ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাণিজ্যমেলায় অবরোধেও মানুষের ঢল

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

 বাণিজ্যমেলায় অবরোধেও  মানুষের ঢল

রহিম শেখ ॥ হরতাল নেই, কিন্তু টানা অবরোধ থাকলেও শুক্রবার ছুটির দিনে বাণিজ্যমেলা হয়ে উঠেছিল জনসমুদ্র। বর্ধিত সময়ের মেলার শেষ সপ্তাহের ছুটির দিন থাকায় সকাল থেকেই দর্শনার্থী ও ক্রেতার স্রোত ছিল মেলা প্রাঙ্গণের দিকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেলায় রীতিমতো মানুষের ঢল নামে। বিকেলের দিকে মেলায় তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। সন্ধ্যায় দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ক্রেতা-দর্শনার্থীকে মেলায় প্রবেশ করতে দেখা যায়। শেষ মুহূর্তের পছন্দের পণ্য কিনতে দিনভর স্টল ও প্যাভিলিয়নগুলোতে ছিল উপচেপড়া ভিড়। অনেক ক্রেতাই ছুটে বেরিয়েছেন বিশেষ ছাড় কিংবা ডিসকাউন্টে পণ্য কিনতে। ছুটির দিনে ক্রেতার বাড়তি চাপে বিক্রি নিয়ে সন্তুষ্টির কথা জানালেন বিক্রেতারা। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতায় মাসজুড়ে ভাল ব্যবসা করতে না পারায় শেষের ক’দিন হরতাল-অবরোধ না দেয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আহ্বান জানান ব্যবসায়ীরা। মেলার আয়োজক রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) জানিয়েছে, ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হয়েছে গত ৩১ ডিসেম্বর। চলছে বর্ধিত মেয়াদের মেলা। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি সমাপনী অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে শেষ হচ্ছে মাসব্যপী অনুষ্ঠিত বাণিজ্যমেলা। শুক্রবার দুপুরের পর থেকেই মেলা প্রাঙ্গণ মানুষের ভিড়ে কানায় কানায় পূর্ণ ছিল। বিকেল হতে না হতেই মেলার সামনের প্রাঙ্গণও পূর্ণ হয়ে যায়। শেষ বিকেলে আগত যারা তাদের প্রায় ঘণ্টাখানেক দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে প্রবেশ টিকেট কাটতে হয়েছে। মেলার আশপাশের সড়কে দুপুরের পর থেকে যানজট লেগে ছিল। অনেকেই ফার্মগেট থেকে হেঁটে মেলায় আসেন। আর এ সড়ক থেকে মেলার প্রধান ফটক পর্যন্ত ছিল মানুষের ঢল। আগারগাঁওয়ের আইডিবি ভবন থেকে মেলার প্রবেশপথ পর্যন্ত ছিল দীর্ঘ লাইন। অন্যদিকে গণপরিবহনে যাওয়া মানুষ মেলা প্রাঙ্গণের কাছাকাছি নেমে হেঁটে যেতে পারলেও বেশি ভোগান্তি হয়েছে নিজস্ব বাহনে আসা দর্শনার্থীর। এদিকে মেলার প্রবেশপথে ব্যাপক লোক সমাগমে হিমশিম খেতে হয় শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা কর্মীদের। দুপুরের পর থেকে টিকেট কাউন্টারের সামনে তৈরি হয় লম্বা লাইন ও জটলা। এদিকে মেলার সময়ের পরিধি কমতে থাকায় বিশেষ মূল্যছাড় ও উপহার দিয়ে ক্রেতা আকর্ষণের চেষ্টা করছেন দোকানিরা। প্রায় প্রতিটি স্টল ও প্যাভিলিয়নে নগদ ক্রয়ের ওপর বিভিন্ন অঙ্কের ছাড়, নানা ধরনের উপহার, স্ক্র্যাচকার্ডে পণ্য জিতে নেয়ার সুযোগ, প্যাকেজ অফারে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা ছাড় দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। মেলায় অংশ নেয়া লেদার ফেয়ারের মালিক এ কে শামিম হোসেন জানান, দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এবারের বাণিজ্যমেলা পুরো এলোমেলো হয়ে গেল। যে লক্ষ্য নিয়ে মেলায় আসা হয়েছিল সে লক্ষ্য এখনও পূরণ হয়নি। প্রাণের প্যাভিলিয়নের কর্মকর্তা সামিউল হাসান বলেন, শুরুতে প্রত্যাশা এবং কর্মপরিধি ব্যাপক ছিল। কিন্তু দিন দিন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সে কর্মপরিধি এবং প্রত্যাশাতে পানি ঢেলে দিয়েছে। পাকিস্তানী প্যাভিলিয়নের কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর জানান, রাজনৈতিক অস্থিরতায় মাসজুড়ে ভাল ব্যবসা হয়নি। শেষের ক’দিন অন্তত হরতাল-অবরোধ না দেয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আহ্বান জানান তিনি। শুক্রবার বাণিজ্য মেলায় দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেছে প্লাস্টিল, ফার্নিচার ও ইলেক্ট্রনিক্সের প্যাভিলিয়নগুলোতে। বিভিন্ন অফার নিয়ে মেলায় অংশ নেয়া নামী-দামী কোম্পানিগুলো নজর কেড়েছে ক্রেতা ও দর্শনার্থীর। ইলেক্ট্রনিক্স ও অটোমোবাইলের প্যাভিলিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, এবার তরুণদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে দুরন্ত নামের মোটরসাইকেল। পছন্দের তালিকায় এর পরই রয়েছে প্লাস। কারণ রানারের প্যাভিলিয়নে দেখা গেল তরুণদের ভিড়। মোটরসাইকেলের পাশাপাশি পিকআপ, ট্রাক এবং লরিও দেখা গেছে। এদিকে প্রতেকটি পণ্যের সাথে রয়েছে নগদ ছাড়, ফ্রি সার্ভিসিং ও গিফট। দুরন্ত ৮০-সিসি মোটরসাইকেলের দাম মাত্র ৫৬ হাজার টাকা, আর প্লাস এক’শ ১০ সিসি মোটরসাইকেলের দাম মাত্র ৯৮ হাজার টাকা। এছাড়াও রয়েছে বুলেট, ডি-লাক্স, চিতা, টারবো, টারবার, এফ ১০০-৬৪, বিজয়, বুলেট- ১৩৫ মডেলের মোটরসাইকেল। রানারের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ আলেক খন্দকার বলেন, এবারের মেলায় প্রতিটি মোটরসাইকেলে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত ছাড় দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ইনস্টলমেন্টেরও ব্যবস্থা রয়েছে। শুক্রবার ওয়ালটন, রানার, যমুনা, সনিসহ বিভিন্ন নামীদামী প্যাভিলিয়নে সারাদিনই ভিড় লেগেছিল। এরমধ্যে দেশীয় পণ্যের আধিক্য ছিল বেশি। বিদেশী পণ্যের চেয়ে দেশী পণ্যের দাম তুলনামূলক কম এব মানেও ভাল হওয়ায় সেদিকেই বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন তারা। এক্ষেত্রে ওয়ালটন ফ্রিজই এগিয়ে রয়েছে বলেই সরেজমিন মেলা ঘুরে দেখা গেছে। আরেক দেশীয় ব্র্যান্ড আরএফএল গ্রুপের ভিশন রেফ্রিজারেটরেও দেয়া হচ্ছে বিশেষ ছাড়। মেলার কর্মকর্তারা জানান, ভিশন ব্র্যান্ডটি নতুন হলেও মেলায় প্রচুর সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। ভিশন প্যাভিলিয়নে মিটসুবিশি ফ্রিজও বিক্রি হচ্ছে বলে তারা জানান। এদিকে সিঙ্গারের শোরুমে বিক্রি হচ্ছে সিঙ্গার ব্র্যান্ডের পাশাপাশি গোড়রেজ ও সিমেন্স ফ্রিজ। এই ব্র্যান্ডেও পাঁচ শতাংশ ছাড়ের পাশাপাশি সিঙ্গারের সব পণ্য ফ্রি হোম ডেলিভারি দেয়া হচ্ছে বলে কর্মকর্তারা জানান। বাণিজ্যমেলা ঘুরে দেখা গেছে, মাত্র ২৩০০ টাকায় সিনথেটিক ফাইবারের আধুনিক কমফোর্টার, বেডশীট ও বালিশের কভারসহ মোট ৬টি আইটেম একসঙ্গে দিচ্ছে কে এ্যান্ড আর নামের একটি কোম্পানি। কম দামে বেডরুম সাজানোর ৬টি আইটেম একসঙ্গে পাচ্ছেন ক্রেতা-দর্শনার্থীরা। সে কারণে স্টলটি ঘিরে দেখা গেছে দর্শনার্থীর ভিড়। কোম্পানির উদ্যোক্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সায়েম রানা জানান, মেলায় অন্যান্য কোম্পানির কম্বল-বেডশীট থাকলেও এই কোম্পানির কমফোর্টারটির (কম্বল জাতীয়) কাটতি বেশি। কোরিয়ান, চাইনিজ, জাপানিজসহ বিভিন্ন দেশের ফ্যাশনেবল গহনা কিনতে নারী ও তরুণীদের ভিড় দেখা গেছে। এছাড়া বেশ কয়েকটি ফুড ও বেভারেজ কোম্পানির স্টল ঘুরে দেখা যায়, নানারকম বাহারি বিস্কুট, জুস, চানাচুর, চিপ্স নজরকাড়া মোড়কে বিশেষ প্যাকেজ কিনতে রীতিমতো লাইন দিয়েছেন ক্রেতারা। রাজধানীর বনশ্রি থেকে মেলায় আসা বেসরকারী ব্যাংক কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, এতদিন হরতাল ছিল বলে মেলায় আসা হয়নি। তবে অবরোধ থাকলেও তেমন আতঙ্ক বোধ করছি না বলেই মেলায় এসেছি। তিনি জানান, অল্পস্বল্প কেনাকাটা হয়েছে। সময় যেহেতু বাড়ানো হয়েছে, তাই বাকি কেনাকাটা হবে শেষের দিকে। এবার মেলায় যথেষ্ট খোলামেলা জায়গা রাখায় অনেকে সন্তুষ্ট প্রকাশ করেন অনেকে। মেলার ঠিক মাঝখানে বড় টাওয়ারের চারপাশে প্রচুর জায়গা ও বসার ব্যবস্থা থাকায় কেনা-কাটার মাঝখানে বিশ্রাম নিতে দেখা যায় ক্রেতাদের।
×