ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হয়রানির শীর্ষে ব্র্যাক ব্যাংক

তিন মাসে ব্যাংকের বিরুদ্ধে গ্রাহকের অভিযোগ ৮৬১

প্রকাশিত: ০৪:২৯, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

তিন মাসে ব্যাংকের বিরুদ্ধে গ্রাহকের অভিযোগ ৮৬১

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে গ্রাহকের অভিযোগ আবারও বাড়তে শুরু করেছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে গ্রাহকরা ৮৬১টি অভিযোগ করেছেন। একক মাস হিসেবে ডিসেম্বরে বিভিন্ন গ্রাহকরা ৩৪৩টি অভিযোগ করেছেন, যা গত নবেম্বর মাসের চেয়ে ৩৬টি বেশি। এই সময়ে গ্রাহক হয়রানির সবচেয়ে বেশি অভিযোগ এসেছে বেসরকারী খাতের ব্র্যাক ব্যাংকের বিরুদ্ধে। তার পরের অবস্থানে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক। রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে সোনালী ও জনতা ব্যাংকের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণ কেন্দ্রে (সিএসডি) সূত্রে জানা যায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে গ্রাহকরা মোট ৮৬১টি অভিযোগ করেছেন। আর এ সময়ে আগের অভিযোগসহ মোট নিষ্পত্তি হয়েছে ৭৭৩টি। যা এর আগের প্রান্তিক শেষে ছিল এক হাজার ৯১টি। সে হিসেবে আলোচ্য সময়ে অভিযোগ নিষ্পত্তির হার কমেছে ২৯ দশমিক ১৪ শতাংশ। আর এ সময়ে অনিষ্পন্ন অভিযোগের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৮৯টি। অক্টোবর মাসে মোট ২১১টি অভিযোগ এসেছে। এর মধ্যে আগের অভিযোগসহ অক্টোবর মাসে মোট ২৯০টি অভিযোগ নিষ্পন্ন করা হয়েছে। পরের মাস নবেম্বরে অভিযোগের পরিমাণ কিছুটা বেড়ে হয়েছে ৩০৭টি। আর এ সময়ে আগের অভিযোগসহ মোট ৩৯৮টি অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে। আর ডিসেম্বর মাসে গ্রাহকদের অভিযোগের পরিমাণ আরও বেড়ে হয়েছে ৩৪৩টি। আর এ সময়ে অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে ২৫৯টি। সূত্র মতে, গ্রাহক অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রাহক হয়রানির সবচেয়ে বেশি অভিযোগ এসেছে বেসরকারী খাতের বাণিজ্যিক ব্র্যাক ব্যাংকের বিরুদ্ধে। গত তিন মাসে ব্রাক ব্যাংকের বিরুদ্ধে মোট ৮১টি অভিযোগ এসেছে। আলোচ্য সময়ে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ইসলামী ব্যাংকের বিরুদ্ধে গ্রাহক হয়রানির অভিযোগ এসেছে ৭১টি। গ্রাহকের অভিযোগ রয়েছে, প্রাইম ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক ও শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের বিরুদ্ধে। এ সময়ে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংকের বিরুদ্ধে ৮৪টি অভিযোগ এসেছে। জনতা ব্যাংকের বিরুদ্ধে এ সময় মোট ৩৫টি অভিযোগ এসেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাস্টমার সার্ভিস বিভাগ (২০১১ সালের এপ্রিল) চালুর পর থেকে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গ্রাহকরা অভিযোগ করেছেন ১২ হাজার ৮৩৬টি। আর ডিসেম্বর ’১৪ পর্যন্ত প্রাপ্ত অভিযোগের মধ্যে নিষ্পত্তি করা হয়েছে ১২ হাজার ৬৬৯টি। অনিষ্পন্ন অভিযোগের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬৭টি। তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, অর্থবছরের (অক্টোবর-ডিসেম্বর) সময়ে প্রাপ্ত অভিযোগগুলোর মধ্যে সাধারণ ব্যাংকিং সংক্রান্ত অভিযোগের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এ সময়ে সাধারণ ব্যাংকিং সংক্রান্ত মোট ৩২২টি অভিযোগ এসেছে। এ ছাড়া ঋণ ও অগ্রিম সংক্রান্ত ১২১টি, মেয়াদোত্তীর্ণ স্বীকৃত আমদানি বিল পরিশোধ না করা সংক্রান্ত অভিযোগের সংখ্যা ২৩৫টি, কার্ড সংক্রান্ত ৫৩টি, ব্যাংক গ্যারান্টি সংক্রান্ত ১২টি, মোবাইল ব্যাংকিং সংক্রান্ত ১১টি, রেমিটেন্স সংক্রান্ত ১৮টি এবং অন্যান্য অভিযোগ এসেছে ৮৯টি। ডিসেম্বর মাসে সাধারণ ব্যাংকিং সংক্রান্ত অভিযোগ এসেছে ১৪৬টি। এ ছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ স্বীকৃত আমদানি বিল পরিশোধ না করা সংক্রান্ত অভিযোগের মধ্যে অভ্যন্তরীণ ৪৬টি ও বৈদেশিক ৩৫টি, ঋণ ও অগ্রিম সংক্রান্ত ৫৪টি, কার্ড সংক্রান্ত ১৯টি, মোবাইল ব্যাংকিং সংক্রান্ত ৫টি, ব্যাংক গ্যারান্টি সংক্রান্ত ১টি, রেমিটেন্স সংক্রান্ত ৩টি ও অন্যান্য ৩৪টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা চাই গ্রাহকরা নির্বিঘেœ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে গিয়ে সেবা গ্রহণ করুক। তাদের বিরুদ্ধে গ্রাহকরা অসন্তুষ্ট হয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ করুক এটা আমাদের কাম্য নয়। কিন্তু তার পরও অনেক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে গিয়ে গ্রাহকরা সুষ্ঠুভাবে সেবা গ্রহণ করতে পারে না বলেই গ্রাহকরা তাদের শেষ ভরসারস্থল বাংলাদেশ ব্যাংকে অভিযোগ করেন। আমরা আমাদের সাধ্যমতো গ্রাহকের অভিযোগ তদারকি করে তাদের আরো উন্নত সেবা দেয়ার চেষ্টা করি। সম্প্রতি ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক কঠোর অবস্থান নেয়ার কারণে ব্যাংকগুলোয় গ্রাহক হয়রানি কমছে বলে দাবি করেন তিনি।
×