ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দরিদ্র নারী ও শিশু কল্যাণে

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

দরিদ্র নারী ও শিশু কল্যাণে

বাংলাদেশে নারী জন্ম মানেই প্রতিকূল স্রোতের বিরুদ্ধে লড়াই করে টিকে থাকার আপ্রাণ প্রচেষ্টা। দরিদ্র হলে তো জীবন আরও বিষময়, গ্লানিকর হয়ে ওঠে। নারীকে তার আপন ভাগ্য জয় করার অধিকার না দেয়ায় সমাজে করুণ জীবনের ভার বয়ে যেতে হয়। অন্তঃসত্ত্বা নারীর অবস্থা তো আরও বেদনামথিত। কখনও তা ভয়াবহ এবং প্রাণঘাতীও বটে। নারীর প্রতি অসদাচরণ, সহিংসতা, নির্যাতন, নিপীড়ন প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছেÑ যার মাত্রা কমেনি। বরং প্রকারে পরিবর্তন ঘটেছে। গ্রামীণ নারীর জীবন কোথাও কোথাও হয়ে ওঠে বিভীষিকাময়। সন্তান ধারণ, জন্মদান, লালনপালনের পাশাপাশি গৃহস্থালির সব কাজই সামলাতে হয় নারীকে। বাংলাদেশের অসহায় দরিদ্র নারীরা বহু অধিকার থেকে বঞ্চিত দীর্ঘকাল হতেই। তবে শেখ হাসিনার সরকার এইসব নারীর জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রসূতি মায়ের জন্য নানা উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে আর্থিক সহায়তা প্রদানকেই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। যা নারীর বিড়ম্বিত জীবনে বিশাল সহযোগিতা হয়ে দেদীপ্যমান হবে। দরিদ্র অন্তঃসত্ত্বা নারী ও শূন্য থেকে পাঁচ বছর বয়সী সন্তানের মা, যারা আর্থিকভাবে অসচ্ছল, তাদের এখন থেকে নগদ অর্থ প্রদান করবে সরকার। এর মাধ্যমে শিশু ও নারী মৃত্যুহার হ্রাসের পাশাপাশি শিশু ও নারী পুষ্টি নিশ্চিত হবে। তারা চিকিৎসা সেবাও পাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক নির্বাহী পরিষদের (একনেক) সভায় অনুমোদিত হয়েছে দরিদ্র অন্তঃসত্ত্ব¡া মহিলাদের সহায়তা প্রকল্পটি। প্রাথমিক পর্যায়ে দেশের রংপুর ও ঢাকা বিভাগের ৭টি জেলার ৪২টি উপজেলার ৪৪৩টি ইউনিয়নের ১৬ লাখ পরিবার থেকে ৫ লাখ দুস্থ মহিলা বাছাই করা হবে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব মতে গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, জামালপুর, শেরপুর ও ময়মনসিংহ জেলায় এই প্রকল্প কার্যকর করা হবে। এই জেলাগুলোতে দারিদ্র্যের হার ৩৫ ভাগের বেশি। এসব এলাকায় অপুষ্টির হারও দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় অনেক বেশি। প্রকল্প এলাকা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশের ৬৪টি জেলাকেই এ প্রকল্পের আওতায় আনা হবে এবং তা হওয়ার অর্থই দেশের নারী সমাজ অগ্রগতির পথে আরও একধাপ এগিয়ে যাবে। আগামী এপ্রিল মাস থেকে প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হবে ২০২০ পর্যন্ত মেয়াদের প্রকল্পটি। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৩শ’ ৭৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার দেবে ৩৮ কোটি টাকা এবং বিশ্বব্যাংক অবশিষ্ট ২ হাজার কোটি টাকা প্রকল্প সাহায্য হিসেবে ঋণ দেবে। স্থানীয় সরকার বিভাগ এ প্রকল্প কার্যকর করবে। নগদ অর্থ সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে নারীর জীবনকে উন্নত করার সিদ্ধান্তটি কার্যকর করা হলে নারীর অর্থনৈতিকভাবে বঞ্চিত থাকার ক্লেশ লাঘব হবে। প্রকল্পের আওতায় দরিদ্র অন্তঃসত্ত্বা নারী গর্ভকালীন মোট ৪ বার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে পারবেন। প্রতিবার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তাদের দুইশ’ টাকা করে অর্থ দেয়া হবে। পাশাপাশি শূন্য থেকে ২৪ মাস বয়সী দরিদ্র শিশুদের প্রতিমাসে একবার শরীর বৃদ্ধির পরীক্ষা করার জন্য ৫শ’ টাকা প্রদান করা হবে। এক্ষেত্রে ২৫ থেকে ৬০ মাস বয়সী শিশুদের তিন মাসে একবার শরীর বৃদ্ধির পরীক্ষা করে এক হাজার টাকা দেয়া হবে। এছাড়াও অন্তঃসত্ত্বা নারী ও মায়েরা প্রতিমাসে অনুষ্ঠিত শিশু পুষ্টি ও উন্নত শিক্ষা সংক্রান্ত কর্মশালায় অংশ নিলে প্রতিবার ৫শ’ টাকা করে পাবেন। ‘ইনকাম সাপোর্ট ফর দ্য পুওরেস্ট’ নামক এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন পদ্ধতির ওপর নির্ভর করে এর সাফল্য-ব্যর্থতা। গ্রামীণ দরিদ্র নারীর জীবনে এই প্রকল্পটি আত্মবিশ্বাস, আত্মসচেতনতা, স্বাস্থ্যবোধ জাগ্রত এবং রোগশোক বালাই থেকে মুক্ত করার পথ দেখাবে। অর্থনৈতিক কারণে দরিদ্র নারীরা স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবারও পায় না। একই অবস্থা সদ্যপ্রসূত শিশুদের বড় হয়ে ওঠার পথটিও। এর ফলে কন্যা শিশুর জন্মদানের প্রতি সমাজ, পরিবারের বিরাগ, উন্নাসিক ও অমানবিক আচরণও হ্রাস পাবে। নারীর জন্য গৃহীত প্রকল্পের অর্থ যথাযথভাবে সংশ্লিষ্ট নারীরা যাতে পায়, তা নিশ্চিত করার কাজটি সরকারকে করতে হবে। এক্ষেত্রে দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাতের ঘটনাগুলো যেন না ঘটে, সেটা নিশ্চিত রাখা জরুরী।
×