ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

উত্তরাঞ্চলের সব জেলায় গাড়ি চালানোর সিদ্ধান্ত

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

উত্তরাঞ্চলের সব জেলায় গাড়ি চালানোর সিদ্ধান্ত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের ডাকা টানা হরতাল-অবরোধে পরিবহন খাতে নাশকতায় ভুক্তভোগীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন উত্তরাঞ্চলের বাস মালিক সমিতিসমূহের নেতারা। এদিকে আজ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রহরায় উত্তরাঞ্চলের সকল জেলায় ঢাকা থেকে সকালে ও রাতে দুইবার গাড়ি চালানোর ব্যাপারে একমত হয়েছেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকসহ বৈঠকে উপস্থিত মন্ত্রীরা। পাশাপাশি একইভাবে উত্তরের জেলাসমূহ থেকে রাজধানীতে বাস আসবে। বৈঠকে মালিক-শ্রমিকদের পক্ষ থেকে পরিবহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে চারদফা দাবি জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে উত্তরাঞ্চলের বাস পরিবহন মালিক সংগঠনগুলোর আয়োজনে ‘পরিবহনে হামলা-নাশতারোধ’ সংক্রান্ত এক বৈঠকে এমন প্রস্তাব রাখেন তারা। রংপুর বিভাগীয় আঞ্চলিক বাস পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি আক্তার হোসেন বাদল বলেন, গাড়ি চলছে এবং চলবে। কিন্তু পরিবহনের শ্রমিকরা জ্বলছে তাদের কী হবে? বৈঠকে উপস্থিত স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, সরকার যদি নাশকতার শিকার হওয়া পরিবহন শ্রমিকদের, বাস মালিকদের, ক্ষতিগ্রস্ত যাত্রীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হন, তাহলে আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি- পুরো উত্তরাঞ্চলে অন্যান্য স্বাভাবিক দিনের মতোই দূরপাল্লার বাস চলবে। তিনি বলেন, সরকারকে আমাদের তালিকামূলকভাবে নিশ্চয়তা দিতে হবে। যেমন- আমাদের গাড়ির কাঁচ ভাঙলে কত টাকা দেবেন। আমাদের সিট পুড়লে কত টাকা দেবেন। আমাদের শ্রমিকরা দগ্ধ হলে কী পরিমাণে ক্ষতিপূরণ দেবেন ইত্যাদি। তার এই প্রস্তাবের সঙ্গে বগুড়া, পঞ্চগড়সহ উত্তরাঞ্চলের অন্যান্য পরিবহন মালিকরা এক মত হন। পরিবহন নেতারা বলেন, আমাদের এসব দাবি বা চাহিদার নিশ্চয়তা দিলে আগামীকাল বুধবার থেকে পুরোদমে উত্তরাঞ্চলের হাইওয়েতে দূরপাল্লার বাস চলবে। এ সময় আমাদের সঙ্গে পুলিশ ও বিজিবির নিরাপত্তা দলও থাকতে হবে। এ সময় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সড়ক-মহাসড়কে যাত্রী ও সম্পদের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান। তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের। আপনারা সবাই মিলে সহযোগিতা করুণ। এক সময় দেশবাসী সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। বৈঠকে নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, পুলিশের আইজি শহিদুল হক, সাংসদ আসাদুজ্জামান খান কামাল, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির নেতা খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহসহ পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফারুক তালুকদার সোহেল জনকণ্ঠ’কে বলেন, বৈঠকে আমরা সরকারের মন্ত্রীদের বলেছি পুলিশি নিরাপত্তা ছাড়া গাড়ি চালানো কোনভাবেই সম্ভব হবে না। আমাদের দাবির প্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত হয়, সকালে ও রাতে দেশের উত্তরাঞ্চলের সকল জেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাহাড়ায় ঢাকা থেকে গাড়ি ছেড়ে যাবে। তেমিন বিভিন্ন জেলা থেকে পুলিশ পাহারায় রাজধানীতে গাড়ি আসবে। তিনি বলেন, মালিক শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ, ক্ষতিগ্রস্ত বাসের ক্ষতিপূরণ, যাত্রী ও শ্রমিকদের মধ্যে আহত নিহতদের ক্ষতিপূরণ, চিকিৎসার নিশ্চয়তার বিষয়টি বৈঠকে ওঠে আসে। তিনি জানান, মালিকদের পক্ষ থেকে এসব দাবি দাওয়া তুলে ধরে বলা হয়েছে তা পূরণ না হলে আমাদের পক্ষে গাড়ি চালানোর কঠিন হবে। এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে দায়িত্ব নিয়েছেন। নিশ্চিয়ই তিনি ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। হরতাল অবরোধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বাস, মালিকদের নাম, আহত-নিহত যাত্রী সহ শ্রমিকদের প্রথম তালিকা পাঠানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে। মালিক সমিতির নেতা সোহেল জানান, আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রথম তালিকায় ক্ষতিগ্রস্ত ৭০ জনের নাম রয়েছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতি, ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান এ্যাসোসিয়েশনসহ আমাদের সমিতি থেকে তিন ভাগে তালিকা পাঠানো হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপের তালিকা তৈরির কাজ চলছে বলে জানান তিনি। এক সপ্তাহের মধ্যে রাজধানীতে নাশকতা বন্ধ হবে-ডিএমপি কমিশনার রাজধানীতে চলমান নাশকতা আগামী ৭ দিনের মধ্যে বন্ধ করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া। তিনি বলেন, প্রকাশ্য নাশকতা ঘটতে দেয়া হবে না। বৈঠকে তিনি আরও বলেন, নাশকতার ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ‘জিরো’ টলারেন্সে রয়েছে। নাশতাকারীরা দু’একটা ককটেল, পেট্রোল বোমা মেরে নিরাপত্তা বিঘœ ঘটাতে পারবে না।
×