ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার;###;শামসুল আলমের জবানবন্দী

হাসান আলী হাঁটু গেড়ে গুলি করে তিনজনকে হত্যা করে

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

হাসান আলী হাঁটু গেড়ে গুলি করে তিনজনকে হত্যা করে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত কিশোরগঞ্জের রাজাকার কমান্ডার হাসান আলীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ১৫তম সাক্ষী আলহাজ মোঃ শামসুল আলম জবানবন্দীতে বলেছেন, নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ১৭/১৮ জন হিন্দু নারী- পুরুষ নৌকাযোগে ভারতের উদ্দেশে যাত্রা করেন। বেলংকা গ্রামের পাশে রাজাকাররা নৌকা থেকে পুরুষদের ধরে বেঁধে ফেলে। এর পর হাসান আলী গুলি করে তিনজনকে হত্যা করে। এরপর রাজাকাররা একটি বালকসহ আরও ৫ জনকে গুলি করে হত্যা করে। জবানবন্দী শেষে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী সাক্ষীকে জেরা করেন। পরবর্তী সাক্ষীর জবানবন্দীর জন্য ১৬ ফেব্রুযারি দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে পটুয়াখালীর রাজাকার ফোরকান মল্লিকের বিরদ্ধে ৫ম সাক্ষীর জেরা শেষ করেছেন আসামি পক্ষের আইনজীবী। একই সঙ্গে মতিলাল রায়কে অতিরিক্ত সাক্ষী হিসেবে প্রসিকিউশনের আবেদন মঞ্জুর করেছেন ট্রাইব্যুনাল। পরবর্তী সাক্ষীর জবানবন্দীর জন্য সোমবার দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও ২ এ আদেশগুলো প্রদান করেছেন। কিশোরগঞ্জের রাজাকার কমান্ডার হাসান আলীর জবানবন্দী অব্যাহত রয়েছে। পরবর্তী সাক্ষীর জবানবন্দীর জন্য ১৬ ফেব্রুয়ারি দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল-১ এ আদেশ প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দু’সদস্য ছিলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক। সাক্ষীর জবানবন্দীতে সহায়তা করেন প্রসিকিউটর আবুল কালাম। অন্যদিকে রাষ্ট্র নিয়োজিত আসামি পক্ষের আইনজীবী ছিলেন আব্দুস শুকুর। সাক্ষী জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম আলহাজ মোঃ শামসুল আলম। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৬১/৬২ বছর। আমার ঠিকানা- গ্রাম বোরগাঁও, থানা-তাড়াইল, জেলা- কিশোরগঞ্জ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল আনুমানিক ১৭/১৮ বছর। আমি পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে আমি কৃষিকাজ এবং বর্ষার মৌসুমে যৌথভাবে পাটের ব্যবসা করতাম। ১৯৭১ সালে ২৭ সেপ্টেম্বর আমি আমার ব্যবসায়ী অংশীদারগণসহ নৌকাযোগে চৌগাঙ্গা বাজারে পাট কেনার জন্য যাই। বাজার হতে পাট ক্রয় করার পর বিকেলের দিকে ক্রয়কৃত পাট নৌকায় নিয়ে বাড়ির পথে রওনা হই। সন্ধ্যার কাছাকাছি সময়ে আমরা কুড়েরপাড়ের নিকট পৌঁছাই। ঐ সময় আমরা লক্ষ্য করি যে, মাঝারি সাইজের তিনটি নৌকা আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। ঐ তিনটি নৌকায় আনুমানিক ৩০ জন লোক ছিল। যাদেন পরনে খাকি পোশাক, মাথায় টুপি এবং সঙ্গে অস্ত্রও ছিল। তারা আমাদের জিজ্ঞাসা করে আমাদের নৌকায় কোন হিন্দু লোক আছে কিনা। উত্তরে আমরা বলি, আমাদের নৌকায় কোন হিন্দু লোক নেই। তখন তারা নৌকাটিকে তল্লাশি করে কোন হিন্দুকে না পেয়ে নৌকাটি ছেড়ে দেয়। সাক্ষী আরও বলেন, মারকান বিলে একটি নৌকা দেখতে পেয়ে আমাদের সঙ্গে নিয়ে যায়। ঐ নৌকায় আনুমানিক ১৭/১৮ জন নারী, পুরুষ ও শিশু যারা সকলেই হিন্দু নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ভারতের উদ্দেশে রওনা হয়েছিল। রাজাকাররা তাদের বেলংকা গ্রামের পাশে থামায়। পুরুষদের আলাদা করে নৌকার ছইয়ের উপরে উঠতে বলে। এরপর একজন খাকি পোশাক পরা লোক যার মাথায় টুপি ছিল সে অন্যদের নির্দেশ দিয়ে বলে পুরুষ লোকদের রাস্তার উপরে নিয়ে আসার জন্যে। প্রথমে তিন জনকে নৌকা থেকে নামিয়ে আনা হয়। এরপর যে লোকটি নির্দেশ দিয়ে বলেছিল তাদের রাস্তার উপরে নিয়ে আসার জন্য। সেই লোকটি হাঁটুগেড়ে রাইফেল দিয়ে ঐ তিনজনকে গুলি করে হত্যা করে। এর পর এক বালকসহ আরও ৫ জনকে গুলি করে হত্যা করে রাজাকারবাহিনী। পরে গ্রামে ফিরে এসে মুরুব্বিদের কাছে জানতে পারি যে লোকটি গুলি করে হিন্দুদের হত্যা করেছে সে মাওলানা মুসলেম উদ্দিনের ছেলে হাসান আলী দারোগা। ফোরকান মল্লিক ॥ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত পটুয়াখালীর রাজাকার ফোরকান মল্লিকের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের পঞ্চম সাক্ষী মোঃ সেলিম হাওলাদারের জেরা শেষ করেছেন আসামি পক্ষের আইনজীবী। একই সঙ্গে মতিলাল রায়কে অতিরিক্ত সাক্ষী হেসেবে সাক্ষ্য প্রদানের প্রসিকিউশনের আবেদন মঞ্জুর করেছেন ট্রাইব্যুনাল। ৬ষ্ঠ সাক্ষীর জবানবন্দীর জন্য সোমবার দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ আদেশ প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দু’সদস্য ছিলেন বিচারপতি মোঃ মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলাম। এ সময় প্রসিকিউশন পক্ষে ছিলেন প্রসিউিটর মোখলেসুর রহমান বাদল ও প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি। আসামি পক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম খান।
×