ন কোম্পানির অনুরোধে সৌদি গিয়েছেন। ২০০৮ সালের পর থেকে বাংলাদেশী কর্মীদের ভিসা প্রায় বন্ধই করে দেয় দেশটির কর্তৃপক্ষ। বাজারটি উদ্ধারের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশটি সফর করেন। পরে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রীও দেশটি সফর করে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন। এর বাইরে কূটনৈতিক তৎপরতা তো অব্যাহত ছিলই। এবার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী দেশটি সফর করে ইতিবাচক ফল বয়ে নিয়ে এসেছেন। সূত্র জানিয়েছে, সরকারের চেষ্টার ফলেই সৌদি শ্রমবাজার নতুন করে খুলে গেছে। নতুন করে শ্রমবাজার খুলে যাওয়ায় দেশের জনশক্তির জন্য বড় ধরনের সুখবর। এত কম টাকায় সৌদি যাওয়ার বিষয়টি আরও এক নতুন দিগন্ত খুলে দিল। এখন আর সৌদি যেতে ভিটামাটি বিক্রি-বন্ধকের কথা শোনা যাবে না। দুই দেশের সরকারের বোঝাপড়ার ভিত্তিতে সরকারী পর্যায়ে সৌদি আরবে জনশক্তি রফতানি করা হবে। এতে দরিদ্র মানুষের জন্য একটা বড় আশীর্বাদ হয়ে দেখা দেবে। সরকার ইচ্ছা করলে যে কম খরচে বিদেশে জনশক্তি রফতানি করতে পারে, এ বিষয়টিও প্রমাণিত হবে। অবশ্য এর আগে সরকারী পর্যাযে মালয়েশিয়ায় মাত্র ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায় কর্মী পাঠানো হয়েছে। মালয়েশিয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করা কর্মীরাও সৌদি আরবে যেতে পারবেন। সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যেতে সাড়ে তিন থেকে চার লাখ টাকা খরচ হয়ে যেত। এখন এই কাজটি হবে না। আবার টাকা দিয়ে অনেকে প্রতারিতও হয়েছেন। অনেকে দেশের চাকরি বিদেশ যেতেই পারেননি। জনশক্তি রফতানি ব্যবসায়ীদের দেয়া টাকাও উদ্ধার করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। জনশক্তি রফতানিকারকরা ভাল চাকরির কথা বলে বিদেশ পাঠিয়ে দিয়েছেন। অথচ সেখানে গিয়ে তারা সেই চাকরি পাননি। পরে দালাল চক্রের মধ্যে তাদের খারাপ চাকরিই করতে হয়েছে। কারণ দেশে ভিটেমাটি বিক্রি করে তাদের বিদেশ যেতে হয়েছে। দেশে ফিরে এসেও তাদের ঋণের বোঝার নিচে পড়তে হবে। তাই বাধ্য হয়েই তাদের কাজ করে যেতে হয়। এমন হাজার হাজার ঘটনা জনশক্তি রফতানিকারকদের কারণে ঘটেছে। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত সব কিছু ঠিকঠাক রয়েছে। কয়েক লাখ কর্মীর কর্মসংস্থান হবে সৌদিতে। সেখানে ছয়টি বড় শহরে ও বাংলাদেশীদের পরিচালিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এই কর্মীদের কর্মসংস্থানের কথা রয়েছে।
×