ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

জনশক্তি আমদানি বিষয়ে চুক্তি হবে

সৌদি প্রতিনিধি দল আগামীকাল আসছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

সৌদি প্রতিনিধি দল আগামীকাল আসছে

ফিরোজ মান্না ॥ বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি আমদানির বিষয়ে আগামীকাল রবিবার তিনদিনের সফরে ঢাকায় আসছেন ১৭ সদস্যের সৌদি প্রতিনিধিদল। শুক্রবার সকালে রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসের রাজনৈতিক শাখার কাউন্সিলর মোশাররফ হোসেন বিষয়টি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে নিশ্চিত করেছেন। সৌদি ১৭ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন সৌদি শ্রম মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের উপমন্ত্রী ড. আহমেদ আল ফাহাইদ। প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনসহ সরকারের শ্রম সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। ওই বৈঠকেই বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি আমদানির বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সই হবে। একই সঙ্গে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কিভাবে জনশক্তি নেয়া যায় তার যথাযথ প্রক্রিয়া তৈরি করা হবে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সৌদি নতুন বাদশা সালমান বিন আব্দুল আজিজ বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের অনুমোদন দেয়ার পরই সৌদি শ্রম মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসছেন আগামী রবিবার। প্রতিনিধিদলে ১৭ সদস্য থাকবেন। গত মাসে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল সৌদি আরব সফর করেন। প্রতিনিধিদল সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকের পর কর্মী নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত হয়। ওই বৈঠকে সৌদি শ্রমমন্ত্রী আবদেল ফকিহ বাংলাদেশ থেকে দক্ষ জনশক্তি নেয়ার কথা জানান। এ ঘোষণার কয়েকদিনের মাথায় সৌদি বাদশা বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের অনুমোদন দেন। এ নিয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে কাজ-কর্ম বেড়ে গেছে। সৌদি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনার জন্য একটি কর্মপত্র তৈরি করা হয়েছে। এ কর্মপত্রে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কিভাবে কর্মী পাঠানো হবে তার একটি খসড়া করা হয়। সৌদি প্রতিনিধিদল ঢাকায় বৈঠকের সময় এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। প্রতিনিধিদল কিছু প্রস্তাব রাখবে। দুই দেশের মধ্যে কর্মী পাঠানোর বিষয় বিস্তারিত আলোচনার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। প্রতিনিধিদল ঢাকা থেকেই ঘোষণা দিয়ে যাবেন কোন কোন ক্ষেত্রে কত সংখ্যক কর্মী তারা নেবে। রিয়াদে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা বলেন, সৌদি সরকার নির্মাণ, গাড়িচালক, গৃহ পরিচারিকাসহ বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে ৫ থেকে ৬ লাখ কর্মী নেবে। পর্যায়ক্রমে দেশ থেকে এ কর্মী সৌদি যাবেন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে খবর রয়েছে, বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে কর্মী নিয়োগে মাত্র ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হবে। প্রতিজন কর্মীর খরচ সৌদি কোম্পানিই বহন করবে। এত কম টাকা খরচে কর্মী নিয়োগ এখন পর্যন্ত কোন দেশে হয়নি। আগে প্রতিজন কর্মীর কাছ থেকে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা নেয়া হতো। ফলে সেখানে গিয়ে একজন কর্মী তার খরচই তুলতে পারতেন না। ওই কর্মী চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে অবৈধভাবে দেশটিতে থেকে যেতো। এতে ওই কর্মী সব সময় পুলিশের ভয় নিয়ে গোপনে কাজ করতেন। এবার কম টাকায় সেখানে গিয়ে চাকরির মেয়াদের মধ্যেই অনেক টাকা উপার্জন করতে পারবেন। আসলে সৌদি শ্রমবাজারটি কখনই বন্ধ ছিলো না। তবে তারা নানা কারণে কর্মী নিয়োগে সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছিলো। এবার বাজারটি সব ধরনের কাজের জন্যই খুলে দিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। সূত্র জানিয়েছে, সরকারের দীর্ঘ প্রচেষ্টার ফলেই সৌদি শ্রমবাজার নতুন করে খুলে যাচ্ছে। নতুন করে শ্রমবাজার খুলে যাওয়ায় দেশের জনশক্তির জন্য বড় ধরনের সুখবর। এত কম টাকায় সৌদি যাওয়ার বিষয়টি আরও এক নতুন দিগন্ত খুলে দিলো। এখন আর সৌদি যেতে ভিটামাটি বিক্রি-বন্ধকের কথা শোনা যাবে না। দুই দেশের সরকারের বোঝাপড়ার ভিত্তিতে সরকারী পর্যায়ে সৌদি আরবে জনশক্তি রফতানি করা হবে। এতে দরিদ্র মানুষের জন্য একটা বড় আশীর্বাদ হয়ে দেখা দেবে। এদিকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, এক সময় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার ছিল সৌদি আরব। ১৯৭৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত এ বাজারে ২৫ লাখ ৫৮ হাজার ৪৬৩ জন বাংলাদেশী নাগরিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। ২০০৮ সালের পর থেকে এ বাজারে কর্মী নিয়োগের পরিমাণ কমে যায়। এর পিছনে অবশ্য নানা কারণ জড়িত ছিল। দেশটিতে বাংলাদেশী কর্মীরা নানা অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়েন। এতে সৌদি কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশী কর্মীদের প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করতে থাকেন। ধীরে ধীরে এ অবস্থা খুবই খারপের দিকে চলে যায়। নানা অপরাধে সেখানে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশীকে সৌদি কর্তৃপক্ষ শিরñেদ করে। অনেককে কারাগারে বন্দি রেখেছে। এরপরও এ বাজারে প্রতিবছর গড়ে ৫০ থেকে ৬০ হাজার কর্মী গিয়েছেন। এ কর্মীগুলো বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের পাঠানো বিভিন্ন কোম্পানির অনুরোধে সৌদি গিয়েছেন। উল্লেখ্য ২০০৮ সালের পর থেকে বাংলাদেশী কর্মীদের ভিসা প্রায় বন্ধই করে দেয় দেশটির কর্তৃপক্ষ। বাজারটি উদ্ধারের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশটি সফর করেন। পরে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রীও দেশটি সফর করে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন। এর বাইরে কূটনৈতিক তৎপরতা তো অব্যাহত ছিলই। এবার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী দেশটি সফর করে ইতিবাচক ফল বয়ে নিয়ে এসেছেন।
×