ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

খালেদা জিয়া দেশকে জল্লাদখানা বানাতে চান ॥ শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

খালেদা জিয়া দেশকে জল্লাদখানা বানাতে চান ॥ শেখ হাসিনা

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতা-নাশকতার বিরুদ্ধে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, খালেদা জিয়া বাংলাদেশকে জল্লাদখানা বানাতে চান। এই জল্লাদের কাছে অরণ্য রোদন করে কোন লাভ নেই। আন্তর্জাতিক জঙ্গীগোষ্ঠী আইএস (ইসলামিক স্টেট) ও বিএনপি-জামায়াত জোট। আইএসও মানুষ পুড়িয়ে মারছে, বিএনপি-জামায়াত জোটও নিষ্ঠুরভাবে কায়দায় মানুষ হত্যা করছে। তবে দেশের কল্যাণ ও মানুষের জানমালের নিরাপত্তা যে যে পদক্ষেপ নিতে হয় আমরা নেব। এজন্য আমি দেশবাসীর সহযোগিতা ও সমর্থন চাই। দেশবাসীও যেন এই অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এসএসসি পরীক্ষার মধ্যে আর হরতাল-অবরোধ না দিতে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেত্রীকে বলব উনি যেন এসএসসি পরীক্ষার মধ্যে হরতাল-অবরোধের নামে মানুষ হত্যা বন্ধ করেন। আর যেন হরতাল-অবরোধ না দেন। দেশের ১৫ লাখ শিক্ষার্থীর জীবনকে ধ্বংস না করেন। দেশের ভবিষ্যত নাগরিকদের জীবন ধ্বংস করে দিয়ে উনি পেতে চান? তাই বলব পরীক্ষার সময়টুকু ক্ষান্ত দিন, পরে যা করার করবেন। ভয়-আতঙ্কের মধ্যে নয়, নির্বিঘেœ পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষাটুকু দিতে দিন। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, বিএনপি নেত্রী আর কত রক্ত চান? আর কত লাশ পড়লে তাঁর আত্মার শান্তি আসবে? তিনি বলেন, আসলে খালেদা জিয়া জামায়াত-জঙ্গীদের সঙ্গে নিয়ে দেশের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। জনগণের বিরুদ্ধে তিনি জিঘাংসা চরিতার্থ করছেন। কিন্তু এসব সহ্য করা হবে না। জনগণের জানমাল রক্ষায় যা যা করার তার সবই করা হবে। শুক্রবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের জরুরী বৈঠকের প্রারম্ভিক বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। পরে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বিএনপি-জামায়াতের নাশকতা-সহিংসতা রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলায় বেশকিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সূচনা বক্তব্যের শুরুতেই ফুটবলে বাংলাদেশের বিজয় এবং সুষ্ঠুভাবে এসএসসির প্রথম পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ায় আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রথম পরীক্ষায় উপস্থিতিও সন্তোষজনক। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের হিতাহিত জ্ঞান নেই, উম্মাদ হয়ে গেছে বলেই ১৫ লাখ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যতকেও অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিতে চাইছে। কীসের আশায় বিএনপি নেত্রী এসব করছেন? আসলে উনি কি চান? এদের কাছে ব্যক্তি স্বার্থই বড় কথা, দেশের লাখ-কোটি শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত এদের কাছে কিছু নয়। আগুনে পুড়িয়ে পুড়িয়ে একেকটা পরিবারের ভবিষ্যতকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। সহানুভূতি জানাতে গিয়েও বিএনপির কার্যালয় থেকে ফিরে আসার ঘটনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ছেলের মৃত্যুতে সহানুভূতি জানাতে ছুটে গেলাম, কিন্তু গেটে তালাবন্ধ করে অপমান করে আমাকে ফিরে দেয়া হলো। একজন চরম শত্রুও এমন শোকের সময় গেলে কেউ ফিরিয়ে দেয় না। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগেও সবকিছু ভুলে টেলিফোন করেছিলাম। কিন্তু সে সময়ও আমাকে যেভাবে অপমান করা হয়েছে, তা দেশবাসী দেখেছে। জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িত। আর ২১ আগস্ট আমাকে হত্যার জন্য গ্রেনেড হামলার সঙ্গে বিএনপি নেত্রী, তার পুত্র ও তার মন্ত্রীরা জড়িত। এরপরও ফোন করেছিলাম। আবার পুত্রের মৃত্যুর পর শোক জানাতে গিয়েছিলাম। তিনি বলেন, কিছু মানুষ ও আঁতেল আছে তারা সংলাপ ও আলোচনার কথা বলেন। কিন্তু দেখা করতে গিয়েও যে দুর্ব্যবহার করা হলো। এখন তারা কী বলবেন? ওই সময় কি বিএনপির কার্যালয়ে একজন ভদ্রলোকও ছিলেন না, তাঁরা আমাকে ভেতরে নিয়ে তাঁদের কাছেই শোক জানাতে দিতে পারতেন? বিএনপি-জামায়াত জোটের কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইএস যেভাবে মানুষকে পুড়িয়ে মারছে, তার চেয়েও ভয়ঙ্করভাবে খালেদা জিয়ারা মানুষকে পুড়িয়ে মারছে। দেশবাসী ভেবেছিল, ছেলের মৃত্যুর পর হয়ত খালেদা জিয়া অবরোধ-হরতাল প্রত্যাহার করে মানুষ হত্যা বন্ধ করবেন। কিন্তু তা হয়নি। কেমন নিষ্ঠুর মা বিএনপি নেত্রী যে মৃত ছেলের লাশটুকুও বাড়িতে নেননি। একটিবার কবর জিয়ারত পর্যন্ত করতে যাননি। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই তো কোকো অসুস্থ ছিল। কি এমন কাজ ছিল যে বিএনপি নেত্রী একটিবার মালয়েশিয়ায় গিয়ে ছেলে, নাতি-পুতিদের সঙ্গে সময় কাটালেন না, দেখতে পর্যন্ত গেলেন না! তিনি বলেন, যার ছেলের মৃত্যুতেও শোক নেই, সেই নেত্রী দেশের মানুষের কষ্ট-যন্ত্রণার কথা বুঝবেন কী করে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছেলের স্বাভাবিক মৃত্যুতে বিএনপি নেত্রীকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়াতে হয়, আর রাস্তায় চোখের সামনে যে মা বা বাবা নিজের সামনে সন্তানকে পুড়ে মারা যাওয়ার দৃশ্য দেখেছে তার মনে ভীষণ যন্ত্রণা, কষ্ট ও ব্যথা কী খালেদা জিয়া অনুভব করেন না? তাঁর হৃদয় কী এতটুকুও ব্যথিত হয় না। খালেদা জিয়ার পেট্রোলবোমায় দেশের উন্নয়ন, জনগণের প্রাণ সবকিছু ধ্বংস হচ্ছে। একাত্তরের মতোই নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছেন। উনার আন্দোলনের সঙ্গে জনগণের ন্যূনতম সম্পর্ক নেই। আর কত রক্ত পেলে উনি তৃপ্ত হবেন। তাই দেশবাসীকে বলব ঐক্যবদ্ধভাবে এই অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। আমরা জনগণের জানমাল রক্ষা করতে যা যা পদক্ষেপ নিতে হয়, তা-ই নেব।
×