ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাকটেরিয়া পেলে সবজি রফতানি বন্ধ

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

ব্যাকটেরিয়া পেলে সবজি রফতানি বন্ধ

এম শাহজাহান ॥ ব্যাকটেরিয়াযুক্ত শাক-সবজি ও ফল রফতানি করলে উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিবে সরকার। ইতোমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ত্রুটিযুক্ত ফলমূল বিক্রি করায় বাংলাদেশকে সতর্ক করেছে। ইইউ বলেছে, ব্যাকটেরিয়া ফ্রি না হলে ভবিষ্যতে তারা পান ও কাকরোলের মতো অন্যসব সবজি আমদানিও বন্ধ করতে পারে। এই বাস্তবতায় সরকারের পক্ষ থেকেও উদ্যোক্তাদের সতর্ক করা হয়েছে। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একাধিক বৈঠক হওয়ার পরও এ বিষয়ে করণীয় এখনও ঠিক করা যায়নি। আবারও বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। জানা গেছে, রফতানি করা চালানে ত্রুটি পাওয়ায় সতর্ক করেছে ইইউ। এক বছরে রফতানি করা পণ্যের মধ্যে ১২০টি চালানে ত্রুটির কথা জানিয়ে এ সমস্যা দ্রুত সমাধান করা না হলে ফল ও সবজি রফতানি আদেশ বাতিলের হুমকি দিয়েছে ইইউ। কিছু অসাধু রফতানিকারক মানহীন পণ্য রফতানি করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্ভিদ স্বাস্থ্য সনদ জালিয়াতি করে পণ্য পাঠাচ্ছে। তবে সরকার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে বাণিজ্য সচিবের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটিতে কৃষিসচিব, শিল্পসচিব, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের একজন প্রতিনিধিও রয়েছেন। বাংলাদেশে উৎপাদিত শাক-সবজি, আলু ও পান পাতা ও ফলমুল ব্যাকটেরিয়ামুক্ত উৎপাদন ও রফতানিযোগ্য করার বিষয় পরীবিক্ষণ ও সুপারিশ প্রণয়ন করবে এই কমিটি। কিন্তু গত এক বছরেও শাক-সবজি রফতানিতে ভালো কোন সুখবর আসছে না। যদিও বিশ্বের প্রায় পঞ্চাশটি দেশে বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতের সবজি ও ফলমুল রফতানি হচ্ছে। আর এই রফতানি থেকে বছরে আয় হচ্ছে ৬৫০ কোটি টাকা। তবে রফতানি বাড়ানো গেলে সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী বছরে সবজি রফতানি থেকে আয় হবে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। রফতানি বহুমুখীকরণে শাক-সবজি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ কারণে ইউরোপের ২৭টি দেশে শতভাগ স্যালমোনিলা মুক্ত পান ও ব্যাকটেরিয়ামুক্ত শাক-সবজি রফতানির উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। জানা গেছে, বিদেশে বাংলাদেশের শাক-সবজির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু চাহিদার মাত্র ২ থেকে ৫ শতাংশ রফতানি করতে পারছেন উদ্যোক্তারা। এ কারণে রফতানি বৃদ্ধিতে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া, রোগ-বালাই ও পোকামাকড় দূর করে সবজির উৎপাদন বৃদ্ধি, উপযুক্ত ল্যাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে গ্রহণযোগ্য সার্টিফিকেটসহ ইউরোপীয়ান ইউনিয়নে রফতানির পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যমতে, ২০১১-১২ অর্থবছরে ৬৫০ কোটি ৪১ লাখ ২০ হাজার টাকার সবজি রফতানি হয়েছে। রফতানির পরিমাণ প্রতিবছর বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানী, ডেনমার্ক, সুইডেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ওমান ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের প্রায় ৫০টি দেশে বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতের সবজি ও ফলমুল রফতানি হয়। তবে যেসব দেশে বাংলা ভাষাভাষীরা বসবাস করছে সেসব দেশে বাংলাদেশের সবজি রফতানির চাহিদা বেশি। জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রফতানি) শওকত আলী ওয়ারেছী জনকণ্ঠকে বলেন, শাক-সবজি রফতানি বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে সরকার। রফতানিকৃত সবজিতে ব্যাকটেরিয়া ধরা পড়ায় ইইউ সতর্ক করায় সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে কয়েকটি বৈঠক করা হয়েছে। শীঘ্রই আবারও বৈঠক করা হবে। শাক-সবজি রফতানি যাতে কোনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হতে পারে সেদিকে সরকারের নজর রয়েছে। প্রয়োজনে ভুয়া রফতানিকারক ও যারা সনদ জালিয়াতি করে রফতানি কার্যক্রমে জড়িত রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে, ইউরোপীয় কমিশনের ডিজি হেলথ এ্যান্ড ফুড সেফটির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে নবেম্বর পর্যন্ত ইইউর বাজারে সবজি ও ফল রফতানিকারক দেশগুলোর মধ্যে ৪১টি দেশে এ ত্রুটি ধরা পড়েছে। এর মধ্যে মানের দিক থেকে পিছিয়ে থাকা দেশের তালিকায় সপ্তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। শীর্ষ দশের তালিকায় প্রথম অবস্থানে ঘানা, দ্বিতীয় কম্বোডিয়া, তৃতীয় চীন, চতুর্থ ভারত, পঞ্চম ডোমিনিকান রিপাবলিক এবং ষষ্ঠ শ্রীলংকা। বাংলাদেশের ১২০টি চালানের মধ্যে কাকরোলে মাছি ও পোকা, লেবুতে ব্যাকটেরিয়া, আলু, টমেটো, ক্যাপসিকামসহ বিভিন্ন সবজিতে পোকা পাওয়া গেছে। যদিও গত এক যুগে দেশে রীতিমতো সবজি বিপ্লব ঘটেছে। মানসম্মত সবজির উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে রফতানিও বেড়েছে। ঠিক এ সময়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সনদ জালিয়াতি করে মানহীন সবজি রফতানির কারণে ঝুঁকিতে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থা (এফএও) জানায়, সবজি উৎপাদন বৃদ্ধির হারের দিক থেকে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয়। স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশে সবজির উৎপাদন বেড়েছে পাঁচ গুণ। গত এক দশকে বাংলাদেশে সবজির আবাদি জমির পরিমাণ ৫ শতাংশ হারে বেড়েছে। এমন অবস্থায় ত্রুটির কারণে রফতানিতে বাজার হারানোর শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ফ্রুটস ভেজিটেবলস এ্যান্ড এ্যালাইড প্রডাক্টস এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, ইইউর কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী অগ্রগতি হচ্ছে।
×