ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বোমা মেরে পালাতে গিয়ে বন্দুকযুদ্ধে জামায়াত শিবিরের ৩ নেতা হত

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বোমা মেরে পালাতে গিয়ে বন্দুকযুদ্ধে জামায়াত শিবিরের ৩ নেতা হত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কুমিল্লা, রাজশাহী ও যশোরে পুলিশের গাড়িতে বোমা হামলা করে পালানোর সময় বন্দুকযুদ্ধে জামায়াত-শিবিরের তিন বোমাবাজ নিহত হয়েছে। সাতক্ষীরায় পুলিশের গাড়িতে বোমা হামলা করে পালানোর সময় এক ছাত্রদল নেতা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এদিকে বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের তা-বের বিরুদ্ধে জনতার প্রতিরোধ দিন দিন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিনিয়ত গণপিটুনির শিকার হচ্ছে নাশকতাকারীরা। নাশকতাকারীদের গ্রেফতারে দেশব্যাপী যৌথ বাহিনীর চলমান সাঁড়াশি অভিযানে তিনশতাধিক গ্রেফতার হয়েছে। গ্রেফতার-কৃতদের মধ্যে বোমাবাজ ছাড়াও বোমা তৈরি, মজুদ ও সরবরাহকারীসহ নাশকতা-কারীদের মদদ ও অর্থদাতা রয়েছে। গত ৩ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে নৈশকোচে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোলবোমা মেরে আটজনকে হত্যার পর বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশের গাড়িতে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় বোমাবাজদের সঙ্গে পুলিশের বন্দুকযুদ্ধে বোমাবাজ এক শিবির নেতার মৃত্যু হয়। পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম এলাকায় টহল ডিউটি করছিল। এ সময় আচমকা পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। পুলিশ হামলাকারীদের পিছু নেয়। এ সময় হামলাকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। এ সময় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় এক যুবককে আটক করে পুলিশ। আহত যুবককে দ্রুত কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শুক্রবার সকাল ছয়টার দিকে আহত যুবকের মৃত্যু হয়। নিহত যুবক শাহাবুদ্দিন পাটোয়ারী (২৮) বলে জানা গেছে। তিনি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা ছাত্র শিবিরের সভাপতি ছিলেন। তার বাড়ি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম পৌরসভা এলাকার চান্দিশকরা গ্রামে। নিহত শাহাবুদ্দিন পাটোয়ারী কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ছিলেন বলে তার পরিবারের দাবি। কুমিল্লার পুলিশ সুপার টুটুল চক্রবর্তী জানান, পুলিশের ওপর হামলার পর গোলাগুলিতে ওই শিবির নেতা নিহত হন। এদিকে বৃহস্পতিবার রাত নয়টার দিকে রাজশাহীর কাঁটাখালী পৌরসভার শমসাদিপুরে পুলিশের গাড়িতে অতর্কিতে বেপরোয়া বোমা হামলা চালায় ছাত্র শিবিরের বোমাবাজরা। মারাত্মক হামলায় দিশেহারা হয়ে পড়ে পুলিশ সদস্যরা। তারা দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে বোমাবাজদের পিছু নেয়। বোমাবাজরা বিভিন্ন গলিতে ঢুকে পড়ে। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে আবার বোমা হামলা চালায়। এ সময় পুলিশও গুলি চালায়। গুলিতে ঘটনাস্থলেই ছাত্র শিবিরের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তথ্য বিষয়ক সম্পাদক শাহাবুদ্দিনের (২৪) মৃত্যু হয়। নিহত শাহাবুদ্দিন নাটোরের ছাতনি গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে ছিলেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শস্যবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ছিলেন। আর গুলিতে আহত হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র শিবিরের হবিবুর রহমান হল শাখার সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিব (২৫) ও ছাত্র শিবিরের বিনোদপুর মেস শাখার সভাপতি মফিজুর রহমান (২৩) এবং পুলিশ কনস্টেবল মাহাবুবুর রহমান। আহত ছাত্র শিবির নেতা হাবিব রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের চতুর্থ বর্ষের এবং মফিজুর আরবী বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন জানান, আহত দুই ছাত্র শিবির নেতা ও পুলিশ সদস্যকে রাত দুটোর দিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদিকে বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটার দিকে যশোর সদর উপজেলার রামনগর পিকনিক কর্নার এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে জামায়াত কর্মী শহীদুল ইসলামের (৩৮) মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ জানায়, বন্দুকযুদ্ধের রাতে পুলিশের একটি টহল গাড়ি একটি সাদা মাইক্রোবাসকে থামার সঙ্কেত দেয়। সঙ্কেত উপেক্ষা করে মাইক্রোবাসটি দ্রুত চলে যেতে থাকে। পুলিশ মাইক্রোবাসটির পিছু নেয়। এ সময় মাইক্রোবাস থেকে পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা হামলা ও গুলি চালাতে থাকে। পুলিশও পাল্টা গুলি চালাতে থাকে। যশোর-খুলনা মহাসড়কে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে জামায়াত কর্মী শহীদুল আহত হয়। আহত শহীদুলকে যশোর কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে শুক্রবার ভোরে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত শহীদুল ইসলাম সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কাশিমপুর গ্রামের মৃত নূর আলী সোনার ছেলে। ছাত্র শিবিরের সাবেক কর্মী শহীদুল জামায়াতে ইসলামীর স্বক্রিয় কর্মী ছিলেন। যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কেএম আরিফুল হক জানান, যশোরের শার্শা থানা পুলিশ বৃহস্পতিবার দুপুরে শহীদুল ও আবদুল মজিদকে আটক করে। পরে তাদের যশোর আদালতে নেয়ার পথে পুলিশের গাড়ি থেকে শহীদুল লাফিয়ে পড়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় যশোর কোতোয়ালি থানায় একটি জিডি করা হয়। ঘটনার পর থেকেই শহীদুলকে গ্রেফতারের জন্য বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চলছিল। তল্লাশিকালে শহীদুল ও তার সহযোগীদের বহনকারী গাড়ি থেকে পুলিশের গাড়ির ওপর বোমা হামলা ও গুলি চালানো হয়। পুলিশ পাল্টা গুলি চালালে শহীদুলের মৃত্যু হয়। গাড়িটি পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। নিহত শহীদুলের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া থানায় হত্যাসহ নাশকতার বিভিন্ন অভিযোগে পাঁচটি মামলা রয়েছে। এদিকে শুক্রবার ভোরে সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়ার ঠাকুরবাড়ি এলাকায় পুলিশের ওপর বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। বোমা হামলায় এএসআই ইকবাল ও কনস্টেবল শাহাদাত আহত হন। পুলিশ বোমা হামলাকারীদের পিছু নেয়। এ সময় বোমাবাজরা দ্বিতীয় দফায় পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা হামলার পাশাপাশি গুলি চালায়। পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। এ সময় কলারোয়া পৌর ছাত্রদলের সভাপতি আবদুল মজিদের (৩৭) হাঁটুতে গুলিবিদ্ধ হয়। আবদুল মজিদকে সাতক্ষীরা জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি আশঙ্কামুক্ত। ঘটনাস্থল থেকে একটি শাটার গান ও কয়েক রাউন্ড গুলির খোসা উদ্ধার হয়েছে। আহত আবদুল মজিদ তুলশিডাঙ্গা গ্রামের আবদুস সাত্তারের ছেলে। কলারোয়া থানার উপ-পরিদর্শক কামাল হোসেন জানান, আহত মজিদ তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে বোমা হামলা মামলার ঘটনায় বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে দায়েকৃত মামলাসহ ৪ মামলার পলাতক আসামি। ওদিকে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের পাথরঘাটা গ্রামের আব্দুর রহমানের বাড়িতে গোপন বৈঠক করার সময় যৌথ বাহিনীর চলমান অভিযানে ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়ন জামায়াতের সভানেত্রী ও জেলা জামায়াতের রোকন আব্দুল বারীর স্ত্রী জাহানারা বেগম (৪৮) ও একই ইউনিয়নের ওয়ারিয়া গ্রামের গোলাম মোস্তফার স্ত্রী জামায়াতের রোকন শুকতারা বেগমসহ (৩৬) গ্রেফতার হয় ৩৮ জন। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ২২ জন বিএনপির এবং ১৪ জন জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী। শুক্রবার ভোরে যৌথ বাহিনীর অভিযানে ফেনী শহরের রামপুর এলাকার একটি বাসা থেকে আবদুল্লাহ আল মিয়াজি ওরফে ইয়েন (১৪) নামে এক স্কুলছাত্রকে বোমা তৈরির সরঞ্জাম ও পটকাসহ গ্রেফতার করা হয়েছে। ইয়েন নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার কালিরহাট এলাকার মোহাম্মদ ইয়াসিনের ছেলে। সে ফেনী শহরের রামপুর শাহীন একাডেমি স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র। ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুব মোর্শেদ জানান, ইয়েন বোমা তৈরির নানা সরঞ্জাম মজুত করছিল। জব্দকৃত সরঞ্জাম দিয়ে তৈরি বোমা বিএনপির ডাকা দেশব্যাপী চলমান অবরোধ-হরতালে নাশকতা চালাতে ব্যবহারের কথা ছিল। ইয়েন মহাসড়কে বেশকিছু যানবাহন ভাংচুর মামলার আসামি। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার পর্যন্ত যৌথ বাহিনীর অভিযানে চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গা থেকে জামায়াত-শিবিরের ১৭ জন ও ১২ জন বিএনপি নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছে। বৃহস্পতিবার গভীররাতে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার আটাপাড়ায় একটি জিপ গাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে একটি পিস্তল ও ৭ রাউন্ড তাজা বুলেট উদ্ধার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। জয়পুরহাট-৩ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল আব্দুর রাজ্জাক তরফদার জানান, এ ঘটনায় গাড়িটির চালক সাদেকুল ইসলামকে (২২) গ্রেফতার করা হয়েছে। সাদেকুল জয়পুরহাট শহরের আমতলী এলাকার বাসিন্দা। জিপ গাড়িটি দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার হিলি স্থলবন্দর থেকে জয়পুরহাটে যাচ্ছিল। চালককে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। বৃহস্পতিবার রাতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার বেতিহাটি গ্রাম থেকে জামায়াত-শিবিরের তিন নেতাকর্মীসহ ৫ জন গ্রেফতার হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে ৩টি পেট্রোলবোমা।
×